পুজো মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, শিউলি ফুল, কাশ। এই ক’টা দিনকে ঘিরে বাঙালির কত ধরনের পরিকল্পনা। তবে পুজো মানে সব থেকে বেশি যেটা, তা হল শিকড়ের টান। কাজের তাগিদে কলকাতা ছেড়ে নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগ এখন প্রবাসে। তবে যে যেখানেই থাকুক, পুজোর সময় ঘরে ফেরা চাই। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এই পুজোর সময়ই হন শহরছাড়া। প্রবাসে থাকেন, তবু মন পড়ে থাকে শহরে। যদিও তিনি মাটির কাছাকাছি থাকেন সর্বদা। নিজের শিকড়কে নিয়ে পৌঁছে যান দর্শকের কাছে। তিনি পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোয় কলকাতায় না থাকলেও সাজতে ভালবাসেন। আনন্দবাজার ডট কম-এর জন্য তিন প্রদেশের শাড়ির সাজে গায়িকা।
এমনিতে তিনি মফস্বলের মেয়ে। যদিও গত ৯ বছর ধরে কলকাতায় থাকছেন তিনি। এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছেন, তবু কলকাতার পুজো দেখা হয়ে ওঠেনি পৌষালীর। যদিও পুজো বলতেই তাঁর মনে পড়ে ডাকের সাজের দেবী দুর্গা, পরনে ঢাকাই শাড়ি ও হলুদ মুখ। গায়িকা নিজেও ছোটবেলা থেকেই সাজগোজ করতে ভালবাসেন। তবে সময় যত এগিয়েছে, তাঁর সঙ্গে যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে শাড়ি। একই শাড়ি পরতে পরতে বিরক্তি আসে। তাই হরেক রকমের পোশাক পরে দেখতে চান তিনি। কিন্তু পরলেই নাকি কপালে জুটছে গালমন্দ। পৌষালীর কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যে ‘ধ্যাত তেরিকা’ বলে উঠি! তার পর আয়নায় যখন শাড়িটা পরে নিজেকে দেখি, তখন মনে হয়— আমি শাড়ির জন্য, শাড়ি আমার জন্য। একে অপরের পরিপূরক। তখন নিজেকেই বলি ‘লেটস্ গো পৌষালী’।’’ গায়িকার প্রথম পছন্দ মধুবনী কাজ করা তসরের শাড়ি। পরতে হালকা, যে কোনও সময় পরা যায়। পাশপাশি এই শাড়ির রং বিশেষ পছন্দ।
তসরের শাড়িতে মধুবনীর নকশা, সেজে উঠলেন পৌষালী।
এমনিতেই তিনি আত্মবিশ্বাসী নিজেকে নিয়ে। সারা ক্ষণ হইহুল্লোড় করতেই ভালবাসেন। মুখ বুজে কাজ নয়। রূপটান-সাজসজ্জার মাঝে খাওয়াদাওয়া, সঙ্গে চলছে আড্ডা। এর ফাঁকে গায়িকা জানালেন নিউ ইর্য়কের টাইম্স স্কোয়্যারে রাত আড়াইটের সময় শাড়ি পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। লোকে তাকিয়ে দেখেছে। শুধু তা-ই নয়, প্রশংসাও করেছে। সঙ্গে ছিলেন গায়িকার স্বামী। তাঁকে পেরিয়ে ছেলেরা এসে ‘কমপ্লিমেন্ট’ দিয়েছেন। পৌষালীর কথায়, ‘‘বিদেশে গিয়েও আমি আটপৌরে শাড়ি পরি। লোকে জিজ্ঞেস করে, এরকম করে কী ভাবে শাড়ি পরি? ওখানকার মহিলারা শাড়ি নিয়ে আসে, পরিয়ে দিই। আমি গর্বের সঙ্গে শাড়ি পরি। যখন রাত আড়াইটের সময় টাইম্স স্কোয়্যারে শাড়ি পরে হাঁটছিলাম, কেউ দেখে হাসেনি, কটাক্ষ করেনি। বরং লোকে এসে জিজ্ঞেস করেছে, তুমি কি বাঙালি? এটাই বাংলার সৌন্দর্য।’’ গায়িকা জানান, তিনি কারও জন্য নিজেকে বদলাবেন না, সেখানেই তাঁর সাফল্য। তাই পুজোর সাজে তাঁর দ্বিতীয় পছন্দ গুজরাতের পটোলা শাড়ি। যার পাড়ে রয়েছে কলমকারীর নকশা। এই শাড়িতে রয়েছে দুই রাজ্যের লোকসংস্কৃতির মিশ্রণ। সেই কারণেই গায়িকার এই বেগুনি পটোলা শাড়ি বিশেষ পছন্দের।
পটোলা শাড়িতে কলমকারীর ছোঁয়া, আত্মবিশ্বাসী পৌষালী।
পুজোয় নিজের জন্য কিছুই কেনেন না। তবু এই পুজোতেই নাকি আলমারিতে রয়েছে ১০০টা শাড়ি। যদিও সর্ব ক্ষণ শাড়ি পরে থাকতে ভাল লাগে না পৌষালীর। গায়িকার কথায়, ‘‘আমারও আসলে ইচ্ছে করে একটু জিন্স-টপ পরি, একটু পাশ্চাত্যের ঢঙে পোশাক পরি। কিন্তু যখন ভাবি, আমি যাঁদের জন্য পৌষালী হয়েছি, তাঁদের চাহিদাকে মান্যতা দিই। মাঝেমধ্যে মন খারাপ হয়, যখন অন্য পোশাকে ছবি দিলেই গুচ্ছের খারাপ কথা শুনি। তা-ও অভিযোগ করি না। কারণ, আমার দর্শকের কাছে আমার একটা ভাবমূর্তি আছে, পৌষালী সারাক্ষণ শাড়ি পরেই থাকবে। যে কোনও দেশ, যে কোনও রাজ্য ও প্রদেশকে মানুষ তার লোকশিল্প বা লোকসংস্কৃতি দ্বারাই চেনে। আমার কতর্ব্য আমার দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা।’’ তাই গায়িকা পুজোয় নবমীর সাজের জন্য বেছে নিলেন বাংলার স্বর্ণচরী শাড়িকে।
স্বর্ণচরী শাড়িতে নজরকাড়া পৌষালী
গায়িকা জানান, পুজো শুরু ও শেষ সবটাই করতে চান বাংলার নিজস্ব শাড়ি দিয়ে। কারণ, তাতেই তাঁর পরিচয়।
পোশাক : সংস্কৃতি কোলকাতা
গহনা: সংস্কৃতি কোলকাতা
মেকআপ: স্বস্তিকা সিংহ
হেয়ার স্টাইলিং: সৌম্য দত্ত
ছবি: অভিষেক আগরওয়াল
প্রয়োগ: আনন্দবাজার ডট কম
লোকেশন: উত্তর কলিকাতা সর্বজনীন দুর্গোৎসব