Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Movie Review

Review: বলিউডে ভূত আর সাবালক হল না

উলট বাবার দুই পুত্র বিভূতি (সেফ আলি খান) আর চিরঞ্জি (অর্জুন কপূর) ভূত তাড়ানোর বিশেষজ্ঞ।

ভূত পুলিশ  ছবির দৃশ্য।

ভূত পুলিশ  ছবির দৃশ্য।

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:২১
Share: Save:

ভূত পুলিশ
পরিচালনা: পবন কৃপলানী
অভিনয়: সেফ, অর্জুন, ইয়ামি, জ্যাকলিন
৪.৫/১০

পাহাড়ি রাস্তায় সন্ধে নামার পরে মাঝপথে যাত্রী তোলেন না গাড়ির চালকরা। তাঁদের মুখেই শোনা, নির্দিষ্ট স্টপে পৌঁছে যাত্রীকে নামতে বলতে গিয়ে দেখেছেন সিট ফাঁকা। অনেকের পায়ের নীচের অংশই নেই, শূন্যে ভাসছে। তিনধারিয়া, হলদিবাড়ি, শুকনার মতো পাহাড়ি চা-বাগানের সঙ্গে যোগসূত্র থাকলে বা ঘুরতে গেলেও এমন গল্প হামেশাই শোনা যায়। পাহাড়ি এমন সব ভূত নিয়েই গা-ছমছমে চা-বাগানে গল্প সাজিয়েছেন পরিচালক পবন কৃপলানী তাঁর ‘ভূত পুলিশ’ ছবিতে। আর সঙ্গে রেখেছেন ভূত তাড়ানোর দুই তান্ত্রিক।

উলট বাবার দুই পুত্র বিভূতি (সেফ আলি খান) আর চিরঞ্জি (অর্জুন কপূর) ভূত তাড়ানোর বিশেষজ্ঞ। কিন্তু মতে মিল নেই দুই ভাইয়ের। এক দিকে ভূতে বিশ্বাস করে না বিভূতি, সে সব জায়গায় ভূতরূপী দুর্জনদের খুঁজে বার করে ভাইকে বাস্তবচিত্র বোঝাতে চায়। অন্য দিকে চিরঞ্জি তার বাবার লেখা বই সঙ্গে করে একাগ্রচিত্তে তন্ত্রসাধনায় উৎসাহী। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মনের ভূত বা দুষ্ট মানুষের ছলচাতুরিই ধরা পড়ে তাদের ফাঁদে। এর মধ্যেই চা বাগানের মালিক মায়া (ইয়ামি গৌতম) বাগানের ভূত তাড়ানোর সন্ধানে আসে ভূতের মেলায়। সেখানে দেখা হয় এই দুই ভাইয়ের সঙ্গে। বিভূতি-চিরঞ্জিকে সঙ্গে নিয়ে যায় তাদের বাস্তুভূত ‘কিচকণ্ডি’কে ধরার জন্য। শুরু হয় হরর-কমেডির বন্ধুর পথে রোলারকোস্টার রাইড।

পাহাড়ি পরিবেশে ভূতের উপস্থিতি কিছু কিছু জায়গায় গা-ছমছমে। বিশেষ করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে চা-বাগানের মধ্য দিয়ে ইয়ামির বাড়ি ফেরা বা রাজকীয় বাংলোর ঘরে রাতের দৃশ্য বেশ রোমহর্ষক। তার বাইরে তেমন ভয়ের কোনও মুহূর্ত তৈরি হয় না। চিরাচরিত ভূতের জিমন্যাস্টিক, ট্র্যাপিজ়ের খেলা আর ভয়ের উদ্রেক করে না। হরর ছবির দর্শকরা এত দিনে জেনে গিয়েছেন, কোন দিক থেকে ভূত লাফাবে আর কোন দিক থেকে ঘাড় মটকাবে। ফলে ভূতের ছবির সেই অতর্কিত আক্রমণে দর্শকের কোনও হেলদোল হয় না। দেওয়াল বেয়ে হাঁটা, আর্চ করে দৌড়নো... সব ট্রিকস কাজে লাগিয়েও ভূত যেন পরিচালকের নির্দেশের অপেক্ষায়। হাতের মুঠোয় মানুষের গলা টিপে ধরেও সে ‘হে হে’ করে হুঙ্কার দিয়ে চলে, কিন্তু মারে না। ভূতও অপেক্ষা করে তান্ত্রিকের মন্ত্রপাঠের।

পরিচালকের এই হরর-কমেডি ছবি তৈরির প্রচেষ্টাও বিপরীত অর্থে সফল। ভয়ের দৃশ্যে ভূতের কার্যকলাপ হাস্যকর আর কমেডি দৃশ্যও ভয়ঙ্কর। বিশেষত রাতের জঙ্গলে পুলিশের ভূমিকায় জাভেদ জাফরির এলোপাথাড়ি গুলি করা, গাছে ধাক্কা খেয়ে চোখ উল্টে পড়ে যাওয়া অত্যন্ত শিশুসুলভ।

শেষ পর্যন্ত ভূতের ফ্ল্যাশব্যাকে যে গল্প দাঁড় করানো হয়েছে, তা-ও একেবারেই জোলো। ব্যাখ্যা নেই এমন অনেক অনুষঙ্গও রয়েছে ছড়িয়েছিটিয়ে। ছবিতে ভূতের ছায়ার চেয়েও ‘স্ত্রী’-র ছায়া জোরালো। বেশ কিছু দৃশ্য ‘স্ত্রী’ ছবির অনুকরণ বা অনুসরণে তৈরি। কিন্তু সে পথেও ভূতের মান থাকল না।

এ ছবির প্রাণ সেফের অভিনয়। সেফের সংলাপ, কমিক টাইমিং বেশ ভাল। যোগ্য সঙ্গত করেছেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়। সেফ-জ্যাকলিনের দৃশ্যগুলি বেশ মজার। অর্জুনকে আড়ষ্ট লেগেছে। ইয়ামি বেশ সুন্দর। আর সবচেয়ে সুন্দর চা-বাগানের মধ্যে তাঁদের বাংলোটা। হরর-কমেডি ছবিতে রোমাঞ্চে খামতি থাকলেও মন ভাল করা পাহাড় আছে, অতিমারি-ধ্বস্ত জীবনে যা চোখের আরাম। ফলে ভূতের ছবির শেষে ইচ্ছে করে ও রকম পাকদণ্ডী বেয়ে কোথাও ঘুরে আসতে। আর সেখানে এমন ভূতের দেখা মিললে তো কথাই নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Movie Review saif ali khan arjun kapoor Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE