‘অমরসঙ্গী’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং সোহিনী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
সাম্প্রতিক কালে ‘হরর কমেডি’ ধারার একাধিক ছবি নানা ভাষায় জনপ্রিয় হয়েছে। কী এই ‘হরর কমেডি’? যেখানে ভূত ও প্রেম প্রায় সমানে সমানে গল্প রচনা করে এবং তা ঘটে হাস্যরসের মিশেলে। ভূতকে দেখে ভয় পাওয়ার বদলে মজা পাওয়াই এখানে মুখ্য। তবে ‘অমরসঙ্গী’ ছবিতে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রেম। অর্থাৎ, ভূতের সঙ্গে প্রেম! এবং সে প্রেম একেবারেই সেকেলে পেত্নি-ভূতের প্রেম না। বরং রীতিমতো হালফ্যাশনের প্রেম। কাজেই, ছবিটির বিষয় বেশ টান টান, তাতে সন্দেহ নেই।
‘অমরসঙ্গী’ নামের বাংলা সুপারহিট প্রেমের ছবি রয়েছে। আবার, ভূত-মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বাংলা সাহিত্যে গল্পেরও অভাব নেই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক লেখার কথাই ধরা যেতে পারে এ প্রসঙ্গে। কিন্তু এ ছবির যে প্রেম, তা আজকের কলকাতার প্রেম। তাই মরে যাওয়ার পরেও সেখানে বার বার আত্মা লিভ-ইন করতে দ্বিধা করে না বা প্রেমিক জীবিত নতুন প্রেমিকার প্রতি আসক্ত হলে, ভূত-প্রেমিকা হিংসুটে হতে একটুও দেরি করে না।
সোহিনী সরকার আর বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের কেমিস্ট্রি এ ছবিতে দারুণ জমজমাট। দু'জনেই শক্তিশালী অভিনেতা। তাই ভূত-মানুষের এই প্রেম জমে গিয়েছে পুরোপুরি। চিত্রগ্রহণ থেকে সম্পাদনা, সব দিক থেকেই খুঁতহীন ও টান টান মনে হয়েছে ছবিটি। পাশাপাশি, অঙ্কুশ হাজরা, কিউ, মধুমিতা সরকারের ছোট ছোট চরিত্রও ছবিটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। তাই সব মিলিয়ে পরিচালক দিব্য চট্টোপাধ্যায় ও চিত্রনাট্যকার অরিত্র সেনগুপ্ত সাধুবাদ পাবেন।
‘অমরসঙ্গী’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) সোহিনী সরকার এবং বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু এত আধুনিক মানের ছবি বলেই কয়েকটি বিষয়ে খটকা থেকে গেল। বলা ভাল, সাব-প্লট এ ছবিতে বেশ দুর্বল। কন্যাসন্তান মারা যাওয়ার পরে বাবা-মায়ের শোক স্বাভাবিক। কিন্তু সে ব্যাপারে এখানে প্রায় কিছুই দেখানো হয় না। বদলে, বেশ খুশি-খুশিই দেখানো হয় তার বাবা-মাকে। এ জায়গাটা দেখতে বেশ অসুবিধে লাগে। বা, একজন প্রেমিকের সদ্য হতে-চলা বিয়ে ভাঙার পরে পরের পর যে ভাবে তার জীবনের পর্যায়গুলো দেখানো হয়, তাতেও মনে হয়, জোর করে দ্রুত গল্পের শেষে পৌঁছতে চাওয়া হচ্ছে। তন্ত্র বা জ্যোতিষ, আবার নাইটক্লাব বা গঙ্গার ঘাটে একা বসে থাকা দেবদাস-প্রেমিক— সব কিছুকেই সরলরেখায় বাঁধতে গেলে গোলমাল বাধবেই। কারণ, এই প্রত্যেকটি অধ্যায়ই গভীর এক একটা কটা পর্যায় জীবনের। একজন শোকতপ্ত মানুষকে সেরে ওঠার আগেই তাকে যদি এই রকম জোর করে পর পর প্লটে ফেলে ‘স্বাভাবিক’ হিসাবে দেখানো হয়, তবে তো সমস্যা হবেই।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
তাই ছবিটি এত মজার গল্পের ঠাসবুনোটে বানানো হলেও, দ্বিতীয় পর্বের পর থেকে কিছুটা একঘেয়ে লাগে। প্রথম পর্বে ঠিক যতটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, পরের পর্ব কিছুটা হতাশই করে। তবে, যে হেতু এ ছবির প্রাণ অভিনয়, তাই ফাঁকফোকরগুলো ঢেকে যায় তাতে। সোহিনীর অভিনয়, প্রেমের রাগ বা অভিমান বড় প্রাণবন্ত লাগে। প্রত্যেকটি তাকানো যেন আলাদা রকমের তাঁর। কখনও কখনও তিনি যে অভিনয় করছেন, সেটাও বোঝা যায় না। একই কথা বলা যায় বিক্রমের সম্পর্কেও। ব্যর্থ প্রেমিকের চেহারায় তাঁর অভিনয় বেশ বিশ্বাসযোগ্য।
তাই সামান্য কিছু ফাঁক থাকলেও, এ ছবি দেখে মজা আছে। এ ছবি সবাই মিলে দেখার মতই ছবি। বিশেষ করে,ভূতুড়ে প্রেমের গল্প বাংলায় সেলুলয়েডে ধরতে গিয়ে এই স্মার্টনেস হয়তো খুব বেশি ছবি অর্জন করতে পারেনি। কারণ, এ ছবির চলনে অদ্ভুত একটা মাদকতা আছে। হয়তো প্রযুক্তিগত কারণেই সে মাদকতার বেশিটা নির্মিত। অর্থাৎ, চিত্রগ্রহণ আর সম্পাদনায় মুন্সিয়ানা থাকার কারণেই হয়তো বা ছবিটি দেখতে টান টান লাগে। তাই এ ছবি দেখা উচিত। অন্তত ভণিতাবিহীন সিধে প্রেমের গল্প বলার কারণেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy