Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
lata mangeshkar

Lata Mangeshkar Death: বাড়ির সামনের সমুদ্রতট জনশূন্য, ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসও যেন কম! শোকে ডুবেছে মুম্বই

কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় নাকি লতাজির গান বাজছে? মুম্বইয়ে একদম বিপরীত ছবি। রবিবার ভারসোভায় সমুদ্রের কিনারে লোকের ঢল নামে। আজ শশ্মানের স্তব্ধতা!

লতার স্মরণে শান্তনু

লতার স্মরণে শান্তনু

শান্তনু মৈত্র
শান্তনু মৈত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:১৮
Share: Save:

কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় নাকি লতা মঙ্গেশকরের গান বাজছে? খবর পেলাম, কিংবদন্তি শিল্পীকে তাঁর হিন্দি-বাংলা গানেই স্মরণ করছে শিল্পীর অন্যতম প্রিয় শহর। মুম্বইয়ে একদম বিপরীত ছবি। আমার বাড়ি ভারসোভায়, সমুদ্রের কিনারে। রবিবারে সেখানে লোকের ঢল নামে। হইচই, হুল্লোড়ে কান পাতা দায়। আজ শ্মশানের স্তব্ধতা! এক জনও আসেননি। কোনও শব্দ নেই। সমু্দ্রের ঢেউও যেন ধীরে ধীরে বইছে। তাঁদের প্রিয় কন্যা আর নেই। এ শোক যে ভাষায় প্রকাশের নয়। তাই শনিবার রাত থেকেই শোকে বিহ্বল মুম্বই।

লতাজিকে নিয়ে অফুরন্ত বলার মতো অবস্থায় আমিও নেই। দেশ বলছে, সুরসম্রাজ্ঞী চলে গেলেন। আমি বলব, আমমার নিকটাত্মীয় বিয়োগ হল। আমি আর কিন্নরকণ্ঠী দুই প্রজন্মের। ফলে, ওঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়নি। আমার ছবিতে ওঁকে দিয়ে গাওয়াতেও পারিনি। কিন্তু ‘পরিণীতা’ ছবির গানের দায়িত্ব যখন এসেছিল, তখন শ্রেয়া ঘোষালকে আমি লতা দিদির গাওয়া গান বারবার শুনতে বলতাম। কারণ, আমার গানে ওঁর ওই কণ্ঠকেই ফিরে পেতে চেয়েছিলাম। আমি, শ্রেয়া রেকর্ডিংয়ের আগে মেজাজ তৈরি করতাম শিল্পীর একাধিক গান শুনে।


সেই কিংবদন্তি শিল্পীর মুখোমুখি ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছর উদযাপনে। একটি গান তৈরির দায়িত্ব আমার উপরে বর্তেছিল। দেশের সেরা শিল্পীরা সেই গানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার চাওয়া ছিল মুখরা অর্থাৎ গানের শুরু হবে লতা দিদিকে দিয়ে। সেই কারণেই ওঁর কাছে যাওয়া। অনেক কথা হয়েছিল সেই সময়। এবং সব চেয়ে মজার কথা, লতা দিদি কিন্তু বিশুদ্ধ বাংলায় আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন! আপনারাও যেমন কথাটা পড়ে চমকাচ্ছেন, আমি ঠিক তেমনই চমকে গিয়েছিলাম ওঁর মুখে বাংলা ভাষা শুনে। যে কোনও বাঙালিকে হার মানাবে ওঁর উচ্চারণ। কী ঝরঝরে বাংলা বলতে পারতেন! আমার বিস্ময় দেখে হেসে ফেলেছিলেন দিদি। তার পরে বলেছিলেন, ‘‘শান্তনু, ১৫০-র উপরে বাংলা গান গেয়েছি। সেই সময় মুম্বইয়ে রাজত্ব করতেন বাঙালি পরিচালক, সুরকারেরা। শচীন দেব বর্মণ, বাসু চট্টোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়...। আমাকেও তো ওঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হবে! বাংলা না শিখলে পারব কী করে?’’ নতুন ভাষা শেখার সে-ই শুরু। তার উপরে কলকাতায় নিত্য আনাগোনা। সেখানকার সুরকার, শিল্পীদের সঙ্গে ওঠাবসা, কাজ। ফলে, দেখতে দেখতে লতা মঙ্গেশকর দস্তুরমতো বাঙালি। একটু আক্ষেপও করেছিলেন, ইদানীং আর কারও সঙ্গে সে ভাবে বাংলা বলতে পারতেন না। তাই আমায় পেয়ে ভাষাটিকে যেন নতুন করে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন।

আমাদের শিল্পীদের তো তথাকথিত কোনও প্রতিষ্ঠান নেই। গান শেখার স্কুল রয়েছে। কিন্তু গান বাঁধা, তাতে সুর দেওয়া, কোন বাজনা কোন গানের কোথায় বাজবে, সে সব হাতে ধরে কে শেখাবেন? লতা মঙ্গেশকরের গান সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছিল। কত দিন আমার সকাল হয়েছে তাঁর গানে। অনেক না ঘুমনো রাত কেটেছে শিল্পীর গান শুনতে শুনতে। দিদি নেই। তাঁর গান আমাদের নীরব ব্যথার সঙ্গী। দিদিকে আজ তাঁর গানেই বলতে ইচ্ছে করছে, ‘না, জিয়া লাগে না! তেরে বিনা মেরা কহি জিয়া লাগে না...’


লতা দিদি, আপনি শুনতে পাচ্ছেন?

লেখক সঙ্গীত পরিচালক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lata mangeshkar Shantanu Moitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE