ফুটবল পায়ে তখন জাত চেনাতে শুরু করেছে এক বালক। ছোট ক্লাবের জুনিয়র দলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। সেই সময়ে সাক্ষাৎকার নিতে এসে টিভি চ্যানেল জানতে চেয়েছিল, সামনে তার স্বপ্ন কী? খুদে ‘পেলুসা’র জবাব ছিল, ‘‘আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা। তার পরে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে খেলা।’’
ভিলা ফিওরিতো নামক ছোট্ট শহরে রেললাইনের ধারের বস্তি থেকে যে স্বপ্নের উড়ান শুরু, বার বার এয়ার পকেটে পড়ে, নানা দুর্যোগে গোঁত্তা খেয়েও সে উড়ান গন্তব্যে পৌঁছেছিল এক দিন। যুদ্ধ এবং সামরিক শাসন-পীড়িত আর্জেন্টিনাকে একার দক্ষতায় বিশ্বকাপ এনে দেওয়াকে গন্তব্যে পৌঁছনো বলতে যদি অসুবিধে না থাকে! স্বপ্নকে অমর করে রেখেও স্বপ্নের মালিকের ক্ষতবিক্ষত যাত্রা অবশ্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গত নভেম্বরে। তার ঠিক এক বছর পরে সেই স্বপ্নের উল্টো পিঠের গল্প নিয়ে এসেছেন আলেজ়ান্দ্রো আইমেত্তা। তাঁর ‘মারাদোনা: ব্লেস্ড ড্রিম’ ওয়েব সিরিজ়ে, যা চলছে অ্যামাজ়ন প্রাইমে।
ফিওরিতোর সেই ‘পেলুসা’ কী ভাবে হয়ে উঠেছিল দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা নামক এক কিংবদন্তি, সে গল্প বলা হয়েছে অনেক বার। বিশ্ব জুড়ে অজস্র তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে মারাদোনাকে নিয়ে। কিন্তু আইমেত্তার গল্পটার ধরন আলাদা। দেবতার আসনে রেখে মারাদোনার আরাধনায় নামেননি তিনি। বরং, সুপারহিরোর যাবতীয় মোড়ক ছাড়িয়ে মাঠের বাইরে বেপরোয়া মারাদোনার সব রকমের কাণ্ড-কারখানাকে ক্যামেরায় কাটাছেঁড়া করেছেন। দিগ্ভ্রষ্ট এক রাজপুত্রের খেই হারানো জীবনের নির্মোহ ময়নাতদন্ত বলা যেতে পারে আইমেত্তার মারাদোনাকে। সুপারস্টারদের নিয়ে যে ধরনের বায়োপিক দেখতে এখানে আমরা অভ্যস্ত, সেই গৎ থেকে বহু যোজন দূরত্বে অবস্থান এই অসম সাহসী ওয়েব সিরিজ়ের।