পুজোর মরসুমে কার না ছেলেবেলা মনে পড়ে? কার না মনে পড়ে, বোনের সঙ্গে ঝগড়া? মারামারি? তার পর জড়িয়ে ধরা? স্কুলে তো আমরা কম করিনি এমন। কিন্তু বন্ধুও হয়েছি তার পর। হয়তো টিফিন ভাগ করে খেয়েছি। কিন্তু বড়রা কেন তা পারে না? কেন দু’টো দেশ তা পারে না?
‘পটাকা’ ছবিটি হাত রাখে এমন প্রশ্নেই। এমনই দুই বোনের আবাল্য ঝগড়া। চুলোচুলি। মারামারি। কান্না। আর তলায় লুকিয়ে থাকা ভালবাসা। আলো-রোদ। পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজকে নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশালের কাজে বরাবরের মত এ বারেও এসেছে প্রচলিত বলিউডি আখ্যানের বাইরে দাঁড়ানোর প্রয়াস। আর তাতে উপযুক্ত সংগত করেছে রঞ্জন পালিতের ক্যামেরা। এই দুই জুটি এর আগেও বার বার অবাক করেছেন দর্শকদের। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি।
রাজস্থানের এক অনামা গ্রামের গল্প বলে এই ছবি। আসলে বলে সেই গ্রামের এক পরিবারের গল্প। তাতে দুই বোনের ঝগড়া। বাবার শত চেষ্টাতেও মেটে না ঝগড়া। তারা বড় হয়। লেখাপড়া করে। বিয়ে হয়। কিন্তু চুলোচুলির সুযোগ পেলেই একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কত বার গ্রামের লোকেরাও বাধা দেয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। ছবির শেষে কী ভাবে দু’জনের মিল হয়, তা দেখার জন্যই এই ছবি দেখতে যেতে হবে। সেখানেই এই ছবির ইউএসপি।
ছবিটি দেখতে দেখতে বার বারই মনে হচ্ছিল, আরও কি সম্পাদনা করা যেত না এ ছবি? বড্ড বেশি কি দীর্ঘ নয়? হ্যাঁ, ও কথা আপনারও মনে হতে পারে। ছোট ছোট ঘটনার উপর বড় বেশি গুরুত্ব দেয় এ ছবি। কিন্তু যখন মনে হচ্ছিল, পরিচালকের নাম বিশাল ভরদ্বাজ, তখন এর একটা উত্তরও আসছিল মনে।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: স্ক্রিপ্ট নড়বড়ে, তবু ‘সব কুছ বড়িয়া হ্যায়’!
কী সেই উত্তর?
আসলে এ ছবি দুই বোনের ঝগড়ার পাশে সমান গুরুত্বে বলতে চায় গ্রামজীবনের অন্ধকারের গল্প। তাতে এখনও সালিশি সভা বসে। মেয়েরা নেশা করে। কুসংস্কার পুরোদমে। মদ্যপ পুরুষ মেয়ে দেখে টোন কাটে। সন্ধ্যা হলে শিশুরা রাস্তায় বেরতে পারে না। প্রসূতি মহিলারা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান। বড়লোকের বখাটে ছেলে পয়সা দিয়ে নেপাল থেকে বউ কিনে আনে। ভারতের এই নগ্ন চেহারাই আখান্যের আড়াল থেকে উঁকি দেয় এ ছবিতে। যেন-বা সমাজজীবনের মন্তাজ। ইতিহাস ও আখ্যানের মাঝামাঝি এক বিকল্প বয়ান দেখান পরিচালক। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরেও যা আদতে পরাধীন। গ্রাম্য। অন্ধকার।
এই ছবি দুই বোনের গল্প।
আর সেই অন্ধকার সাবলীল ভাবে ধরে নেয় রঞ্জন পালিতের ক্যামেরা। প্রতিটি রং, প্রতিটি চরিত্র কি অনায়াস ভাবে ধরা দেয় তাই। রঞ্জন ক্যামেরা শিল্পকে এতটা এক্সপেরিয়েনশাল করে তোলেন যে, মনেই হয় না সিনেমা দেখছি। এ যেন তথ্যচিত্রের রোজনামচা। কত আপাত অ-দরকারি শট রেখেছেন তিনি। অথচ কি অনায়াস ছন্দে সবটা মানিয়ে গেছে! কোথাও মনে হচ্ছে না, অতিরিক্ত। আবহেও বিশাল এই যথাযথ ছন্দকেই ধরেছেন। রঞ্জনের সারাজীবনের তথ্যচিত্রে কাজের অভিজ্ঞতা বরাবর ফিচারে অন্য ছাপ আনে। এ ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি।
আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: গ্রামে ঘোরে মহিলা ভূত, পৌঁছে দেয় গভীর বার্তা
বিজয় রাজের অভিনয়ের প্রশংসা না করে এ লেখা শেষ করা যাবে না। কি অনবদ্য টাইমিং তার। কত সাধারণ তার অভিনয়। কোনও বাহুল্য নেই। অথচ কি অমোঘ। দুই বোনও বেশ সাবলীল অভিনয়ে। তবে তাদের ঝগড়া এত বেশি যে, মাঝেমধ্যে বাড়াবাড়ি মনে হয়। বোনেরা ঝগড়া করে ঠিকই। কিন্তু এ ভাবে সব সময় ঝগড়া করে না। কোথাও এখানে যেন জীবন থেকে সরে যায় এ ছবি। এ জায়গাটা নিয়ে পরিচালক কি আর একটু ভাবতে পারতেন না?
চরণ সিংহ পথিকের গল্প থেকে বানানো পটাকা আবারও বিশালের এক চমক। যা আপনাকে নিয়ে যাবে স্কুলবেলায়। আট থেকে আশির দেখার মতো এ ছবি পুজোর মরসুমে উপহার দেওয়ার জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ।
(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy