Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bhanumotir Khel

ফ্লোর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভেলকি

ইউনিটের যাকে সামনে পাচ্ছেন তাঁর সঙ্গেই একচোট খেলে নিচ্ছেন, গল্প করে নিচ্ছেন। একে তাঁকে বকেও দিচ্ছেন। কিন্তু শট রেডি হয়ে গেলেই সোজা ক্যামেরার সামনে।

ভেলকি ওরফে তানিশা গঙ্গোপাধ্যায়।ছবি: সংগৃহীত।

ভেলকি ওরফে তানিশা গঙ্গোপাধ্যায়।ছবি: সংগৃহীত।

মৌসুমী বিলকিস
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ১৬:০৬
Share: Save:

‘ভানুমতির খেল’ ধারাবাহিকের ছোট্ট মেয়ে ভেলকি। তানিশা গঙ্গোপাধ্যায়।শুটিং ফ্লোরে এক্সট্রা এনার্জি। সারাক্ষণ দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। ইউনিটের যাকে সামনে পাচ্ছেন তাঁর সঙ্গেই একচোট খেলে নিচ্ছেন, গল্প করে নিচ্ছেন। একে তাঁকে বকেও দিচ্ছেন। কিন্তু শট রেডি হয়ে গেলেই সোজা ক্যামেরার সামনে। দৌড়তে দৌড়তেই তিনি সামনে এসে দাঁড়ালেন। কয়েক মিনিটের জন্য পাওয়া গেল তাঁকে।

ভেলকি কে? চনমন করতে করতে তানিশার ঝটিতি জবাব, “আমারই চরিত্র হচ্ছে ভেলকি... মানে একটা গরীব মেয়ে যে রাস্তায় ম্যাজিক দেখিয়ে মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগায়। সেই মেয়েটা জাদুমহলে চলে গেছে। আমি জানি না তারপরে কী হবে।”

ভেলকি মানে কী? “ভেলকি মানে ম্যাজিক।”

ভেলকির চরিত্রে তানিশা গঙ্গোপাধ্যায়।ছবি: সংগৃহীত।

আরও পড়ুন: সোনাদার জীবনে প্রেম আসুক চাইল ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ টিম​

ভেলকি নাম রাখলো কে? “সেটা তো আমি জানি না। কিন্তু এখন যদি আমি ঘরে যাই সবাই ভেলকিই বলে, তানিশা বলে আর ডাকে না।”

তার জন্য দুঃখ হয়? “না। আমি বলি, ‘আরও ডাকো ভেলকি বলে। এবার যখন নাম পাল্টে যাবে তখন বুঝবে।’ হি হি...”

কোন স্কুলে পড়েন তিনি? সংক্ষিপ্ত উত্তর তাঁর, “জিডি বিড়লা। ক্লাস থ্রি।”

স্কুলে সবাই কী নামে ডাকে? “স্কুলেও আমি ভেলকি। মোস্ট অফ দ্য টাইম ভেলকি বলেই ডাকে সবাই। টিচাররা বলেন না। তাঁরা সিরিয়াল দেখার সময় পান না। এ বার জান তো যখন লাঞ্চ ব্রেক হয়, আমি খেতে বসি, দরজার বাইরে পুরো লাইন লেগে যায়। আমি তো ব্লু কালারের চশমা পরে থাকি। আমার তো পাওয়ার আছে চোখে। ওরা বলে, ‘ওই দ্যাখ ব্লু কালারের চশমা পরে আছে না, ওই মেয়েটাকে ডাক না, ডাক না।’ ওদের কাছে যেতে আসতে আমার পা ব্যথা হয়ে যায়।”

কেন? “সিরিয়ালে দেখে তো, তাই দাঁড়িয়ে থাকে। আর শুধু ছোট বাচ্চারা না, বড় বড় দিদিরাও দাঁড়িয়ে থাকে।”

এত ফ্যান? “হ্যাঁ।”

কী বলে? “বলে, ‘এই, তুমি সিরিয়াল কর?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ।’ অবাক হয়ে ‘উঁ...’ করে আওয়াজ করে। আবার আসে। বলে, ‘কী সিরিয়াল কর?’আমি বলি। আবার ডাকে। আসো আর যাও, আসো আর যাও... ভাল্লাগে না!” নাক কুঁচকে বলেন তিনি।

পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত জানালেন ভেলকি নাকি অভিনেতা অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়কে অব্দি টেনশনে ফেলে দিয়েছিলেন। ব্যাপারটা কী? ভেলকি শুরু করলেন, “ধর, অরিন্দম আঙ্কেল... আঙ্কেলের ক্লোজ যাচ্ছিল আমি কিউ দিচ্ছি। এবার অরিন্দম আঙ্কেল একটা ডায়ালগ মিস করেছেন। আঙ্কেল ‘কাট’ করতে বলেছেন। তারপর বলছেন, ‘তুই ডায়ালগটা বললি না কেন?’ আমি বলালাম, ‘আরে আগে তোমার ডায়ালগ ঠিকঠাক করে বল। তোমার ডায়ালগ তো বললেই না। আমি কেন বলতে যাব?’”

তারপর? “আঙ্কল বললেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা, বলছি।’ তারপর প্রথম থেকে আবার শট হল।”

সবার ডায়ালগ মনে থাকে? তিনি বললেন, “হ্যাঁ। কারণ মা আমাকে পুরো সিন পড়িয়ে দেয়। সব ডায়ালগ পড়িয়ে দেয়। যদি আমার ডায়ালগ নাও থাকে তবুও পড়িয়ে দেয়। মা বলে, ‘দ্যাখ, এরপর এটা আছে। এরপর তোরটা আছে।’ শুটিঙের সময় লাস্ট ডায়ালগ যদি না বলে আমিও বলবই না, চুপ করে থাকবো। আর উল্টো ডায়ালগ বললেও আমি চুপ করে থাকবো। আগে সোজা ডায়ালগ বল তারপর আমি বলব।”

ছোট্ট তানিশাকে এখন সবাই ভেলকি বলেই চেনেন।ছবি: সংগৃহীত।

আরও পড়ুন: সঙ্গীত প্রতিভা সামনে আনতে দেবজ্যোতির নতুন গানের পাঠশালা​

উল্টো ডায়ালগ কীরকম? “ধর লেখা আছে, ‘তুই আমার কে রে?’ ‘তুই আমার কে’ বলেছে। তারপর আর একটা লাইন অ্যাড করে দিল। তাহলে আমি বলবই না। মিনিং এক হলে হবে না। যা লেখা আছে তাই বলতে হবে।”

লাটসাহেব কে? “হিহি... আমাকে লাটসাহেব বলতে বলেছে আমি তো আর মেঘরাজ সরকার বলব না। হি হি... কখনও কখনও শুটিঙের বাইরেও লাটসাহেব বলে ফেলি। হি হি হি...আমার বাবা... হি হি... সিরিয়ালের হিরো...”

শুটিঙের ফাঁকে কী করে ভেলকি? “খেলি। এদিকে দৌড়ই, ওদিকে দৌড়ই। সবার সঙ্গে খেলি। কিন্তু মেঘ আঙ্কেলের সঙ্গে খেলি না, ভাল্লাগে না।”

কেন? “সবসময় আমার সঙ্গে কিটকিট করে।”

কীরকম? “ধর আজকে যেটা হয়েছে, আমি গাড়িতে বসে আছি, আমার একটু বমি বমি লাগছে। আমাকে বলছে, ‘এই চুপ কর। এই চুপ কর্‌।’ বলেই যাচ্ছে। এমনিই বমি পাচ্ছে... ভালো লাগে না... আমি বলে দিয়েছি, ‘চুপ কর নাহলে তোমার গায়ে বমি করে দেব।’ ব্যস্ত হয়ে বলছে, ‘না না, কোনও দরকার নেই।’ হি হি হি...”

শরীর খারাপ লাগছিল? “আউটডোর ছিল তো... এই রোদের মধ্যে... বমি তো পাবেই।”

ভেলকি করতে কেমন লাগছে? “খু...উ...ব ভালো। কিন্তু দেখ, এত বছর হয়ে গেল আমার ড্রেস চেঞ্জ হল না। সেই একই ড্রেস। আর মাঝে মাঝে আমার ঘাগরা এনে পরায়... যখন অন্য সিন হয়। কিন্তু তাও ম্যানেজ করে নিই। কী আর হবে? এমনিই তো শেষের দিকে।”

নতুন ড্রেস আনতে বলা হয়েছে? একটু বিষণ্ণ মুখে জানালেন, “বলি। কিন্তু শুনছে কোথায়?”

আরও পড়ুন: ঋষি কপূর, আমির-প্রসেনজিৎদের নায়িকা বলিউডের এই ডাকসাইটে সুন্দরী এখন কী করছেন?​

এদিক ওদিক তাকান ভেলকি। পরিচালক স্ক্রিপ্ট হাতে বোঝাচ্ছেন অভিনেতাদের। ভেলকি দেখতে পান। যদিও কেউ তাঁকে ডাকেনি কিন্তু নিজেই সচেতন হয়ে ওঠেন। বলেন, “বাবারে! আমাকে শটে যেতে হবে।” বলেই এক ছুটে পরিচালকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। নিজের সংলাপ, দাঁড়ানোর অবস্থান বুঝে শট দেন তিনি।

একটা শটে তিনি ওভারল্যাপ হয়ে যাচ্ছেন। পরিচালক নির্দেশ দেন, “তোর ডানদিকে একধাপ বেরিয়ে আই ভেলকি।” ভেলকি ঠিকঠাক অবস্থান নেন। চলতে থাকে শুটিং। তাঁর অতিরিক্ত সচেতনতায় সংলাপ ভুলে যাওয়ার যো নেই কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhanumotir Khel TV Serial Tollywood Bangli Serial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE