Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Hollywood

অতিরঞ্জনে খেই হারাল স্বপ্নপূরণের রূপকথা

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

সিনে দুনিয়া ‘অস্কার্স সো হোয়াইট’ বিতর্ক দেখেছে খুব বেশি দিন হয়নি। আর ‘হোয়াইটওয়াশিং ইন ফিল্ম’ দিয়ে সার্চ করলে গুগলে আস্ত একটা উইকিপিডিয়া পেজই খুলে যাবে। কাজেই কালো চামড়া কিংবা মঙ্গোলীয় ধাঁচের মুখদের মেনস্ট্রিম হলিউডে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই বহু পুরনো হলেও এখনও অব্যাহত। সেই সঙ্গে ফিল্মমেকিংয়ে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব, সমকামিতা নিয়ে ছুঁতমার্গ-সহ বহু চর্চিত কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে ওয়েব সিরিজ় ‘হলিউড’-এ। রায়ান মার্ফি পরিচালিত এই নেটফ্লিক্স অরিজিনাল সিরিজ় মূলত বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের হলিউডে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে আসা কিছু ছেলেমেয়েকে ঘিরে। বিখ্যাত হলিউডল্যান্ড সাইনের উপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করা ব্রিটিশ অভিনেত্রী পেগ এন্টহুইসলের জীবন-আধারে ছবি করতে চায় এই তরুণ তুর্কিরা। সেই দলে রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গী নায়িকা থেকে সমকামী চিত্রনাট্যকার। সকলেই পায়ের তলায় জমি খুঁজছে। পেগের স্বপ্নের অকালমৃত্যুর সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারে তারা। যদিও আত্মহত্যার মতো ট্র্যাজেডিতে শেষ হয় না তাদের কাহিনি। আর এখানেই ঘোর বাস্তব আর চূড়ান্ত ফ্যান্টাসি মেলাতে গিয়ে অলীক কল্পনায় পর্যবসিত হয়েছে ‘হলিউড’।

গল্প শুরু হয় হলিউডের এক ফিলিং স্টেশনকে ঘিরে, যার আড়ালে চলে দেহব্যবসা। গাড়িতে গ্যাস বা ফুয়েল ভরতে আসা কাস্টমারদের ‘ড্রিমল্যান্ড’-এ নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে স্টেশনের কর্মীরা পকেটভর্তি করে। তাদের আসল উদ্দেশ্য অন্য। কেউ নায়ক, কেউ চিত্রনাট্যকার, কেউ পরিচালক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে হলিউডে এসেছে। পায়ের তলায় জমি খোঁজার লড়াইয়ে সোজা পথ সহায় হয় না তাদের। এ ভাবেই হলিউডের নামী স্টুডিয়োর দরজায় শয়ে শয়ে স্বপ্ন আছড়ে পড়ার গল্প দিয়েই শুরু হয় কাহিনি। নিজের লড়াই লড়তে লড়তে মুখগুলো কখন যেন এক হয়ে যায়। পেগ এন্টহুইসলের চরিত্র নির্মাণে উঠে আসে এক কালো মেয়ে, যে কিনা এত দিন শুধু পরিচারিকার চরিত্রই পেয়েছে। তাকে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে নিজেকে হাস্যস্পদ করে তুলতে হত ক্যামেরার সামনে। ছবির নাম ‘পেগ’ থেকে পাল্টে করে দেওয়া হয় ‘মেগ’, পাল্টে দেওয়া হয় এন্ডিংও। হলিউডল্যান্ড সাইনের উপরে দাঁড়িয়ে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মেগ ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। প্রেমিকের হাত ধরে ফিরে আসে জীবনে।

হলিউড (ওয়েব সিরিজ়)

ক্রিয়েটর: রায়ান মার্ফি, ইয়েন ব্রেনান

অভিনয়: ডেভিড, ড্যারেন, ডিলান, জেরেমি, লরা, হল্যান্ড

৫/১০

ছক ভাঙতে নারাজ নামী স্টুডিয়োকর্তা, তার অংশীদারিত্বে সমানাধিকার চাওয়া স্ত্রী, স্ট্রাগলারদের অসহায়তার সুযোগসন্ধানী ট্যালেন্ট এজেন্ট, স্বীকৃতি না পাওয়া এশীয় অভিনেত্রীর হতাশা— ‘হলিউড’ অনেক চেনা ক্রাইসিস তুলে ধরেছে। তবে তার চড়া দাগের বিনির্মাণই এ সিরিজ়ের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। বর্ণ-জাতি-লিঙ্গবৈষম্য, কেরিয়ারে ওঠার দুর্বিপাকে প্রেমে ভাঙন, অবদমিত সমকাম— এক গল্পে এত বিপ্লব না ঘটালেই পারতেন নির্মাতারা। গল্পের শেষে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে যখন প্রত্যাশিত ভাবেই একের পর এক অস্কার উঠছে ‘হ্যাভ নটস’দের হাতে, সেই আবেগ দর্শককে ছুঁয়ে যায়। তবে এমনটা যে ঘটবে, তা সিরিজ়ের গোড়া থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ছত্রে ছত্রে। সেখানেই নম্বর কমে যায় সিরিজ়ের।

যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই এ গল্প যুগে যুগে সত্যি। তাই বুদ্ধিদীপ্ত রিপ্রেজ়েন্টেশন ছাড়া এই কাহিনি পুনরাবৃত্তির দোষে দুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর সেটাই হয়েছে এখানে। গল্প বলার ধাঁচটা ‘ইট প্রে লাভ’-এর মতো মিষ্টি রাখতে চেয়েছিলেন রায়ান। তবে ক্যামেরা চার দেওয়ালের বাইরে প্রায় না বেরোনোয় মাঝেমাঝে দমবন্ধকর লাগে। মূল্যবোধের পাঠও সিরিজ়ের পরতে পরতে।

মুখ্য চরিত্রে লরা হারিয়ার, জেরেমি পোপের অভিনয় ভীষণ প্রাণবন্ত, তাই মন ছুঁয়ে যায়। ‘স্পাইডারম্যান: হোমকামিং’-এর পরে আরও একবার মূল সারির চরিত্রে উঠে এলেন লরা। ফিলিং স্টেশনের মালিকের চরিত্রে ডিলান ম্যাকডার্মটও তুখড়। গে বারে একাকিত্বে ভেঙে পড়া ডিক স্যামুয়েলসকে জীবন্ত করে তুলেছেন জো ম্যান্টেলো। ট্যালেন্ট এজেন্টের ভূমিকায় জিম পার্সনস মনে করালেন বলিউডের নামী প্রযোজককে।

স্বপ্নপূরণের কাহিনি সব সময়েই উপভোগ্য। তবে ‘হলিউড’-এর উদ্দেশ্যে চোনা ফেলে দিল তার অতিরঞ্জনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hollywood Netflix Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE