Advertisement
E-Paper

আমাকে ‘টাচ’ করবেন না

করলেও সাবধানে। না হলে প্রেমিকার মেসেজ চলে যেতে পারে বৌয়ের ফোনে। টাচফোনের নানা ভ্রান্তিবিলাসের গল্প শোনালেন পরমা দাশগুপ্তমোবাইলে টাচ করলেও সাবধানে। না হলে প্রেমিকার মেসেজ চলে যেতে পারে বৌয়ের ফোনে। টাচফোনের নানা ভ্রান্তিবিলাসের গল্প

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০০:০১

গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়!

সিধে রাস্তার টেরি চাল নয় মোটেই। স্রেফ বেখেয়াল কিংবা মোবাইলের কামাল।

আর তার ফলাফল?

প্রেমিকার রোম্যান্স ঠাসা মেসেজ পথ ভুলে সোজা পাড়ি দেয় গুরুগম্ভীর বসের ইনবক্সে। কিংবা দেদার ভুলভাল লেখার তোড়ে ভেসে চলে যায় দিনভরের ক্লান্তি। ছোট্ট ছোট্ট ভুলে দিব্যি জুটে যায় পাহাড়প্রমাণ হাসির খোরাক। রামগরুড়ের ছানা হওয়া তখন স্ট্রিক্টলি মানা।

পথভোলা এক মেসেজ এসেছি...

রোদজ্বলা এক দুপুরে হঠাৎ ঝুপ্পুস বৃষ্টি। তুমুল ভিজে মন জুড়ে ভেজা ভেজা প্রেম নিয়ে অফিস কিউবিকলে ফিরেই জয়কে মেসেজটা পাঠিয়ে ফেলেছিল তিতির। উত্তর আর আসে কই! একরাশ রাগ নিয়ে মেসেজবক্স খুলেই ঘেমেনেয়ে একশা। জয় নয়, আহ্লাদে আটখানা সেই মেসেজ চলে গিয়েছে জয়দীপ, মানে বসের কাছে।

তার পর? বসের দেদার ঠাট্টা তো বটেই, অন্তত বছর দুয়েক অফিস কলিগদের আড্ডাতেও ঘুরেফিরে এসেছে তিতিরের কীর্তি। এবং ছুটেছে হাসির ফোয়ারা। এখন তো জয়-তিতিরের সংসারেও ওই গল্পটাই জমিয়ে বসেছে চিরকালের মতো।

বিজনেস অ্যানালিস্ট অর্কর সহকর্মী আঁখির রোগটাও এক্কেবারে এক। টাচস্ক্রিনের সৌজন্যে এলোমেলো স্ক্রল। ‘‘প্রথম প্রথম একেবারে ঘেঁটে ঘ হয়ে যেতাম। কারণ আমার ইনবক্সে আঁখির যে মেসেজটা জ্বলজ্বল করছে, তার সঙ্গে আমার তো কোথাও কোনও সম্পর্কই নেই! জিজ্ঞেস করে বুঝতাম, ওটা আসলে অন্য কাউকে লেখা। এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। মেসেজের মাথামুণ্ডু নেই দেখলেই বুঝে ফেলি ওটা আমার জন্য নয়!’’ হেসে ফেলে অর্ক। আঁখি অবশ্য থোড়াই কেয়ার— ‘‘বা রে, ভুল করে পাঠানো ভাল গানগুলোও যে পাও! তার বেলা?’’

ভুল-ভুলাইয়া

টাচস্ক্রিন ব্যাপারটা যে ‘অঙ্ক কী কঠিন’-এর মতোই গোলমেলে, হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনীদের এক হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ। না বুঝে উপায়ই বা কী! গ্রুপের সদস্য কলেজশিক্ষিকা সংহিতার আঙুলগুলো কিছুতেই যে ঠিক বোতামটায় পড়তে চায় না। আগে-পিছে, উপরে-নীচে কোথায় কখন আঙুল পড়বে, সংহিতা নিজেও খেয়াল করে উঠতে পারে কই! আর সেই ফাঁকেই আরশোলা কখন ‘আরশোকা’ হয়ে যায়, পাগল হয় ‘পাহিক’, জঘন্য হয়ে যায় ‘জঘমঘ’-এর মতো কঠিন কঠিন সব ‘টাইপো’। আর সে শব্দ আসলে কী জানতে কি-প্যাড আঁতিপাঁতি খুঁজে গেসওয়ার্কে নামতে হয় বাকিদের। কখনও বা ইমোটিকন হয়ে হলদেরঙা হাসিমুখের বদলে হাজির হয় বেগুনও! এমনকী খোদ ‘টাইপো’ই হয়ে যায় ‘টুপো’। ‘‘তবে এর জন্য সংহিতার পিছনে লেগেই আমাদের দারুণ কাটে কিন্তু। আমরা ঠাট্টা করলেই বেচারি রেগে যায়, আরও উত্তেজিত হয়, আর আরও ভুলভাল লেখে! ব্যস, আবার তুমুল হাসি। আর সেই হাসিটাই সারাদিনের খাটনির মধ্যে অ-নে-ক-টা অক্সিজেন।’’ একবাক্যে বলে ফেলে ব্যস্ত কপোর্রেট সোহিনী, দেবর্ষিরা। ‘‘আমরাও কিন্তু এখন ওর ভাষাটাই রপ্ত করে ফেলেছি। গ্রুপে কথার্বাতা মানেই এখন ভুলভাল লেখা। ‘টাইপো’র কল্যাণে আমাদের সবার এখন রোজ নতুন নতুন নামকরণ হয়। সংহিতার মেসেজ কে কতটা ডিকোড করতে পারল, তা নিয়ে কম্পিটিশনও হয় কিন্তু, ’’ আর একপ্রস্থ হেসে নেয় স্কুলশিক্ষিকা ঐন্দ্রিলা।

ভুল, প্রেম এবং...

একটা ভুল মেসেজ। মানে ভুল করে পাঠিয়ে ফেলা। আর তাতেই জমে গেল ‘এক ছোটিসি লাভস্টোরি’। আসলে ফার্স্ট ইয়ারের সেই প্রথম দিনটা থেকেই দিয়ার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল অর্জুন। ক্লাসে দিয়া ঢুকলেই চারপাশটা কেমন আলো-আলো। মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে গিটারের সুর। কিন্তু ওইখানেই শুরু এবং শেষ। ক্লাস, ক্যান্টিন, ফেস্ট, সকালের রোদ, দুপুরের আড্ডা, বিকেলের মন-কেমন আলো সব পেরিয়েও তো গড়িয়ে গেল তিন-তিনটে বছর। বলে ওঠা আর হল কই!

আরও বছর তিনেক পরের কথা। মাস্টার্সের পরে তখন ছড়িয়েছিটিয়ে যাওয়া বন্ধুত্বগুলো আবার ডানা মেলছে ফেসবুকের হাত ধরে, ফের টুকটাক জোগাড় হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া ফোন নম্বর। আলসেমি ভরা এক দুপুরে দিয়াকে মনের কথা বলা মেসেজটা লিখেই ফেলেছিল অর্জুন। পাঠাবে না-ই ঠিক ছিল।
কিন্তু কী করে যে কী হয়ে যায়! ডিলিটের বদলে হাত পড়ল সেন্ড বোতামে। ব্যস!

দিয়া-অর্জুনের বিয়ের কার্ড ছাপতে গিয়েছে দিন কয়েক হল।

খুবই পরিচিত এক জন দর্জি ভেবে আমাকে
ফোন করে বসেছিল। জামার মাপ দিতেও শুরু করে ফেলে!
ভুলটা বোঝার পরে দু’জনেই লজ্জায় লাল!

অনুপম রায়

পরকীয়া চালাচ্ছিলেন এক বন্ধু। প্রেমিকাকে পাঠাতে গিয়ে ভুল করে মেসেজ

চলে গেল বৌয়ের কাছে। বৌকে বোঝালেন তাঁকেই লিখেছেন। বৌ আহ্লাদে আটখানা।
নতুন করে প্রেমের মেসেজ পাঠাতে শুরু করলেন স্বামীকে। গৃহযুদ্ধ এড়াতে জবাবও যেতে লাগল।
এ বার সেটা দেখে ফেললেন প্রেমিকা। শেষে বৌ-প্রেমিকার দেখা হল। এবং..!

সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ, সবই হয় গাড়িতে যেতে যেতে।
টাইপে অভ্যস্ত আঙুলে টাচস্ক্রিন যথেষ্ট গোলমেলে। ফল যা হওয়ার তা-ই!
গোটা একটা বাক্য লিখে ফেলার পরে দেখলাম একটা শব্দও ঠিক
শব্দ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু দিব্যি চলে গিয়েছে গন্তব্যে!

আবীর চট্টোপাধ্যায়

touch screen mobile phone mobile touch pad pros and cons touch screen phone extramarital affairs touch screen mobile phone hazards parama dashgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy