দশে পাঁচ। না, এর বেশি নম্বর দেওয়া যায় না। কিন্তু ছবির টেকনিক্যাল কাজ এত ভাল হয়েছিল যে আরও অনেক বেশি নম্বর দেওয়া যেত যদি ছবির মধ্যে ‘গল্প’টা সহজ সরল ভাবে বলা হত। মার খেয়েছে ওখানেই।
গল্পটা ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটা পিরিয়ডের। জ্ঞান প্রকাশের লেখা। বম্বে শহরের ওই সময়কার ছবিটা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ আর তাঁর সিনেমাটোগ্রাফার রাজীব রবি। সিপিয়া রঙে যেন পুরনো দিনের ছবিটাই ফুটে উঠেছে সিনেমার পর্দায়। একটা মুড তৈরি করেছে। তার সঙ্গে অমিত ত্রিবেদীর আবহসঙ্গীত এবং গান। ছবির প্রথম ফ্রেম থেকে দর্শকের মনকে টেনে নিয়ে যায় বম্বের অতীতের দিনগুলোতে। ছবির সেট-সেটিং, পরিবেশ, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাজপোশাক, মেক আপ-গেট আপ, হেয়ারস্টাইল সব কিছুর দিকে পরিচালকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রমাণ করে অনুরাগ কাশ্যপ একজন ভাল পরিচালক। কিন্তু কেন তিনি চিত্রনাট্যের দিকটা একটু মন দিয়ে দেখলেন না— জানি না।
ছবির গল্প যদি দর্শকের মনকে স্পর্শ না করে, তা হলে সে ছবি কখনওই ব্যবসায়িক সাফল্য পায় না। দর্শক আশাহত হয়।
অথচ রণবীর কপূর, অনুষ্কা শর্মা, কর্ণ জোহর (প্রথম কোনও ছবিতে অভিনয় করলেন), কে কে মেনন, মণীশ চৌধুরী, সত্যদীপ মিশ্র, সিদ্ধার্থ বসু— প্রত্যেকে তাঁদের চরিত্রগুলোকে সুন্দর ভাবে, আন্তরিকতার সঙ্গে পর্দায় তুলে ধরেছেন।
সবাই ভাল অভিনয় করলেও চারজনের কথা একটু আলাদা করে বলা দরকার। যেমন রণবীর কপূর। একটি নতুন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যা তিনি আগে করেননি। রাজ কপূরের নাতি রণবীর কপূর তাঁর দাদুর অভিনয়ের ধারাকে অনুসরণ করে জনি বলরাজকে পর্দায় তুলে ধরেছেন। অনেক বেশি রাজ কপূরের ছায়া দেখা যায় তাঁর মধ্যে। তাই বলরাজের চরিত্রটি দর্শকের মনে একটি বিশেষ আসন তৈরি করে নেয়। দর্শক ভালোবেসে ফেলেন রণবীর ওরফে বলরাজকে।
হোটেলের জ্যাজ গায়িকা অনুষ্কা শর্মা তাঁর চালচলন, অভিব্যক্তিতে ১৯৬৯ সালের সুন্দরী নায়িকাদের কথা মনে করিয়ে দেন। অতিথি শিল্পী রবিনা টন্ডনকেও দেখে মনে হয় যেন পুরনো দিনের কোনও হোটেল গায়িকাকে দেখছি।
এর পর বলতে হয় কর্ণ জোহরের কথা। যিনি প্রথম ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে ভাল অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিলেন। যা দেখে মনে হয় নিজে অভিনয়টা ভাল বোঝেন বলেই তাঁর পরিচালিত ছবিতে অভিনেতাদের দিয়ে এত ভাল অভিনয় করিয়ে নিতে পারেন।
হ্যাটস অফ কর্ণ!
এ বার একটু গল্পের আভাস দিই।
বম্বে ভেলভেট
৫/১০
রণবীর, অনুষ্কা, কর্ণ
ছোটবেলা থেকে বলরাজ (রণবীর কপূর) একজন ধনী, পয়সাওয়ালা লোক হতে চায়। বন্ধু চিমন (সত্যদীপ) তার সব সময়ের সঙ্গী। বলরাজ জীবন শুরু করে স্ট্রিট ফাইটার (বক্সার) হিসেবে। এমন সময় বিখ্যাত মাফিয়া কাইজাদ খামবাট্টার (কর্ণ জোহর) নজর পড়ে বলরাজের ওপর। সে তাকে নতুন বলরাজ হতে সাহায্য করে। বলরাজের নাম দেয় জনি বলরাজ। তার নামে একটা নাইটক্লাবও খোলে। ‘বম্বে ভেলভেট’। আসলে বম্বে ভেলভেটকে সামনে রেখে সেখানে নানা রকম অবৈধ কাজ চালায় খামবাট্টা।
হোটেলের জ্যাজ-গায়িকা রোজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় বলরাজের। রোজি (অনুষ্কা শর্মা) এবং বলরাজের ভালবাসা যখন জমে উঠেছে, তখনই জমি নিয়ে লড়াই শুরু হয়ে যায় খামবাট্টা আর তার শত্রু জিমি মিস্ত্রির (মণীশ চৌধুরী) মধ্যে।
শুরু হয় সেই পরিচিত গল্প। এ ওকে মারার চেষ্টা করে, ও একে মারার। মাঝখানে রোজি। গুলির লড়াইয়ে মারা যায় চিমন। সৎ পুলিশ অফিসার কে কে মেনন রণবীরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারবে কি?
প্রেম-ভালবাসা, রহস্য-সাসপেন্স, বন্দুকবাজি, মারামারি, খবরের কাগজ নিয়ে টানাপড়েন— সব মিলে কী রকম যেন তালগোল পাকিয়ে যায় গল্পটা। অনের রকম রসদ নিয়ে গল্প তৈরি বলে দর্শকও গুলিয়ে ফেলে সব।
ফলে ভাল মেকিং, ভাল অভিনয় হারিয়ে যায় এলোমেলো চিত্রনাট্যের কবলে পড়ে। আর তাই ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া অসম্ভব বলেই আমার মনে হয়।
আসলে অনুরাগ কাশ্যপের কাছে আরও অনেক আশা ছিল...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy