Advertisement
E-Paper

‘মহেঞ্জো দড়ো’ জোরদার নয়!

‘মহেঞ্জো দড়ো’ ইতিহাসবিদদের ফেবারিট সাবজেক্ট হলেও, ইতিহাসের ইতি টানা পড়ুয়াদের কাছে খুব একটা ফেবারিট ছিল না বোধহয়। তবু হৃতিক এবং পূজা হেগড়ে অভিনীত, আশুতোষ গোয়ারিকরের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচ্য ছবি নিয়ে উন্মাদনা ছিল আগাগোড়াই।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ১১:৩৬

‘মহেঞ্জো দড়ো’ ইতিহাসবিদদের ফেবারিট সাবজেক্ট হলেও, ইতিহাসের ইতি টানা পড়ুয়াদের কাছে খুব একটা ফেবারিট ছিল না বোধহয়। তবু হৃতিক এবং পূজা হেগড়ে অভিনীত, আশুতোষ গোয়ারিকরের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচ্য ছবি নিয়ে উন্মাদনা ছিল আগাগোড়াই। তবে সিনেমা দেখতে গিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ বিফল হতেই হবে। অতএব ১১৫ কোটির ছবিটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যই। তিন বছরের বেশি সময় ধরে সিনেমা নিয়ে রিসার্চ করে, ময়দানে নেমেছিলেন ছবির পরিচালক।

গল্পের প্লট ২০১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সিন্ধু সভ্যতার পটভূমিতে নির্মিত। সরমন (হৃতিক) সিনেমার নায়ক, তাঁকে ঘিরেই গোটা গল্প। সিনেমার শুরু সরমন আর এক কুমীরের নদীতে ‘ডু অর ডাই’ অ্যাকশন সিকোয়েন্স দিয়ে। তার পর সেই জলের কুমীরকে মেরে ডাঙায় নিয়ে যাওয়া!

এ হেন বাহুবলী সরমনের ‘এক শৃঙ্গের’ ঘোড়াকে নিয়ে স্বপ্ন এবং তাঁর কারণ খুঁজতে ‘আমরি’ টু ‘মহেঞ্জো দড়ো’ যাত্রা। নীল চাষে হাত পাকানো সরমন নীল বিক্রি করতে পাড়ি দিলেন ‘মহেঞ্জো দড়ো’। সঙ্গে নিলেন কাকা দুর্জনের (নীতীশ ভরদ্বাজ) দেওয়া একটা ‘এক শৃঙ্গ’ ছাপ মারা ধাতুর সিলমোহর। তার পর কয়েকশো বলিউডিশ সিনেমার মতোই গরিব সরমনের প্রেম হয় বড়লোক বাবা পূজারী (মনিশ চৌধুরী)-র মেয়ে চানির (পূজা হেগড়ে) সঙ্গে। বিনিময় প্রথা তখন প্রচলিত, নায়কের সঙ্গে নায়িকার দেখা হল ‘মহেঞ্জো দড়ো’ বাজারে, যেখানে সরমন নীল বেচতে এসেছে। প্রেম জমছে, এবং তাঁর পাশাপাশি সরমন ‘গরিবের বন্ধু’ এবং ‘ধনীর শত্রু’ হয়ে উঠছেন। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের প্রতিবাদ করে ইতিমধ্যে মুঞ্জার (অরুন্দয় সিংহ) ব্ল্যাক-লিস্টে উঠে গিয়েছে সরমনের নাম।

গল্প এগোয় এবং সরমন জানতে পারে, তার বাবার মৃত্যুর আসল কারণ। কী ভাবে তার বাবার হত্যা-কাণ্ডে, কাকা এবং পূজারী বাধ্য হয়েছিল মহমের (কবির বেদি) সঙ্গ দিতে। ছবির শেষ পর্যায়ে সরমন বাবার মৃত্যুর বদলা এবং জনগণের সেবা দুই লক্ষ্যেই সফল হন। বাঁধ এর জল মুশল বৃষ্টিতে উপচে পড়ার আগেই নিজেকে এবং দু’জনকে ছাড়া ‘মহেঞ্জো দড়ো’র প্রত্যেকের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন। যাদের মধ্যে এক জন মহম (সরমনের বাবার হত্যাকারী), দ্বিতীয়জন পাগলা দাশুর মতো দেখতে এক জ্যোতিষ যিনি ‘জিনা ইহাঁ মরনা ইহাঁ’ কথাটিতে বিশ্বাসী।

সিনেমার শুরু হয় অদ্ভুত এক ভাষা দিয়ে, যা বোধগম্য হওয়ার মতো নয় এবং কয়েক দৃশ্য পরেই হঠাৎ এক চরিত্রের ঠোঁটে ক্যামেরা জুম হয় এবং তার সঙ্গেই ভাষাটি পাল্টে যায় হিন্দিতে! সেই একই ভাষা শোনা যায় নায়িকার গানে, কিন্তু পর মুহূর্তেই সংলাপ-দৃশ্যে সে ভাষার কোনও নাম-গন্ধ নেই! এহেন কিম্ভুত ভাষাটি ছবিতে রাখার কারণ জানা যায়নি। ছবির মাঝে ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ গানটি গুনগুন করে গেয়ে উঠতেই পারেন যখন দেখবেন সরমনের বাবা সুর্জন (শারাদ কেল্কার) তাঁর ভাই দুর্জনকে নিয়ে সিন্ধু নদীর ওপর নির্মিত একটি গোটা বাঁধ ভাঙতে উদ্যত হয়। ছবির অন্য এক অংশে এও মনে হতে পারে আশুতোষেরই আগের ছবি ‘যোধা আকবর’ এর একটি দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। তফাৎ? ওটায় আকবর লড়েছিলেন এক হাতির সঙ্গে এখানে সরমন লড়ছে দুই ‘নরখাদক’ মানুষের সঙ্গে! যাই হোক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় আর দুই সিনেমাই যখন ইতিহাসকেন্দ্রিক! তা হলে তো হয়ই! (যা জানিয়েছিলেন খোদ পরিচালকই)!

ছবিটিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে রহমান-মেলোডি, হৃতিকের নাচ, ভি.এফ.এক্স-এর অসামান্য কাজে ফুটে ওঠা গোটা ‘মহেঞ্জো দড়ো’, সিনেম্যাটোগ্রাফি, ঢিশুম ঢিশুম দৃশ্যগুলো এবং কিছুটা হলেও সুন্দরী পূজার চলন-বলন-কওন। আশুতোষের গোটা গল্পটি ‘থোর বড়ি খাঁড়া’ আদলে হলেও ‘মহেঞ্জো দড়ো’ যে সত্যিকারের ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ এক পরিবেশ তৈরি করতে পারে তা অনুভব করা যায়।

সিনেমার শেষে সিন্ধু নদীর নাম পাল্টে গঙ্গা হয়ে গেল কী ভাবে! এটা জানতে হলে ‘মহেঞ্জো দড়ো’ দেখা যেতেই পারে।

Mohenjodaro Hrithik Roshan Pooja Hegde Ashutosh Gowariker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy