Advertisement
০৭ মে ২০২৪
drama

Drama: দিনলিপির রাজনীতিকরণ আর কালপুরুষের অভিনব উপস্থাপনায় মুখরিত ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চ

জলপাইগুড়ি ইমনের তরফে শৈবাল বসুর সাম্প্রতিক প্রযোজনা "শুনছ কালপুরুষ" এই ব্যক্তিগত পরিসরকেই সংযুক্ত করেছে বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এক নিবিড় "ড্রামাটিক মোনোলগের" মাধ্যমে। ২৫শে মার্চ কলকাতার উষা গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চে দেখা গেল এই উপস্থাপনা।

নাটকের একটি দৃশ্য।

নাটকের একটি দৃশ্য।

প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ১৫:১৩
Share: Save:

মানুষে মানুষে বিচিত্র কারণে ভেদাভেদ ও বৈষম্যের জ্বালায় দীর্ণ পৃথিবী। লিঙ্গ, ধর্মবিশ্বাস বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সামাজিক বৈষম্যের বিকট চেহারা কিন্তু তৈরি হয় আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবনের ছোট ছোট অন্তরঙ্গ কাহিনিগুলো জুড়েই। যে কোনও সময়ে আমাদের নিতান্ত আটপৌরে, আপাত গুরুত্বহীন ক্ষুদ্র আখ্যানগুলো থেকেই পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে ক্ষমতা ও ক্ষমতায়নের বিরাট প্রকল্পের সম্যক বোধে।

জলপাইগুড়ি ইমনের তরফে শৈবাল বসুর সাম্প্রতিক প্রযোজনা "শুনছ কালপুরুষ" এই ব্যক্তিগত পরিসরকেই সোজাসুজি সংযুক্ত করেছে বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে এক নিবিড় "ড্রামাটিক মোনোলগের" মাধ্যমে। ২৫শে মার্চ কলকাতার উষা গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চে দেখা গেল এই উপস্থাপনা।

এক ঘণ্টার নাটকের চিত্রনাট্য ও একক অভিনয় ইংরেজির শিক্ষক শৈবাল বসুর। আলোর দায়িত্বে কিংশুক দাস, সংগীতে কৌশিক সোম। শৈবালের একক অভিনয়ের নিশ্চিন্ত পদচারণা ছিল তাঁর ব্যক্তিজীবনের অন্তরঙ্গ ক্যানভাসের বিশাল পরিসর জুড়ে। সেখানে কোথাও তিনি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর যুবতী বিধবা সেজদিদার অবদমিত বাসনার অব্যক্ত হাহাকার। লাউয়ের কড়াইতে ঠিক সময়ে কালোজিরে ছড়িয়ে দিয়ে তিনি ইলিশ মাছের গন্ধ সৃষ্টির আকুল চেষ্টা করেন। তাঁর বালিশে মুখ গোঁজা কান্নার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা চলে যাই সেখানে লিঙ্গভিত্তিক ভিন্নতার সমস্ত সম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে চোখে কাজল পরার অপরাধে ব্যক্তি শৈবালকে শুনতে হচ্ছে কটূক্তি। কখনো বা পিতৃতন্ত্রের বিরোধিতা করার অপরাধে গালিগালাজ ধেয়ে আসছে তাঁর মাকে লক্ষ্য করে। সেখান থেকে পটভূমি পাল্টে চোখের সামনে উঠে আসে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে আশি ও নব্বইয়ের দশকের রাজনৈতিক হানাহানির ভয়াবহ রূপ। সম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া হোস্টেলের ঘরে শৈবালের দুই আলাদা সম্প্রদায়ের বন্ধুও মুহূর্তের প্ররোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অন্যের উপরে।

জীবনের সব অমানবিকতার বিপরীত বিন্দুতে শৈবাল রেখেছেন তাঁর জীবনের অমোঘ বোধি। শান্তিনিকেতন আশ্রমের উপাসনা মন্দিরের প্রেক্ষাপট। সেই মন্দির যা শুধু ব্রাহ্মদের মন্দির নয়। যা সকলের। বাজতে থাকে গান: ‘এই তো তোমার আলোকধেনু’।আসে জয়রামবাটী। সেই জয়রামবাটী যেখানে এক দীন দরিদ্র নিরক্ষর বিধবা নারী বলেছিলেন, "আমি শরতেরও মা, আমি আমজাদেরও মা"। নাটিকার শেষ দৃশ্যে এক অনন্য "বিপুল ভবিষ্যতের" রূপকল্প।

এই নাটকে দৃশ্য পাল্টায় মুহুর্মুহু। সেই দৃশ্যাবলী জীবন্ত হয়ে ওঠে নানা রঙের উত্তরীয়/ওড়নার ব্যবহারে। স্টেজের মধ্যভাগে সাঙ্গীতিক হারমোনির প্রতিভূ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একটি তানপুরা। আর এ সবের মধ্যেই দর্শকের সঙ্গে নিরন্তর একক সংলাপ চালিয়ে যান শৈবাল।ছন্দে মেতে ওঠেন। সংলাপকে সংগত করে সংগীত। শৈবালের স্বকণ্ঠ ছাড়াও শোনা যায় মোহন সিং , বিম্বাবতী দেবী ,সীমা স্যান্যাল ,প্রকৃতি দত্ত প্রমুখের কন্ঠ।

অভিনব বলেই হয়তো প্রত্যাশা থেকে যায় আরও। ঘটনা বিন্যাসে আরও নিপুণতার প্রত্যাশা, কোথাও কোথাও প্লটে আরও গতিশীলতার প্রত্যাশা, অভিনয়ে নাচের অংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা। তবে একটা কথা বোধহয় বলাই যায় - এই অভিনব ড্রামাটিক মোনোলগ বাংলার মঞ্চে এক যথেষ্ট সম্ভাবনাময় আবির্ভাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drama Society Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE