Advertisement
E-Paper

কিছু হেঁচকি, তবু কামব্যাকে অনবদ্য রানি

নয়না মাথুরকে চিনতে পারছেন না? একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষিকা, ছোটবেলায় যে এই ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’-এর ফলে বারবার স্কুল বদলাতে বাধ্য হয়েছিল। পরিবারেও ঘোর অশান্তি। বাবার সঙ্গে দূরত্ব।

দেবাশিস চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০০:০১

চা চা চা... অভিজাত কফি শপের শান্ত পরিবেশে বসে যদি এমন আওয়াজে চমকে ওঠেন, এ বার থেকে বুঝবেন, চারপাশে এমন কেউ আছেন, যাঁর ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’ নামে একটি স্নায়ুঘটিত সমস্যা রয়েছে। নয়না মাথুরের ভাষায়, ‘‘আমাদের মস্তিষ্কের তারগুলো যদি সব ঠিকঠাক না জোড়ে, তা হলে মাঝে মাঝে এমন ‘শক’ লাগে।’’

নয়না মাথুরকে চিনতে পারছেন না? একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষিকা, ছোটবেলায় যে এই ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’-এর ফলে বারবার স্কুল বদলাতে বাধ্য হয়েছিল। পরিবারেও ঘোর অশান্তি। বাবার সঙ্গে দূরত্ব। সব কিছুর জন্য দায়ী এই স্নায়ুঘটিত রোগটিকে যে নিজের জীবনসঙ্গীর মতোই মেনে নিয়েছিল। তার কথায়, ‘‘আমরা একসঙ্গে খাইদাই, একসঙ্গে ঘুমোই।’’

এক ডজন স্কুল বদলেও কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে নয়না। নিজেকে তৈরি করেছে স্কুলশিক্ষিকা হওয়ার জন্য। কারণ, সে মনে করে, ‘‘আমি টিচার হওয়ার জন্যই জন্মেছি।’’

কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে চাইলেই কি স্কুলে চাকরি পাওয়া যায়? বিশেষ করে আমরা যখন মনে করি, এমন চিৎকার যে করে, সে আর পাঁচ জনের মতো সাধারণ বা ‘নর্মাল’ নয়। যখন মনে করি, এই ধরনের শিশুর বিশেষ স্কুলে যাওয়া উচিত বা এমন শিক্ষক ক্লাস নিতেই পারবেন না। সে যতই নয়না মাথুর বলুক না কেন, ‘‘ট্যুরেট আমার স্নায়ুতে, আমার বুদ্ধিবৃত্তিতে নয়।’’ এই চিন্তা থেকেই নয়নার বাবা রেস্তরাঁয় মেয়ের অর্ডার নিজেই আগ বাড়িয়ে দেয়। এ জন্যই ‘চা চা চা’ শুনে চারপাশের কৌতূহলী চোখগুলো নয়নাকে বারবার জরিপ করতে থাকে।

তবু সে চাকরি পেয়ে গেল শিক্ষিকার। কারণ, ‘নাইন এফ’ নামে একটি দুর্বিনীত ক্লাসকে সামলানোর মতো আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তথাকথিত বস্তি থেকে আসা সেই দুর্বিনীত ১৪টি বাচ্চাকে নিয়ে সাফল্য ছোঁয়ার কাহিনিই ‘হিচকী’।

যিনি শিক্ষক, তিনিই ‘মেন্টর’ বা পথপ্রদর্শক— এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে এর আগে ছবি হয়েছে। খুব ভাবনাচিন্তা না করেও বলে দেওয়া যায় ‘তারে জমিন পর’, ‘ব্ল্যাক’-এর নাম। কিছুটা আলাদা হলেও ‘চক দে ইন্ডিয়া’-কেও এই দলে ফেলা যায়। একই ডিএনএ হওয়া সত্ত্বেও ছবির মানের দিক থেকে ‘হিচকী’ কিন্তু এদের চেয়ে পিছিয়ে। এর বড় কারণ চিত্রনাট্য। ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’-এর মতো একটি রোগ এবং তাকে ঘিরে সামাজিক সমস্যাকে হাতে নিয়েও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি নির্মাতারা। নয়নার কয়েকটি অভিজ্ঞতা টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কোনও বড় চিত্র তৈরি করেনি। মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকা হেঁচকিগুলো ভাঙার যে কথা নয়না বলে, তা-ও যেন গড়ে ওঠে না সে ভাবে। অন্য সিনেমাগুলি বহুস্তরীয়। ‘হিচকী’ সে দিক থেকে সরলরেখায় চলে। যার উদ্দেশ্য, সিনেমার শেষে একটি ‘ফিল গুড’ অনুভূতি দেওয়া।

হিচকী

পরিচালনা: সিদ্ধার্থ পি মলহোত্র

অভিনয়: রানি মুখোপাধ্যায়,
নীরজ কবি, হর্ষ মায়ার

৬/১০

চিত্রনাট্যে এমন কয়েকটা হেঁচকি সত্ত্বেও প্রায় দু’ঘণ্টার এই ছবিটি দেখতে দেখতে সে ভাবে ‘হিচকী’ লাগবে না। কারণ, ইংরেজি উপন্যাস এবং সিনেমা ‘ফ্রন্ট অব দ্য ক্লাস’-এর অনুসরণে তৈরি ‘হিচকী’র সব থেকে বড় গুণ কাস্টিং। ক্লাস ‘নাইন এফ’-এর ১৪ জনের যে দলটি এই সিনেমার প্রাণ, তাদের কথা উল্লেখ করতেই হয়। সেই দলে আতিশের ভূমিকায় হর্ষ মায়ার সেরা। স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক ওয়াডিয়ার ভূমিকায় নীরজ কবিও ভাল। আবহসংগীত ও গান তো আছেই, কাহিনির পরতে পরতে ঢুকে থাকা আবেগও ছুঁয়ে যাবে। ছবি শেষও হচ্ছে ছোট্ট একটি চমক দিয়ে।

এবং আছেন রানি। চার বছর পরে ফিরলেন। ফিরেই মাত করলেন অনবদ্য অভিনয়ে। সংলাপ বলার ভঙ্গি থেকে শুরু করে ট্যুরেট শকের ছোট ছোট ডিটেলিং— সব কিছুতে নতুন করে নিজেকে চেনালেন তিনি। রানিকে ফেরানোর জন্য ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য প্রযোজক আদিত্য চোপড়া ও পরিচালক সিদ্ধার্থ পি মলহোত্রের।

‘কামব্যাক’ বলতে এত দিন বাঙালি শুধু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই চিনত। এ বার সেই খাতায় উঠল রানি মুখোপাধ্যায়ের নামও।

Rani Mukerji Hichki
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy