Advertisement
E-Paper

মুভি রিভিউ ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইলস’: এ ছবি প্রশ্ন করে তথাকথিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে

বিবেক অগ্নিহোত্রীর সাম্প্রতিক ছবি ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইলস’-এ নাসিরুদ্দিন শাহের এই উচ্চারণ সমকালকেই ফিরে দেখা। কোন সমকাল?

দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৩৭

পরিচালক: বিবেক অগ্নিহোত্রী

অভিনয়: মিঠুন চক্রবর্তী, নাসিরুদ্দিন শাহ, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, বিনয় পাঠক, শ্বেতা বসু প্রসাদ, রাজেশ শর্মা

‘সত্য নিয়ে কেউ চিন্তিত না। কেচ্ছা নিয়ে চিন্তিত। কারণ, কেচ্ছা জমতে জমতে সত্য হয়।’

বিবেক অগ্নিহোত্রীর সাম্প্রতিক ছবি ‘দ্য তাসকেন্ট ফাইলস’-এ নাসিরুদ্দিন শাহের এই উচ্চারণ সমকালকেই ফিরে দেখা। কোন সমকাল? যেখানে রাজনীতির নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, যেখানে ভোটের নামে খুন করা হয় গ্রামে গ্রামে, যেখানে সত্যি কী? এই প্রশ্নে কিনে নেওয়া যায় সংবাদ, শিল্প, মিডিয়া, এমনকি যৌবনকেও। সেখানে, সত্য ম্যানুফ্যাকচার নিয়েই প্রশ্ন করে এ ছবি। প্রশ্ন করে, তথাকথিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে। অমোঘ ভাবে উচ্চারিত হয়, রাষ্ট্র ভাল না রাষ্ট্রদ্রোহিতা, এই দ্বন্দ্ব।

ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকতা নিয়ে এ ছবির গল্প নতুন না। আগেও সত্যের খোঁজে সাংবাদিকের বিপন্ন জীবনের গল্প দেখানো হয়েছে অনেকবার চলচ্চিত্রে। এ ছবির গল্প বলার ধরন ভাল লাগে। ভাল লাগেসম্পাদনার টানটান ভাবনাও। তাই আখ্যানের নতুনত্ব না থাকলেওগল্প বলার ধরন ও সম্পাদনা অনেকটা মনোসংযোগ কেড়ে নেয়।

লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মারা যাওয়ার রহস্য নিয়ে এ ছবি। এ দেশের অনেক সমাধান নাহওয়া রহস্যের মতোই শাস্ত্রীর মারা যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দেশের নির্বাচনের পর্বে আর একবার সে প্রশ্নে আলো ফেলেছেন বিবেক। রাষ্ট্র একাধিক ‘রহস্য’ তৈরি করেছে বারবার নিজের স্বার্থে। লালবাহাদুরের মতো নেতাদের তাই রহস্যে মিলিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন নেতাজিকেও হারাতে হয়েছে গুমনামি বাবার মতো করে। কিন্তু সত্য তাতে চাপা থাকেনি।

আরও পড়ুন, ‘ও জানতেই পারল না, আমার ওকে মনে আছে…’

লালবাহাদুরের জীবনকে আর একবার ফিরে দেখানোর অছিলায় এ ছবিতে আলো পড়ে এ সব সত্যে। ছেলেবেলায় শ্রেণি বিভাজনের প্রতিবাদে পদবী বদলান তিনি। এমনই ছোট ছোট তার জীবনের তথ্য বের করেন এক তরুণী সাংবাদিক। সত্যের পথে তাকে ছেড়ে যায় সমাজ, আত্মীয় সবাই। জীবন বিপন্ন করেও সে পথে অবিচল থাকেন তিনি। তাঁকে নানা ভাবে কলঙ্কিত করা হয়। কখনও মুখে কালি লেপে দেওয়া হয় তো কখনও নজরদারি বাড়ানো হয়। কাজ হারাতে হয় তাকে। এমনকি, দেশদ্রোহিতার আখ্যাও পড়ে। শেষে তাঁর জয় হয় অবধারিত।


ছবির দৃশ্যে মিঠুন।

এই আখ্যান নতুন কিছু না। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই আখ্যানের গুরুত্ব বেড়ে যায়। সেই সঙ্গেযদি ভাবা যায়, এই ডিজিটাল লেট ক্যাপিটাল সময়ে, যখন দেশ শব্দটাই আটকে ফেসবুকে, তখন দেশের জন্য এমন মহাত্মাদের নিবেদনও সেই সত্য খুন করা দেখে সততা জাগে। মনে হয়, দেশ আসলে থাকে মনে। বাকি সমস্ত ধারণা মিথ্যে। প্রেম আর দেশ আসলে আত্মার সহোদর।

মিঠুন চক্রবর্তীকে অনেকদিন পর দেখা গেল এ ছবিতে। তুলনায় কিছুটা ফিকে নাসিরুদ্দিন শাহ। তাকে কি আরও ব্যবহার করা যেত না? তাঁর প্রবীণ নেতার ভূমিকায় অভিনয় দাগ কাটে। ভাল লাগে, পল্লবী যোশী আর মন্দিরা বেদীদেরও। সত্য খোঁজার রাস্তায় একে একে তাদের মুখোশ খুলে যায়। কেউ এনজিও-র জন্য আঁতাত করেন মন্ত্রীর সঙ্গে। কেউ বই লেখার রয়ালটি-র জন্য। শুধু যৌবনের কাছেই প্রশ্ন থাকে কিছু। সত্যের প্রশ্ন। ইতিহাসের প্রশ্ন।

আরও পড়ুন, ‘আমাকে যতটা সেক্সি দেখতে চান, এ বার ততটাই পাবেন’

বিবেক অগ্নিহোত্রী এর আগে হেট স্টোরি-র মতো ছবি বানিয়েছেন। মাধ্যম হিসেবে তা খুব সেরা না হলেও, সমাজের কালো দিক নিয়েই প্রশ্ন করতে চেয়েছেন তিনি বরাবর। তা যদিও ভাল প্রবণতা ঠিকই, কিন্তুআরও কি আখ্যান বলার ধরণ নিয়েও ভাবা যেত না? আজ আমরা স্মার্টফোনে ডিজিটাল যে সব ভিডিও আর্ট দেখছি, তা-ও তো সমাজের নেতিবাচনকে কত আধুনিক ভাবে দেখাচ্ছে। সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব তো এখন হরেক রকম। প্রচলিত রীতিতে দেখালে একঘেয়ে লাগে। কারণ সিনেমা মাধ্যমের বয়স হয়েছে ১০০ বছর। এবং ইতিহাস বারবার আধুনিকতার হাত ধরতেই চায়।

তবু বলব, মরা ছবির বাজারে, এ ছবি দেখুন। পয়লা বৈশাখ সামনে। হয়তো জীবনের অন্যতর সত্য খুঁজে পেলেন!

(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

Movie Review Film Review মুভি রিভিউ Bollywood Hindi Film Celebrities
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy