Advertisement
E-Paper

সকলকে ছাপিয়ে গেলেন সুদীপ্তা

প্রসেনজিৎ ও পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের হ্যাটট্রিক ছবি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এর মূল সুর বাঁধা উল্লিখিত দৃশ্যটিতে। সুপারস্টার দাদা ও নাট্যশিল্পী ভাইয়ের মান-অভিমান, অহং বোধের ঠোকাঠুকি, অধিকারবোধ ও দায়িত্বপালনের দ্বন্দ্ব ঘিরে কাহিনি সাজিয়েছেন কৌশিক।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

ব্যালকনির সামনে সাধারণ মানুষের জমায়েত। তারা চায় সুপারস্টার ইন্দ্রজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (প্রসেনজিৎ) এক ঝলক। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর কালো চশমা পরে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় নায়ক। অনুরাগীদের উদ্দেশে হাত দেখায়। পাশে অশৌচের বেশে দাঁড়িয়ে তার নিজের ছোট ভাই পার্থ (ঋত্বিক)। কিছুক্ষণ পরে জনতার উদ্দেশে পার্থ বলে, ‘অনেক হয়েছে, এ বার যান...’

প্রসেনজিৎ ও পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের হ্যাটট্রিক ছবি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এর মূল সুর বাঁধা উল্লিখিত দৃশ্যটিতে। সুপারস্টার দাদা ও নাট্যশিল্পী ভাইয়ের মান-অভিমান, অহং বোধের ঠোকাঠুকি, অধিকারবোধ ও দায়িত্বপালনের দ্বন্দ্ব ঘিরে কাহিনি সাজিয়েছেন কৌশিক। মূল ভাবনা ঋতুপর্ণ ঘোষের। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি ক্যাথারসিসের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ছবির গতি যেন আটকে গিয়েছে। এবং সেখান থেকে ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত যাত্রাপথে আবেগের কোনও উত্তরণ ঘটেনি। ছবির শেষেও তাই মনে পড়ে যায় বিরতির আগের দৃশ্যটি। মানসিক ভারসাম্যহীন বোন ইলা (সুদীপ্তা) নিজের খেয়ালে নৃত্যরত। অপলক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে পরিবারের নায়ক জ্যেষ্ঠপুত্র।

ইন্দ্রজিৎ ও পার্থের দৃশ্যগুলি ততটা ধাক্কা দেয় না, যতটা দাগ কেটেছে ইলার সঙ্গে দুই ভাইয়ের আলাদা আলাদা দৃশ্য। বলতে দ্বিধা নেই, জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ পুত্রের মাঝে এই ছবির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পরিবারের ‘মেজো’। পরপর কয়েকটি ছবিতে যে মাপের কাজ করলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী, তাতে তিনি যে কোনও পরিচালকের গর্ব, যে কোনও ছবির সম্পদ। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির চরিত্র আগেও অনেকে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার সুদীপ্তার যে নিজস্ব শৈলী, তা সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর।

জ্যেষ্ঠপুত্র
পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়: প্রসেনজিৎ, ঋত্বিক, সুদীপ্তা, গার্গী, দামিনী
৬/১০

জ্যেষ্ঠপুত্রের চরিত্রে প্রসেনজিতের অভিনয় সংযত, সুন্দর। তবে সংলাপহীন যে দৃশ্যগুলিতে ক্যামেরার লেন্স ক্লোজ় আপে ফলো করেছে তাঁর ব্যথাতুর চোখ দু’টি, তা সংলাপ থাকা দৃশ্যের চেয়ে অনেক বেশি বাঙ্ময়। এর জন্য সিনেম্যাটোগ্রাফার শীর্ষ রায়েরও অভিবাদন প্রাপ্য। ঋত্বিক চক্রবর্তীও ভাল। তবে তাঁর চরিত্রায়নে আরও কিছু শেড যোগ করলে হয়তো দৃশ্যগুলিও অন্য রকম হতে পারত। গার্গী রায়চৌধুরী ও দামিনী বসু তাঁদের চরিত্রে অসামান্য।

ছবির প্রতিটি চরিত্রের লুক নজর কেড়েছে। অসাধারণ, গ্ল্যামারাস ইন্দ্রজিতের পাশে অতি সাধারণ পার্থের বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে তাদের পোশাকে এবং মেকআপেও। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গীত ছবির আবহের সঙ্গে মানানসই।

দুই ভাইয়ের মতানৈক্যের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে সিনেমা ও নাটক, পপুলার কালচার ও উচ্চমার্গের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব। দাদার উদ্দেশে পার্থের বারবার করে বলা সংলাপ ‘আমি তোর চেয়ে ভাল অভিনেতা...’ দেখিয়ে পরিচালক যেন আমজনতার মতামতকেই পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছেন। ইন্দ্রজিতের অনেক সংলাপকেই মনে হবে ব্যক্তি প্রসেনজিতের নিজের কথা। এই এক্সপেরিমেন্ট যতটা ভাল, ততটাই আরোপিত লেগেছে ইন্দ্রজিতের পিআর মেয়েটির পদবির সঙ্গে অন্য সিনেমাহলের নাম মিলিয়ে মিলিয়ে বলার সংলাপটি।

চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক কৌশিক এই ছবিতে খানিক হতাশ করলেন। অন্যের ভাবনাকে রূপ দিতে গিয়ে হয়তো সেই ভাবনার অন্তর্নিহিত ম্যাজিক ধরতে পারেননি তিনি। চরিত্রগুলির অস্বস্তির দীর্ঘশ্বাসে অধরা ছবির উত্তরণও। যদিও‌ ছবির শুরুতেই প্রতিম ডি গুপ্তকে স্বীকৃতি দিয়ে চিত্রনাট্য বিতর্কে যবনিকা টেনে স্বস্তির হাঁফ ছেড়েছেন ছবির নির্মাতারা!

Jyeshto Putra Movie Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy