Advertisement
০১ মে ২০২৪
Raktabeej Movie Review

সবার উপরে সাসপেন্স সত্য, দোসর রইল উৎসব! ‘রক্তবীজ’ হল কেমন, দেখে এল আনন্দবাজার অনলাইন

নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি প্রথম থ্রিলার ‘রক্তবীজ’। মুখ্য চরিত্রে দেখা গেল আবীর চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী এবং ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Shiboprasad Mukherjee and Nandita Roy’s Raktabeej film review

‘রক্তবীজ’ ছবির তিন মুখ্য চরিত্র (বাঁ দিক থেকে) মিমি চক্রবর্তী, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায় । ছবি: সংগৃহীত।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৮
Share: Save:

বাংলায় ‘কহানি’ হয়ে যাবে না তো! শেষের দিকে ভয় যে একেবারে করছিল না, এমন নয়। ভয়ের মুখে ছাই ঘষে কাহিনি ঘুরল। ছক্কা মারল ‘কহানি মে টুইস্ট’। আর শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। এ তো কথাতেই আছে।

ওটিটি-র শিক্ষায় শিক্ষিত দর্শককে রাষ্ট্রপতি-সন্ত্রাসবাদী-গোয়েন্দা-পুলিশের গল্প নিয়ে বাংলায় থ্রিলার দেখিয়ে, তাঁদের চোখ টেনে রাখা সহজ কাজ নয়। তার উপরে আবার ছবির নাম ‘রক্তবীজ’। শব্দটি কানে বাজলেই এত দিন চোখের সামনে শাহরুখ খানের মুখ ভাসত। কয়েক শো কোটি টাকার মুনাফা করা বলিউডি হিট ‘পাঠান’ সে কাজ ভালই করেছিল। সেই যে রক্তবীজের পিছনে ছুটেছিল নায়ক-নায়িকা আর খলনায়ক, তা সহজে ভোলার কি? এ সবের পরেও ছক্কা মেরে নিজেদের দিকে খেলা ঘোরাতে হলে রীতিমতো পটু হতে হয়। নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্তবীজ’ শাহরুখ-দীপিকা-জনের জাদুর সঙ্গে লড়ে নিল।

নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘হামি’, ‘বেলা শুরু’ দেখায় অভ্যস্ত মস্তিষ্কের রাষ্ট্রপতি অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়ের (ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়)-এর বাড়ির পাশে সন্ত্রাসের পরিকল্পনা এবং তা আটকাতে দিল্লি ও পশ্চিবঙ্গের দুই পুলিশ পঙ্কজ সিংহ (অবীর চট্টোপাধ্যায়) এবং সংযুক্তা মিত্রের (মিমি চক্রবর্তী) জোর চেষ্টাকে ঘিরে তৈরি গল্পের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতেই পারে। কিন্তু পরিচালকদের বার্তা স্পষ্ট ভাবে ধরা দিল ছবিতে। পরিচিত দর্শককে হতাশ না করেও নিজেদের কাজের পরিধি অনেকটা বাড়িয়ে নিলেন দু’জনে। নন্দিতা-শিবপ্রসাদের পর্দায় ঢুকল রক্ত, গুলি, সন্ত্রাস। নানা বয়সের দর্শকের চাহিদা শুধু বোঝেন না, তা মেটাতেও সক্ষম যে তাঁরা, বুঝিয়ে দিলেন টলিপাড়ার জনপ্রিয় পরিচালক জুটি।

Shiboprasad Mukherjee and Nandita Roy’s Raktabeej film review

‘রক্তবীজ’ ছবির একটি দৃশ্যে মিমি-আবীর। ছবি: সংগৃহীত।

২০১৪ সালের এক বিস্ফোরণ-কাণ্ডকে ঘিরে তৈরি এ ছবির গল্প। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সে বছর পুজোয় বর্ধমানে নিজের আদি বাড়িতে ছিলেন কয়েকটি দিন। ওই সময়েই রাষ্ট্রপতির বাড়ির অনতিদূরে ঘটে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনা। এখানে রাষ্ট্রপতির নাম অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ি ও দিদির বাড়ির চারপাশ ঘিরে তৈরি এই ছবির গল্প বেশ টানটান।

নন্দিতা, শিবপ্রসাদ ও জিনিয়া সেনের লেখা গল্পটি বলার ভঙ্গি নজর কাড়বে। সাংবাদিকদের মতো খুঁটিনাটিতে জোর দেওয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। জিনিয়া ও শর্বরী ঘোষালের লেখা সংলাপও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে লক্ষ্য করার মতো। তবে গোলাগুলি, রক্ত, বোমার মাঝে মোটেই নিজেদের বৈশিষ্ট্য ভোলেননি ওঁরা। এ যে পুজোর ছবি, তা মনে রেখেছেন পরিচালকেরা। দোহারের গান আর গ্রামবাংলার পুজোর আমেজে ভরে আছে গোটা ছবি। চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় গ্রামের ছবি দেখা গিয়েছে খানিকটা কমই। এ ছবির একটি বড় অংশই বাড়ির ভিতরে শুট করা হয়েছে। তবে দর্শকের চোখের আনন্দের কথা ভেবে রয়েছে তার মধ্যেও নানা রঙের ব্যবহার।

গল্প আর চিত্রনাট্যের পরেই এ ক্ষেত্রে আসে চরিত্রগঠন আর অভিনয়ের প্রসঙ্গ। এ ছবিতে চরিত্রেরা আলাদা আলাদা করে খুব সবল না হলেও, কাউকেই বিশেষ দুর্বল বলার নয়। রাষ্ট্রপতির দিদি গৌরীদেবীর ভূমিকায় অনসূয়া মজুমদার পর্দা জুড়ে থেকেছেন। অনিমেষরূপী ভিক্টরকে নিয়ে অনেক আশা তৈরি হয় দর্শকমনে। তবে এ দেশে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মতো অতি ঘটনাবহুল হয় না, এ ছবিতে অনিমেষের চরিত্রটিও খানিকটা তেমন। অবদানের তুলনায় উপস্থিতির ভারই বেশি। তাতে যে ছবির বিশেষ ক্ষতি হয়েছে, তা বলা যায় না। বরং ছবির গতি ধরে রাখতে সাহায্যই করেছে এই বিবেচনা। আবীর ও মিমির রসায়নটি অবশ্য ছবিতে জমতে জমতেও জমেনি। মেলার মাঠে পঙ্কজকে দুষ্কৃতীর হাতে খুন হওয়া থেকে বাঁচাতে সংযুক্তার গুলি এবং তার পর দু’জনের চোখের কথা যে আশা জোগায়, তা নিমেষেই আবার ফিকেও হয়ে যায়। তবে দুই পুলিশের প্রেমের ইঙ্গিত মিলল কি মিলল না, তাতে গল্পের চলনে ক্ষতি হয় না। ফলে নায়ক-নায়িকার সমীকরণটি দুর্বল হলেও ছবি থেকে যায় টানটান।

পুলিশ ও প্রশাসন নিয়ে মজা করা সাধারণের স্বভাব ঠিকই। কিন্তু মজার আড়ালে মাঝেমাঝে ফিকে পড়ে যায় নিষ্ঠা। রাজ্য পুলিশের এসপি সংযুক্তা ও স্থানীয় থানার ওসি নিত্যানন্দ পতিতুণ্ডি (কাঞ্চন মল্লিক) হাসির রস না জোগালে ছবিটি হয়তো আরও টানটান থাকত। তবে পুজোর ছবি। তাতে একটু হাসি, মজা, হালকা ভাব না থাকলেও জমে না।

নায়ক-নায়িকার সমীকরণই জমল না, এ দিকে ছবি হল ভাল— এ কথা শুনে বিশ্বাসযোগ্য না মনে হতেই পারে। কিন্তু ‘রক্তবীজ’ সেখানেই আলাদা। এ ছবির গুরু থেকে গ্রাহক, সবই যেন ওটিটি-জগৎ। ফলে নামী মুখ যতই মূল চরিত্রে থাকুক না কেন, পার্শ্বচরিত্রে মোটেও কম জোর দেননি পরিচালকেরা। বলা যেতে পারে, খানিকটা বেশিই দিয়েছেন। আর তার ফলও পেলেন। যামিনী চরিত্রে দেবলীনা কুমার, নিশির চরিত্রে সত্যম ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ভাস্কর হিসাবে অম্বরীশ ভট্টাচার্য নজর কাড়েন। চরিত্র তৈরি ও চরিত্রায়ন, দুই-ই যত্ন পেয়েছে এই থ্রিলারে।

তবে এ ছবির আসল নায়ক কোনও চরিত্র নয়। সাসপেন্সই শেষ কথা। পুজোর গন্ধ মাখা ছবিতে রহস্যে জোর রয়েছে শুরু থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। একে একে সন্দেহের তির এ চরিত্র থেকে অন্য চরিত্রে ঘুরতে থাকে। তবু সন্দেহ কোথায় গিয়ে থমকাবে, তা বুঝতে শেষ পর্যন্ত দেখতে হয়। টম ক্রুজ়ের ‘মিশন ইমপসিবল’ গোত্রের ছবি দেখার অভ্যাস না থাকলে ছবির শেষে কিসের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন পরিচালক যুগল, তা বুঝতেও সময় লাগতে পারে।

মোদ্দা কথা হল যেটা, এমন পুজোর আমেজে জড়ানো থ্রিলার বিশেষ দেখেনি টলিপাড়া। ফলে এ ছবি মনে থেকে যাবে অনেক দিন। আর সঙ্গে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার কাছ থেকে অন্য ধরনের ছবি পাওয়ার প্রত্যাশাও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE