Advertisement
E-Paper

ছবির ষড়-উপচার, কাকে ছেড়ে কাকে রাখেন দর্শক

এলাহি বুফের সামনে পেটুকের যা দশা হয়! শুক্তো-মোচা থেকে ভেটকি পাতুরি-মুরগি ভাজা কাউকে ছাড়া যাবে না। অথচ এর পরে সর্ষে ইলিশ, চিংড়ি মালাইকারি থেকে কষা মাংস, রাবড়ি অপেক্ষমান।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩০
ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা ছবির দৃশ্য।

ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা ছবির দৃশ্য।

এলাহি বুফের সামনে পেটুকের যা দশা হয়! শুক্তো-মোচা থেকে ভেটকি পাতুরি-মুরগি ভাজা কাউকে ছাড়া যাবে না। অথচ এর পরে সর্ষে ইলিশ, চিংড়ি মালাইকারি থেকে কষা মাংস, রাবড়ি অপেক্ষমান।

খানিকটা একই দশা এ রাজ্যের সিনেমা হল-মাল্টিপ্লেক্স কর্তাদের। ষষ্ঠীর মধ্যে একসঙ্গে ছ’খানা বাংলা ছবির মুক্তি। অ্যাকশন থ্রিলার, কমেডি, ধ্রুপদী গোয়েন্দা-কাহিনি বা পারিবারিক বাণিজ্যিক ছবি— বাকি নেই কেউ। এ ছাড়া বলিউডের ‘মিরজিয়া’ রয়েছে। গত সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ধোনি’র ঝোড়ো ব্যাটিংকেও মাথায় রাখতে হচ্ছে।

অথচ রাজ্যে সাকুল্যে ২০-২৫টি মাল্টিপ্লেক্সসুদ্ধ টেনেটুনে ৩৫০টি হল। এই ছোট পরিসরে হরেকরকমবা ফিল্মি মেনুর সৌজন্যে মাঝরাত্তিরেও শো চলবে কোথাও কোথাও। দক্ষিণ কলকাতার কিছু হলে সুপারস্টার জিতের ছবি ‘অভিমান’-এর স্পেশাল শো। রাত পৌনে ১২টায়। কলকাতার সিঙ্গল স্ক্রিনে এর আগে কখনও অত রাতে সিনেমা চলেনি। ফিল্ম পরিবেশক অরিজিৎ দত্তের কথায়, ‘‘মুম্বইয়ে কিন্তু রাত ১১টার পরের শোয়েই সব থেকে ভিড় হয়। দেখাই যাক, কলকাতা কতটা সাড়া দেয়।’’ পুজোর দিনের এই ফর্মুলা সফল হলে, এ শহরের সিনেমা দেখার রুটিনে হয়তো একটা বদল আসবে।

বছর দুয়েক আগের পুজোয় জিতের ‘বচ্চন’ বক্স অফিসে ভালই দৌড়েছিল। এ বার রিলায়্যান্সের সঙ্গে নায়কের নিজের সংস্থার যৌথ প্রযোজনা ‘অভিমান’ পুজোর বাজারে অন্যতম বড় লগ্নি। রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় জিৎ, শুভশ্রী, সায়ন্তিকা! গ্রামবাংলার সঙ্গে শহর, মাল্টিপ্লেক্সেও তারা জমি খুঁজছে। ‘অভিমান’-এর সঙ্গে টক্কর জমেছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ‘গ্যাংস্টার’-এর। সেখানে তুরস্কের পটভূমিতে বিরসা দাশগুপ্তের পরিচালনায় যশ-মিমি জুটি। সঙ্গে ব্রাত্য বসু, শান্তিলাল মুখোপাধ্যয় প্রমুখ। শ’দেড়েক হলে ‘গ্যাংস্টার’-এর মুক্তি। তার ঠিক পিছনেই ‘অভিমান’। সিঙ্গল স্ক্রিনে গ্রামবাংলার দর্শকদের জন্য এস কে মুভিজ-এর ‘প্রেম কী বুঝিনি’কেও হল পেতে লড়তে হচ্ছে। ওম-শুভশ্রী জুটির ছবি মোটামুটি ৯০টি হলে মুক্তি পাচ্ছে।

অভিমান

আজ, বৃহস্পতিবার পঞ্চমীতে ‘অভিমান’-এর মুক্তি। অন্য ছবিগুলো ষষ্ঠীতে রিলিজ করবে। তার আগে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত হল ও শোয়ের টাইমিং নিয়ে দর কষাকষি চলেছে। বৈদ্যবাটির নেতাজি সুভাষ সদন ও জলপাইগুড়ি আর্ট গ্যালারি সিনেপ্লেক্সের আধিকারিক দেবাশিস সেনগুপ্ত আবদার সামলাতে নাজেহাল। গ্যাংস্টার আর অভিমানকে সমান শো বেঁটে দিলেও টাইমিং নিয়ে দু’পক্ষই খুঁতখুঁতে। ‘‘একসঙ্গে অনেক ছবি রিলিজ করলে, সবাইকেই একটু আপস করতে হয়! তবে আমরা নিশ্চিন্ত,’’ বলছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি। তবে গত বারের মতো এ বারও পুজোর বাজারের বেশির ভাগটা দখল নিতে দু’টো ছবি রিলিজ করিয়েছেন তাঁরা। গত বার ‘শুধু তোমারই জন্য’ ও ‘রাজকাহিনি’। এ বার ‘গ্যাংস্টার’ ও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জুলফিকার’। দু’টোর স্যাটেলাইট স্বত্ত্ব আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ায় বাড়তি আত্মবিশ্বাস তাঁদের পকেটে। ‘জুলফিকার’-এর নিশানা প্রধানত কলকাতা ও শহরতলি। ৮৫টা হলে রিলিজ করছে। তা ছাড়া মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদ, দিল্লিও রয়েছে। ছবিতে প্রসেনজিৎ, দেব, কৌশিক সেন, পরমব্রত, যিশু, অঙ্কুশদের চাঁদের হাট। সৃজিতের কথায়, ‘‘পুজোর সময় বলে শো একটু কম পাচ্ছি! কিন্তু এখন পাঁচগুণ বেশি লোক সিনেমা দেখে! সেটাও প্রাপ্তি!’’

প্রযোজক কৌস্তুভ রায় এ সময়ে ছুটিতে আসা প্রবাসী বাঙালিদের কাছে পৌঁছনোর আশা রাখছেন। বলছেন, ‘‘ব্যোমকেশের ছবি সব সময়ই বাঙালি দেখে। কিন্তু পুজোয় এই প্রবাসী দর্শকদেরও পাব।’’ গত বারের মতো এ বারও অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় ব্যোমকেশকে নিয়ে আসছেন কৌস্তুভরা। ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’য় সত্যসন্ধান করবেন যিশু সেনগুপ্ত, ‘অজিত’ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও ‘সত্যবতী’ উষসী চক্রবর্তী। পুজোর হুল্লোড়ের মেজাজে সপরিবার দেখার জন্য বাঙালির পছন্দের তালিকায় কমেডি়র গুরুত্বও বরাবরের। গত পুজোয় শ্যামসুন্দর দে-র প্রযোজনায় ‘কাটমুণ্ডু’ তা প্রমাণ করেছিল। এ বারের প্রযোজনা ‘চকোলেট’-এ পরিচালক হিসেবে হাতেখড়ি হচ্ছে অভিনেতা সুজন মুখোপাধ্যায়ের। রুদ্রনীল, পরমব্রত, পায়েল, কাঞ্চন, কনীনিকাদের নিয়ে মজাদার ছবিটি পুজোয় টলিউডের টেক্কা।

জুলফিকার

এত ছবির ভিড়ে ব্যোমকেশ-কাহিনি বা ‘চকোলেট’-এর ভাগ্যে হল অবশ্য খুব বেশি জুটছে না। দু’টোই মেরেকেটে ৫০টি হলে মু্ক্তি পাচ্ছে। তবে ইন্ডাস্ট্রির বিশেষজ্ঞদের মতে, দু’টোই কম বাজেটের ছবি হওয়ায় বক্স-অফিসে ভালই সম্ভাবনা রয়েছে। চকোলেট-এর স্যাটেলাইট স্বত্ব বিক্রিও প্রায় পাকা। গত বছরও নানা ঘরানার গোটা পাঁচেক ছবি রিলিজ করেছিল টালিগঞ্জে। আবার কারও কারও মত, বেশি ছবির ভিড়ে দর্শক ভাগাভাগি হওয়াটা মোটেও ভাল নয়। পুজোয় বড় ব্যানারের প্রযোজকের ছবিই ছড়ি ঘোরায়। বাকিরা কল্কে পায় না। এ বার ছ’টি বাংলা ছবি ছাড়াও পঞ্জাবি উপকথা অবলম্বনে অনিল কপূরপুত্র হর্ষবর্ধনের ‘মিরজিয়া’ বা ধোনির বায়োপিকও ৬০টি করে হলে থাকছে।

তবে পুজোর চ্যালেঞ্জারদের অন্যতম জিতের মতে, ‘‘পুজো, ইদ বা বড়দিনের ছুটিতে এত লোকের বিনোদনের চাহিদা মেটানো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব। একসঙ্গে বেশি ছবি রিলিজ অবশ্যই ভাল লক্ষণ।’’ এ বার এই ফিল্মি বুফেয় কোনটা জাঁদরেল মেন কোর্স— তা মালুম হবে আর কয়েক দিনেই।

zulfiqar Abhiman Jissu sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy