Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Entertainment News

ফেক ইন্ডাস্ট্রি, ফেকু লোক! শ্রীলেখার এত রাগ কেন?

এই পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না...। লকডাউনে ডায়েরির পাতায় আঁকিবুকি বিষণ্ণ শ্রীলেখা মিত্র-র।আমি ক্লান্ত! রাস্তার কুকুরগুলোকে ফ্ল্যাটের মধ্যে এনে খাওয়াচ্ছিলাম বলে মানুষের কি রাগ!

শ্রীলেখা মিত্র। ফাইল ছবি।

শ্রীলেখা মিত্র। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ১১:২৯
Share: Save:

সকাল সাড়ে ৭টা

লকডাউনের সময় যেন আরও হাজারটা কাজ বেড়েছে! ঘুম ভেঙে এখন পথ্য খাচ্ছি। গরম জল, জিরের জল, আদা মধু কাঁচা হলুদের জল। এক এক দিন এক এক রকম খাই। ভিটামিন-সি এখন খেতে বলছে। এর পর গরম কফি। কাজের সমস্ত এনার্জি আমি ওখান থেকেই পাই।

সকাল ৮টা

প্রথম কাজ, কুকুরের পটি পরিষ্কার। এখন তো বাড়িতে তিন জন আছে। করণ কুমার মিত্র, আদর মিত্র আর চিন্তামণি মিত্র। ওরা আমার সঙ্গে আছে বলে যে এত ঝামেলায় পড়তে হবে কোনওদিন ভাবিনি। মানুষ তো আর মানুষ নেই। বাইরের কুকুরগুলোকে খাওয়ানো নিয়ে যা হল ফ্ল্যাটের লোকের সঙ্গে! আমি ক্লান্ত! রাস্তার কুকুরগুলোকে ফ্ল্যাটের মধ্যে এনে খাওয়াচ্ছিলাম বলে মানুষের কি রাগ! সত্যি, আমার লিখতে আর কোনও দ্বিধা নেই যে মানুষের মতো নিকৃষ্ট জীব আর এই পৃথিবীতে নেই। কেউ আমায় ‘মানুষের বাচ্চা’ বললে আজ সবচেয়ে খারাপ লাগে। ‘কুকুরের বাচ্চা’ বললে খুশি হব এখন। ঘেন্না করে মানুষ দেখে। এই যে সব সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন লকডাউনের সময় নিজেদের পুরনো ছবি দিচ্ছে, শাড়ি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। নিজেরা ভালমন্দ খাচ্ছে আর দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ছে। কারা এরা? নিজেরা কাকে কী সাহায্য করছে? অশিক্ষিত দেশ তো মৃত্যুর সময় দীপাবলি করে। এই মানুষ জাতিকে নিয়ে আর কোনও প্রত্যাশা নেই আমার। আমার মেয়ে বলে, ‘মা এ সব বোল না।’ আমার বাবা আর ভাই তো বলছিল, ‘তুই কুকুরগুলোর জন্য ফ্ল্যাটের সব লোকের সঙ্গে লড়ছিস? তুই শুধু ঠিক ওরা ভুল?’ পরে ওরা আমার ভিডিয়ো দেখে লিখেছে, ‘তোকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।’ যাই, দেখি মাসি কী করছে? ওদের খাওয়ার সময় হয়ে এল।

বেলা সাড়ে ১১টা

মেডিটেড করলাম মোবাইল বন্ধ করে।

লকডাউনে বই পড়ে সময় কাটছে শ্রীলেখার।

বেলা সাড়ে ১২টা

আমি ফ্ল্যাটের বাইরেই ওদের খাওয়াই। বেচারারা ছোট্ট একটা ছায়ার মধ্যে সব গুটিয়ে বসে থাকে। লকডাউনে বাজারেও টান। এক এক দিন ওদের এক এক রকম খেতে দিই। ঘরে পাতা দই, ভাত, চিনি দিয়ে বা ডাল, চিকেন-ভাত। সব নুন ছাড়া। কখনও পেডিগ্রি। তবে ওদের যখন খেতে দিই, ওরা খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে না। খাবার নিয়ে টানাটানি করলে আমি ওদের মারি, বকি। ওরা কিন্তু এই মানুষগুলোর মতো নয় যে তাতে ক্ষেপে যাবে। বরং লেজ গুটিয়ে কথা শোনে। এ বেলা ও বেলা মিলে এখন ২৩ জন আছে আমার। আমাদের পাড়ার কুণাল আর শুক্লা বাজারের কুকুরগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে। আর অন্য মানুষদের দেখ। বাজারে গিয়ে অন্যকে বঞ্চিত করে নিজে কতটা বেশি খাবার মজুত করবে তা নিয়ে লড়ে যাচ্ছে। আজ বড্ড দেরি হয়ে গেল। চিন্তামণি, আদরদের স্নান করাতে হবে।

আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত বলি অভিনেতা পূরব কোহালি এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যা

দুপুর ২টো

ওদের খাওয়া শেষ। মাসি স্নান করে নেয়, তাই ওদের বাসন আর মাজতে চায় না। ওদের বাসন আমি মাজি। ওতেই আমার শান্তি। আমি রোজ পুজো করি না। কিন্তু মনে করি ক্ষুধার্তদের যদি খাওয়াই সেটাই আমার পুজো। লোকে ভাবে এ সব ন্যাকামি! তাই তারা আমার হাফ প্যান্ট, পোশাক নিয়ে বোকার মতো মন্তব্য করে। আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। যে জীবনে বাস্তব দেখে নিয়েছে, যার কোথাও কোনও ধান্দার লেনদেন নেই সে অকপটে সব কথা বলতে পারে। বেশ করব বলব। এ বার নিজের লাঞ্চ। উফ্! গরমটাও পড়েছে। আমি তো সকালে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছি না। মাসি ভাত মাছ যা করছে তাই খাচ্ছি। এখন তো ওটস বা ওই জাতীয় খাবার পাব না। এ বার বই পড়া আর ওয়েব সিরিজ।

প্রিয় সারমেয়র সঙ্গে শ্রীলেখা।

সন্ধে ৭টা

টানা আধ ঘণ্টা ওয়ার্কআউট করলাম। দুপুরে পারি না। যা গরম, এখনই আমার হিট র‍্যাশ বেরিয়ে গিয়েছে। আবার ওয়েব সিরিজ দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয়, একাই লড়ে যাচ্ছি। পাশে কেউ নেই। আরে, সব কুকুরকে সমান ভাবে হাতে করে খাওয়াই বলে ওদের মধ্যে যে বেশি শক্তিশালী সে কামড়ে-ছিঁড়ে খাবে, অন্যদের খেতে দেবে না, এটা তো হচ্ছে না! মানুষ এটাও বুঝবে না! লকডাউন বন্ধ হলে রাস্তায় ভিড় হলে ওদের লাঠি হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী ভাবে খাওয়াব আমি? জানি না... যাই, ওদের খাওয়ার সময় হল।

আরও পড়ুন: লকডাউনে রাজ কেমন পাল্টে গেল: শুভশ্রী

রাত সাড়ে ৯টা

ওদের খেতে দিয়ে এলাম। একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। এই যে রাস্তায় খাবার দিচ্ছি, একটা খাবারও মাটিতে পড়ে থাকছে না। কাক, ইঁদুর এসে সব খেয়ে যাচ্ছে।

রাত ১০টা

হাল্কা কিছু খেয়ে ঘুমবো। ঘুম কি আসে? মেয়েও চলে গেল। অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। এখানে ওয়াইফাই খারাপ তাই ও বাবার বাড়ি থেকে কাজ করছে, আবার উইকএন্ডে আসছে। ও পেট লাভার। আমি ওকে বলি, ফেসবুকে এ সব দিই, কারণ আমার দেখাদেখি আরও পেট লাভার এগিয়ে আসুক। মানুষ শুধু নিজের কথা না ভেবে পশুদের কোথাও ভাবুক। দেবলীনা, তথাগত ওরা খুব ভাল কাজ করছে এই নিয়ে।

তবে সত্যি কি আর এমন হবে? মানুষ যেখানে কুকুরকে রেপ করছে সেই মানুষের পৃথিবীতে আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। কুকুর, শুয়োর এরা মানুষের চেয়ে ঢের ভাল। আমি রেগে আছি। খারাপ আছি। আমি অবসর নেব এ বার। ইন্ডাস্ট্রির লোকেদেরও আমার খুব ভাল করে চেনা হয়ে গিয়েছে। আমি কোনও লবিতে নেই। আমি তাও কেন এত গলা তুলে কথা বলি? লোকে পছন্দ করে না সেটা। যদি মাথা নোয়াতাম, খারাপ থাকতাম, তা হলে কমপ্লেক্সের লোক থেকে ইন্ডাস্ট্রি সবাই খুশি হত। ফেক ইন্ডাস্ট্রির, ফেকু লোকদের থেকে দূরে থাকতে চাই।

এই পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Sreelekha Mitra Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE