কমলেশ্বরের পরিচালনায় ছবিটির শ্যুটিং হয়েছে লন্ডন আর কলকাতাকে ঘিরে।
চার দেওয়ালে বন্দি একটা রাতের গল্প। অতীত ঘুরে ফিরে আসা কাহিনির শাখা-প্রশাখা হয়ে ওঠা কিছু দৃশ্য। এ ভাবেই চিত্রনাট্যের বিস্তার। লিখেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। এসকে মুভিজের নতুন ছবি ‘অনুসন্ধান’। কমলেশ্বরের পরিচালনায় ছবিটির শ্যুটিং হয়েছে লন্ডন আর কলকাতাকে ঘিরে। ছবির নাম শুনে মনে হতে পারে, কিসের অনুসন্ধান? কেনই বা সেই খোঁজার পিছনে ছুটে চলা? ‘অনুসন্ধান’ এই খোঁজার মধ্যে দিয়েই এক মনস্তাত্ত্বিক সফরের গল্প হয়ে ওঠে।
ন্যায়-অন্যায়। অপরাধ-নিরপরাধ। কথা দেওয়া, বা দিয়েও না রাখা। এ সবের মধ্যে যে ফারাক বা দূরত্ব তা শুধুমাত্রই একটা দৃষ্টিভঙ্গি। অন্য ব্যাখ্যায় প্রয়োজনে তা সম্পূর্ণ বদলেও যেতে পারে । সেই উপলব্ধি দাঁড় করাতে পারে নতুন একটা সত্যের সামনে। এ কথাই বলে কমলেশ্বরের নতুন ছবি।
আসলে, কোনও বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো মোটেই সহজ নয়। ‘কিন্তু’, ‘যদি’, ‘অথবা’এই শব্দ ব্যবহার করে আমরা নিজের অপরাধ ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। সেই জায়গা থেকেই প্রশ্ন তুলেছে ‘অনুসন্ধান’, নিজের অপরাধ আড়াল করলেই কি সব মুছে যায়? আসলে কাকে ঠকাই আমরা? পালাতে চাই কার থেকে? যদি প্রকৃত অর্থে বিচার হয় তা হলে কল্পিত আদালতে দাঁড়িয়ে আমরাও কি পারব বিবেকের কাছে নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে? ‘অনুসন্ধান’ এমনই গভীর কিছু মনস্তত্ত্ব উস্কে দেয় ছবির পরতে পরতে।
ফ্রেডরিক ডিউরেনম্যাটের লেখা ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’ গল্পের অনুসরণে এই ছবি। গল্পটি নিয়ে ভারতসহ সমগ্র বিশ্বে এর আগেও বহু সিনেমা এবং নাটক হয়েছে। ‘প্লে হাউস’ নামে একটি নাটক কমলেশ্বরের নিজেরই করা। এ ছাড়া, ‘চোপ আদালত চলছে’, ‘তৃতীয় নয়ন’ নামে দু’টি নাটকও হয়েছে বাংলাতে। ‘আ ডেঞ্জারাস গেম’ ছাড়াও এডগার ওয়েলসের ‘দ্য ফোর জাস্ট মেন’ এবং মোপাসাঁর ‘লে ভলিওর’— এই দু’টি গল্পের কিছু উপাদানও ‘অনুসন্ধান’ ছবিতে পাওয়া যায়।
অশোক ধানুকা, হিমাংশু ধানুকা প্রযোজিত ‘অনুসন্ধান’ মূলত ঘটনা এবং নাটকীয়তায় মোড়া সংলাপ নির্ভর ছবি।
ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে টলিউডের প্রথম সারির এক ঝাঁক দাপুটে অভিনেতা। অসম্ভব ভাল ঋদ্ধি সেন। তার সংলাপ বলার অনায়াস ভঙ্গি ভীষণ আকর্ষণীয় করে তোলে চরিত্রটিকে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় নিজে এক জন পরিচালক। কিন্তু আবারও প্রমাণ করলেন তিনি এক জন অসাধারণ অভিনেতাও। সু-অভিনেতা হিসেবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা নতুন নয়। তিনিও প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। তবে ক্ষুরধার অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি জুড়ে তাঁর হাতের আঘাতের বিষয়টিতে হয়ত আরও একটু মনোযোগী হতে পারতেন পরিচালক।
এ ছাড়াও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার অনবদ্য তাদের অভিনয় মুন্সিয়ানায়। পায়েল সরকার এবং প্রিয়াঙ্কা মন্ডল স্বল্প পরিসরেও নিজেদের চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন। এই ছবির বিশেষ দিক রবিরঞ্জন মৈত্রর পরিপাটি সম্পাদনা। অনুপম রায়ের গান এই ছবির ঘরবন্দি উত্তেজনা ও অপেক্ষার মাঝে যেন খোলা আকাশ! চিত্রগ্রাহকের ভূমিকায় টুবান। রূপটানে সোমনাথ কুন্ডু, পোশাক পরিকল্পনায় সাবর্ণী দাশ যথাযথ।
এই ছবিতে সওয়াল-জবাবের মধ্যে দিয়ে অপরাধী চরিত্রের অতীত এবং অতিথি আপ্যায়নের অভিনব খেলায় মেতে ওঠা আইনজীবী পরিবারে সদস্যদের নিজস্ব সম্পর্কের টানাপড়েন দর্শককে কতটা আনন্দ দেবে সেটা বাংলা ছবির দর্শকের স্বাদ এবং বিচারবোধই বলে দেবে। তবে এই ছবিটি দেখতে গিয়ে মানুষ চারপাশের জীবনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy