Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ ‘রবিবার’: যে ভালবাসা দরজা খুলে রাখতে বাধ্য করে

ছবির শুরুতেই সায়নী রবিবারটা একটু অন্যভাবে কাটানোর জন্যই হয়তো বা পাড়ার একটি দোকানে ব্রেকফাস্ট করতে যায় আর সেখানেই অসীমাভর সঙ্গে আচমকা মোলাকাত হয় তার

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৪৫
এই প্রথম একসঙ্গে প্রসেনজিৎ-জয়া।

এই প্রথম একসঙ্গে প্রসেনজিৎ-জয়া।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত পঙক্তি ছিল, “যেই দরজা খুললে, আমি জন্তু থেকে মানুষ হলাম।” শেকসপিয়রের ‘অ্যাজ ইউ লাইক ইট’ নাটকের নায়ক অরল্যান্ডোও আতিথেয়তা এবং ভাল ব্যবহারের সামনে দাঁড়িয়ে আর্ডেনের জঙ্গলকেই নিজের ঘর বলে অনুভব করে আর অতনু ঘোষের ‘রবিবার’ ছবিতে সংসার এবং সম্পর্ক হারিয়ে ফেলা দু’জন মানুষ, একটা রবিবারের বারো কিংবা ষোলো ঘণ্টা আবার একসঙ্গে থাকার ভিতর দিয়ে অনুভব করে, ‘হারায় যা তা হারায় শুধু চোখে’, জীবন, সমুদ্রের মতোই যা নেয় তার অনেকটাই ফিরিয়ে দিয়ে যায়, ঢেউয়ে ঢেউয়ে, ফেনায় ফেনায়। যে ঝিনুকগুলো কুড়িয়ে এনে ফেলা দেওয়া হয়েছিল ভিতরে মুক্তো নেই বলে, সেই ঝিনুকগুলো এত সুন্দর যে দ্বিতীয়বার কুড়িয়ে নেওয়ার সময় তাদের ‘মুহূর্ত’ নাম রাখতে ইচ্ছে করে।

অসীমাভ (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) এবং সায়নী (জয়া আহসান)-এর ভিতর একটা সম্পর্ক যা দাম্পত্যের চেহারা নিয়ে বেঁচে ছিল ভেঙে পড়ে, ব্যক্তিত্বের সংঘাতে কিংবা দু’জনের জীবনভাবনা দুই বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান করার কারণে। এই সিনেমা এমনই, যার গল্প পাঁচ লাইনে বলে দেওয়া যায় না। কেকের গন্ধ যেমন বড়দিনের মেজাজ উস্কে দেয়, এই ছবির গল্পরেখা তেমনই বারবার এক অগম্য বিন্দুর দিকে নির্দেশ করে, সমান্তরাল দুই যাত্রাপথ যেখানে মিলে গেলেও যেতে পারে।

ছবির শুরুতেই সায়নী রবিবারটা একটু অন্যভাবে কাটানোর জন্যই হয়তো বা পাড়ার একটি দোকানে ব্রেকফাস্ট করতে যায় আর সেখানেই অসীমাভর সঙ্গে আচমকা মোলাকাত হয় তার, যে ভাবে পৃথিবীর সঙ্গে উল্কা কিংবা সমুদ্রের সঙ্গে দ্বীপপুঞ্জের দেখা হয়ে যায়। খানিক ক্ষণ পর থেকেই মনে হতে থাকে যে, এই দেখা হওয়াটা অসীমাভর ইচ্ছাতেই হয়েছে হয়তো। সে একটা পরিকল্পনাকে ‘আকস্মিক’-এর চেহারা দিতে চাইছিল, সায়নীর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটাবে বলে। সেই সময়টার পরের দিগন্তটা হয়তো একদম অন্ধকার, অসীমাভ তাই মরিয়া হয়ে আটকে রাখতে চায় সায়নীকে, যতটা সম্ভব।

আরও পড়ুন-দাদুর মৃত্যুর পরদিনই পার্লারে গিয়ে কটাক্ষের শিকার মেয়ে নাইসা, এ বার মুখ খুললেন অজয়

ছবিতে আশ্চর্য সংযম বজায় রেখেছেন জয়া

‘রবিবার’ ছবির কয়েকটি দৃশ্যও যেন সময়কে একটু বেশি আটকে রাখতে চেয়েছে। ছবির কয়েকটি জায়গা আর একটু কম দীর্ঘায়িত হলে, ভাল লাগত। ছবির দু’টি সাবপ্লটও আর একটু আঁটোসাঁটো হলে ভাল হত। তারই মধ্যে সুপারি লটকাই নামের সুপারি কিলারের ভূমিকায় মিঠুন দেবনাথ নজর কাড়েন। বাঁশি বাজানো বাচ্চাটির ভূমিকায় শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ও ভাল লাগে, যদিও তার নাম কিংবা পরিণতি কিছুই জানতে পারেন না দর্শক।

আসলে এই ছবিতে যে কোনও পরিণতির থেকেই দূরে থাকতে চেয়েছেন অতনু ঘোষ। জীবন তো একটা জার্নি, সেখানে ‘পরিণতি’ তত গুরুত্ব পাবেই বা কেন, যতটা সে পায়? তাই সায়নী নিজের ‘জালিয়াতের অন্তর্ভুবন’ সম্বন্ধে বইটিতে একটি অধ্যায় যোগ করতে চায়, যেখানে অসীমাভ নিজের সমস্ত দু’নম্বরি কাজ সম্বন্ধে বলবে নিজের মুখেই আর উল্টোদিকে অসীমাভর একটি জাল সই তাকে বিষম বিপদ থেকে উদ্ধার করে আনবে।

তা হলে কি নিজেই নিজের সই জাল করে বেঁচে আছি আমরা? অপরাধকে তত ক্ষণই অপরাধ ভাবছি, যত ক্ষণ তা আমার কোনও কাজে না লাগে? অন্যদের ক্ষেত্রে যা পাপ, আমাদের নিজের বেলায় তা কি এক্সপেরিমেন্ট মাত্র? না হলে সারা ছবি জুড়ে যে সায়নী বহুদিন পর মুখোমুখি হওয়া অসীমাভর থেকে ছিটকে চলে যেতে চাইছে, সে কেন অসীমাভকে নিয়ে আসে নিজের ফ্ল্যাটে? যে অনাগত সন্তানকে তারা পৃথিবীতে আসতে দেয়নি যৌথ সিদ্ধান্তে, তার নামই কি ভালবাসা, যে ১৫ বছরের ব্যবধান পেরিয়ে আবারও ফিরে আসতে চায়, দু’জনের মাঝখানে?

জয়া আহসান প্রসেনজিতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন গোটা ছবি জুড়ে

সারা ছবিতে কোনও ফ্ল্যাশব্যাক রাখেননি পরিচালক। আর সেই সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমানের ভিতরে থাকা অতীত চলকে উঠেছে কয়েক পা অন্তর। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ‘অসীমাভ’কে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন, কিন্তু তাঁর অভিনয়ে লোকটিকে একবারের জন্যেও জালিয়াত বা অপরাধী বলে মনে হয়নি। কিংবা হয়তো পরিচালক চাইছিলেন একজন অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগা মানুষকে সামনে রেখেই সময়ের জালিয়াতিকে স্পষ্ট করতে। জয়া আহসান প্রসেনজিতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করেছেন গোটা ছবি জুড়ে। আবেগে থরোথরো হয়ে কেঁপে যাওয়া যেত যে সব জায়গায়, সেখানেও আশ্চর্য সংযম বজায় রেখেছেন।

দেবজ্যোতি মিশ্রর সঙ্গীত এবং আপ্পু প্রভাকরের ক্যামেরাতেও সেই সংযমের পরিচয় পায়। ‘রবিবার’ ছবিটা হয়তো বছরের একদম শেষে মুক্তি পেয়ে বাঙালি দর্শককে জানিয়ে যায় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও শুরু করা যায়, জীবন আর যন্ত্রণা দুটোই।

আরও পড়ুন- ড্রোন উড়িয়ে শুটিং করায় বিপাকে সৃজিত, হল জরিমানা

Robibar রবিবার movie Review মুভি রিভিউ Jaya Ahsan Prosenjit Chatterjee জয়া আহসান প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy