১৪ ফেরে ছবির দৃশ্য।
১৪ ফেরে
পরিচালনা: দেবাংশু সিংহ
অভিনয়: বিক্রান্ত, কৃতী, গওহর, যামিনী
৪.৫/১০
জাত-পাত-ধর্মের নামে অনার-কিলিংয়ের গল্প বলিউডে নতুন নয়। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে পরিবারের ‘দিওয়ার’ তোলার গল্প যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেই গল্পকে পরিবেশনযোগ্য করতে দরকার জুতসই চিত্রনাট্য। তবে বিষয়টা যুগোপযোগী করে তোলার চেষ্টা রয়েছে ‘১৪ ফেরে’ ছবিতে। এখানে প্রেমিক-প্রেমিকা শহুরে মাল্টিন্যাশনাল সংস্থায় কর্মরত ও লিভ-ইন পার্টনার। বিদেশে পাড়ি দেওয়াও তাঁদের কাছে সহজ। সে দিক দিয়ে এ ছবির একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পরিচালক দেবাংশু সিংহ কি সেই সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে পেরেছেন?
বিহারের রাজপুত সঞ্জয় (বিক্রান্ত মেসি) আর রাজস্থানের জাঠ অদিতি (কৃতী খরবান্দা) এক কলেজে পড়ত। কলেজের সিনিয়র অদিতির প্রেমে পড়ে যায় সঞ্জয়। কলেজশেষে দু’জনেই একই সংস্থায় চাকরি পায়, শুরু করে লিভ-ইন। তবে তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পরিবার এই বিয়েতে রাজি হবে না। ফলে সঞ্জয়ের থিয়েটারপাড়ার বন্ধুদের শরণাপন্ন হয় তারা। সেখানেই পেয়ে যায় ভুয়ো মা-বাবা (গওহর খান ও জামিল খান)। তারা অদিতির বাড়িতে পৌঁছয় সঞ্জয়ের মা-বাবা সেজে। আবার সঞ্জয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে অদিতির মা-বাবা হিসেবে।
ছবি যত এগোতে থাকে, দুই পরিবার ও ভুয়ো মা-বাবাকে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। তা মজার উদ্রেক যত না করে, শিরঃপীড়া বাড়ায় তার চেয়ে ঢের বেশি। ‘কমেডি অফ এরর’ ক্রমশ ‘ট্র্যাজেডি অফ এরর’-এ পর্যবসিত হয়। তবুও বিক্রান্ত, গওহরের জন্য খানিক মনোযোগ ধরে রাখে এ ছবি। কিছু জায়গায় ছবির নায়ক-নায়িকাকেও ছাপিয়ে যায় গওহরের অভিনয়। কৃতীকে দেখতে বেশ ভাল লেগেছে, অভিনয়ও সাবলীল। প্রথম বার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে পর্দার শাশুড়ির (যামিনী দাস) সঙ্গে টুকরো মুহূর্তে কৃতীর অভিব্যক্তি বেশ পরিণত। সঞ্জয়ের মায়ের ভূমিকায় যামিনীর অভিনয়ও দাগ কাটে। এ ছবির অভিনেতারাই প্রাণবিন্দু। তবে ভাল অভিনেতাদের নিয়েও ছবির চিত্রনাট্য হোঁচট খেয়েই নাকাল। সেখানেই অভিযোগ পরিচালকের কাছে।
সবচেয়ে বড় কথা, যে প্রেমিক-প্রেমিকা পরিবারের অমতেও একসঙ্গে জীবন কাটাতে বদ্ধপরিকর, তাদের রসায়নই জমেনি। একটা গানেই প্রেমপর্ব শেষ করে ছবির সমস্যায় ঢুকে পড়েছেন পরিচালক। নায়ক-নায়িকার সম্পর্কে না আছে কোনও স্পার্ক, না আছে আবেগ, এমনকি প্রেমেরও দেখা নেই। বিক্রান্ত-কৃতীর সম্পর্কের এমন কোনও মুহূর্ত তৈরি করা হয়নি যা স্পর্শ করবে দর্শককে। তা হলে ছবির চরিত্রের সঙ্গে দর্শকই বা একাত্ম হবেন কী করে? ফলে চরিত্রদের চিন্তাভাবনা, দৌড়ঝাঁপ সবই অহেতুক মনে হতে থাকে। একের পর এক দ্বন্দ্বের অবতারণায় জট পাকাতে থাকে চিত্রনাট্য। বিবাহবিভ্রাটের গোলকধাঁধায় আটকে পড়ে ছবি। ওটিটির জ়মানায় এমন গল্প উপস্থাপনা করতে গেলে যথেষ্ট পরিকল্পনা দরকার। না হলে পরিচালককেও ভুললে চলবে না, ওয়েব মাধ্যমে দর্শকের হাতে অপশনের অভাব নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy