Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Shororipu 2: Jotugriho

Shororipu 2: রহস্য আছে, কিন্তু গতিপথ বন্ধুর

ছবির প্রথমেই গল্পের মূল চরিত্র দেবরাজ সেনের (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) লাশ পাওয়া যায় বন্ধ ঘরে। সেখান থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে চলতে থাকে সিনেমা।

নবনীতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৪৮
Share: Save:

একটা খুন ও তার তদন্ত... হুডানইট জ়ঁরের এই ছবিতে রহস্যের সঙ্গে মিশেছে জটিল মনস্তত্ত্ব। ‘খুন কে করেছে?’-র চেয়েও প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায় খুনের মোটিভ? এবং কী ভাবে তা হয়েছে? তবে শুধু রহস্যেই ছবিকে আটকে রাখেননি পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী, তার সমান্তরালে একটা সম্পূর্ণ গল্প বুনেছেন ‘ষড়রিপু টু: জতুগৃহ’-তে।

ছবির প্রথমেই গল্পের মূল চরিত্র দেবরাজ সেনের (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) লাশ পাওয়া যায় বন্ধ ঘরে। সেখান থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে চলতে থাকে সিনেমা। দেবরাজের তৃতীয় স্ত্রী মেঘা (অরুণিমা ঘোষ) ও দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা তিথি ছুটি কাটাতে যায় পাহাড়ে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে উদ্ধার করে দেবরাজের মৃতদেহ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত সেন (চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী)। তদন্তের সূত্র ধরে রহস্যের পরত খুলতে থাকে। চরিত্রদের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করেন দর্শক। ঠিক যে ভাবে গোয়েন্দা অজানা কেস হাতে নিয়ে এগোতে থাকে, দর্শকও সে ভাবে ক্রমশ কাহিনির গভীরে পৌঁছন।

তবে সেই জার্নির কিছু জায়গা আর একটু স্পষ্ট হলে দর্শকের সুবিধে হত। প্রথমার্ধে কাহিনি এত বার বাঁক নেয় যে, ছবির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। তদন্তের মাঝে চন্দ্রকান্ত সেনের সহকারীর সঙ্গে চটুল কথোপকথনে বিরক্তির উদ্রেক ঘটে। প্রথমার্ধের তুলনায় ছবির দ্বিতীয়ার্ধ অনেক পরিণত।

‘ক্লোজ়ড ডোর’ মার্ডারের প্রেক্ষাপটে পাহাড়ি পাকদণ্ডী রেখে স্বস্তি দিয়েছেন অয়ন। পাহাড়ি বন্ধুর পথে পুরনো প্রেমের গল্প বুনেছেন, যা বেশ ভাল লাগে। ছবির চরিত্ররাও যেন রক্তমাংসের। কোনও চরিত্রই সাদা-কালোয় এঁকে দেননি পরিচালক। প্রত্যেকের চরিত্রেই ধূসর পরত রয়েছে। আর তা সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতারা। দেবরাজের চরিত্রে শাশ্বত বেশ ভাল। মেঘার শান্ত, স্থিতধী চরিত্রেও সুন্দর মানিয়ে গিয়েছে অরুণিমাকে। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নজর কেড়েছেন রণজয় বিষ্ণু। চিরঞ্জিৎ যথাযথ। দর্শনাও স্বল্প পরিসরে ভাল কাজ করেছেন।

ষড়রিপু টু: জতুগৃহ
পরিচালনা: অয়ন চক্রবর্তী
অভিনয়: চিরঞ্জিৎ, শাশ্বত, অরুণিমা, দর্শনা, রণজয়
৫.৫/১০

প্রশংসা করতে হয় ছবির গানের। বিশেষত, পাহাড়ি নদীর ধারে সাহানা বাজপেয়ীর খালি গলায় ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’ গানটি অসাধারণ। ছবির সেরা দৃশ্যায়নও এই গান জুড়েই। ছবির গান ভাল হলেও অরুণিমা বা দর্শনার (বণিক) লিপে মানায়নি। গানের সময়ে যে আর্তি বা গলার ওঠানামা থাকে, তা ধরা পড়েনি অভিনয়ে।

চোখে লাগে গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত সেনের সহকারী সানি চরিত্রটিকে। কমিক রিলিফ দেওয়ার জন্য হয়তো এ ধরনের চরিত্রের অবতারণা, কিন্তু তা ছবির মেদবৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুতেই সহায়ক হয়নি। ছবির কিছু সংলাপও মেয়েদের পক্ষে বেশ অপমানজনক। ‘মেয়েরা বাচ্চা হয় না, বাচ্চা দেয়’, ‘ছেলেদের নাম সানি হলে সানি, মেয়েদের নাম সানি হলে শনি’... এই ধরনের স্থূলমানের সংলাপের কি কোনও দরকার ছিল? রহস্যগল্পে গোয়েন্দার চরিত্রকেও সে ভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। চন্দ্রকান্ত সেনের চরিত্রায়ণে আরও গুরুত্ব প্রয়োজন ছিল।

জটিল মনস্তত্ত্ব, রহস্য থাকলেও থ্রিলারের মূল আকর্ষণ এর বুননে। সেখানেই খামতি রয়ে গেল! তবে চরিত্রদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কিছুটা সুযোগ করে দিয়েছেন পরিচালক। প্রাপ্তি সেটুকুই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shororipu 2: Jotugriho cinema review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE