Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ: সিরিয়াস নয় ‘গুগলি’ শুধু বিনোদনের

দু’টি ছেলেমেয়ের কথা বলার সমস্যা নিয়ে এ ছবি। চলতি বাংলায় যাকে আমরা তোতলামো বলি। তাঁদের সম্পর্ক নিয়েও। তাঁদের মধ্যে বিয়ে হয়। কিন্তু সন্তানের একই কথা বলার সমস্যা হতে পারে, তাই সন্তান জন্ম প্রসঙ্গে পিছু হটেন মেয়েটি। সেখান থেকে সম্পর্কে দূরত্ব।

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ১৭:৫৭

পরিচালক- অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়

অভিনয়- সোহম, শ্রাবন্তী

‘গুগলি’ আদ্যন্ত মূলধারার বাণিজ্যিক একটি ছবি। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি বললেই, যে যে ছবি ফুটে ওঠে, ‘গুগলি’ও আদতে তার সঙ্গে মিলে যায়। এ ছবি দেখলেই আপনি বুঝবেন, সান্ধ্য সিরিয়ালের সিনেমারূপ ছাড়া এ আর কিছুই না। অবশ্যই এ ছবি প্রেমের। এ ছবি আরও কিছু বিষয়ের। কিন্তু কোনও বিষয়ই সিরিয়াস ভাবে বলা না। আর সেখানেই এ ছবি কেবলই বিনোদনের। তার বেশি যেন-বা আর কিছুই বলার নেই।

দু’টি ছেলেমেয়ের কথা বলার সমস্যা নিয়ে এ ছবি। চলতি বাংলায় যাকে আমরা তোতলামো বলি। তাঁদের সম্পর্ক নিয়েও। তাঁদের মধ্যে বিয়ে হয়। কিন্তু সন্তানের একই কথা বলার সমস্যা হতে পারে, তাই সন্তান জন্ম প্রসঙ্গে পিছু হটেন মেয়েটি। সেখান থেকে সম্পর্কে দূরত্ব। পরে সন্তানের সিদ্ধান্তে রাজি হওয়ায়, ফের এক হয়ে যাওয়া দু’জনের। মোটামুটি এই চেনা ছকেই ঘুরে বেড়ায় এ ছবি।

প্রথমত, কথা বলার এই সমস্যা তো নতুন কিছু নয়। সে বিষয় নিয়েই যখন ছবি হচ্ছে, তখন কি আরও এম্প্যাথেটিক হওয়া যেত না? সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে বারবার হাসি দেখানোয় কোথাও কষ্ট হয়। যে মানু্ষেরা কথা বলার এ সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা কি খুব স্বেচ্ছায় মজা করবেন বলে এ ভাবে কথা বলেন? টেলি সিরিয়ালে এমন বিষয় নিয়ে ভুল উপস্থাপন করা সম্ভব, কিন্তু সিনেমার মত মাধ্যমে কি আরো যত্নবান হওয়া যেত না?

আরও পড়ুন, রিঙ্গোর হিন্দি ডেবিউ দিয়ে কামব্যাক সাইনির

দ্বিতীয়ত, বাঙালি বাড়ির বিয়ে নিয়ে অনেক সংলাপ শুনতে হল। যেগুলি যথেষ্ট সমস্যার। বিয়ের আধুনিকীকরণ বোঝাতে, বলা হল, ‘‘এখন হিন্দু-মুসলমান বিয়ে হচ্ছে অবিরত তো বাঙাল-ঘটি..’’ যে দেশে সাম্প্রদায়িকতার এমন চেহারা বর্তমানে, সেখানে এমন সংলাপ শুনে মনে হয়, সচেতনতা থাকলে এমন সংলাপ লেখা যেত না! বিয়ে বিষয়টিও এ ছবির মতোই যথেষ্ট অনাধুনিক ভাবে দেখানো হয়েছে। যে সমাজে একসঙ্গে থাকার এত রকম সুযোগ, সেখানে, বিয়ে মানেই সন্তান এ ছকটা এ ছবির আখ্যানের মতোই অত্যন্ত প্রাচীন বলে মনে হল।


‘গুগলি’ ছবির একটি দৃশ্য।

তা ছাড়া, অভিনয় ও সঙ্গীতেও নতুন কিছুই নেই। সোহমের অভিনয় যথেষ্ট অর্থহীন লাগে। সন্তান হারানোর কান্না তাঁর যত চড়া, বিয়ের জন্য আনন্দ ততই অতিরিক্ত মজার। স্বাভাবিক কোনও অনুভূতিই নেই তাঁর। শ্রাবন্তীকে তুলনায় পরিণত লাগে। সন্তান হারানোর পর তাঁর চুপ করে যাওয়া যথেষ্ট ভাল। কিন্তু তোতলানোর সময় দু’জনকেই আরোপিত মনে হয়। একঘেয়ে লাগে। পার্শ্বচরিত্ররা তো সকলেই প্রায় সিরিয়াল থেকে উঠে এসেছেন। তাই তাঁদের উচ্চারণ ও অভিনয় দেখে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, তাঁরা আধুনিক যুগের লোক।

আরও পড়ুন, বিশেষ মানুষ, ভালবাসি… রণবীরকে প্রকাশ্যে বললেন আলিয়া

এ ছবির সময়সীমা আরও ছোট হতে পারত। কেন টেনে টেনে এত দীর্ঘ করা হল, তার কোনও কারণ নেই। প্রায় অবিশ্বাস্য সেটে, প্রাচীন সব সংলাপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত লাগছিল। মনে হচ্ছিল, পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় তো এক সময় ‘মীরাক্কেল’-এ খুবই আধুনিক মানের মজার গল্প বলতেন। তা যেমন সমকালীন ছিল, তেমন ছিল যুগোপযোগী। হঠাৎ কী হল তাঁর? কেনই বা এ সব চটুল অবাস্তব প্রেমের ছবি ভাবলেন তিনি? সত্যিই মেলাতে পারলাম না।

সিনেমাহল থেকে বেরিয়ে একটু ক্লান্তই লাগছিল। মার্চ এপ্রিলের কলকাতা। যথেষ্ট গরম। মনে পড়ছিল, কিছু বছর আগে, ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ নামের ছবিটি দেখেছিলাম। প্রায় কোনও সংলাপ ছিল না সে ছবির। অথচ কি পরিমাণ আধুনিক ছিল ছবিটি। মন চলে যাচ্ছিল, আরও আগে। নির্বাক যুগে। সংলাপহীন ছবিও তো কত আধুনিক সেখানে। কথা বলার সমস্যা বা জড়তা মানেই ব্যপারটা লজ্জার, এই উপস্থাপনা দেখে সংশয় হয়, আমাদের উনিশ শতক ছিল। আমাদের আধুনিকতা ছিল…।

(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

Tollywood Celebrities Movie Review Film Review মুভি রিভিউ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy