Advertisement
E-Paper

তোমার মন নাই, ছবি? কেবলই বীরত্বের আস্ফালন? ‘ছাওয়া’ ছবিতে গল্পই বাড়ন্ত!

সম্ভাজির স্ত্রী যেশুবাই-এর চরিত্রে রশ্মিকা মন্দানার হিন্দি উচ্চারণ আগের চেয়ে খানিক স্পষ্ট হলেও, তাঁর চিবিয়ে সংলাপ বলার অভ্যাস যায়নি।

কেমন হল ভিকি কৌশল অভিনীত ‘ছাওয়া’?

কেমন হল ভিকি কৌশল অভিনীত ‘ছাওয়া’? ছবি: সংগৃহীত।

দেবত্রী ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৫
Share
Save

ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছেছে ঔরঙ্গজেবের দরবারে। প্রজারা সকলে খুশি, কারণ মরাঠা সাম্রাজ্যের পতন এ বার অবশ্যম্ভাবী। খবর পেয়ে চোখ বুজে চুপ করে খানিক বসে রইলেন সম্রাট। তার পর বিড়বিড় করে বললেন, “আল্লাহ, অপনি জন্নত কা দ্বার খুলা রখনা। শের আ রহা হ্যায়।“ (আল্লাহ, স্বর্গের দ্বার খোলা রাখবেন। সিংহ আসছে।) ছত্রপতির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে উৎসব তো হবেই, কিন্তু ক্ষোভের সঙ্গে এ-ও বলতে ভুললেন না সম্রাট, যে শিবাজীর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায় কেবল ভাগ্য করে।

লক্ষ্মণ উটেকর পরিচালিত ছবি ‘ছাওয়া’ অবশ্য শিবাজীর গল্প নয়। এই ছবির মূল চরিত্র শিবাজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজিরাজে শিবাজীরাজে ভোঁসলে বা মরাঠা রাজ্যের দ্বিতীয় ছত্রপতি সম্ভাজিকে (মূলত তাঁর নয় বছরের রাজত্ব) কেন্দ্র করে। শিবাজী সাওয়ান্ত-এর লেখা মরাঠি উপন্যাস ‘ছাওয়া’ থেকেই নেওয়া হয়েছে এর গল্প।

প্রায় দু’ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ছবি। ছবির শেষে বন্দি সম্ভাজির মুখে এক বিশাল শক্তিশালী সংলাপ শোনার পর ঔরঙ্গজেব বললেন, ‘মজ়া নহি আয়া’। ছবির শেষে দর্শকেরও একই কথা মনে হতে বাধ্য। গোটা ছবি জুড়ে কেবল যুদ্ধ আর রক্তপাত। এ ছবির মন তো নেই-ই, বিশেষ কোনও গল্পও নেই। এই নয় বছরের রাজত্বে সম্ভাজি শুধু কী ভাবে একের পর এক যুদ্ধ জিতেছেন, আর শাহজাহান-পুত্রকে অশান্তিতে রেখেছেন, এই ছবি যেন শুধু সেটুকুরই দলিল।

সম্ভাজির স্ত্রী যেশুবাই-এর চরিত্রে রশ্মিকা মন্দানার হিন্দি উচ্চারণ আগের চেয়ে খানিক স্পষ্ট হলেও, তাঁর চিবিয়ে সংলাপ বলার অভ্যাস যায়নি।

সম্ভাজির স্ত্রী যেশুবাই-এর চরিত্রে রশ্মিকা মন্দানার হিন্দি উচ্চারণ আগের চেয়ে খানিক স্পষ্ট হলেও, তাঁর চিবিয়ে সংলাপ বলার অভ্যাস যায়নি। ছবি: সংগৃহীত।

অর্থাৎ, কেউ যদি সম্ভাজির জীবনীচিত্র দেখবেন বলে প্রেক্ষাগৃহে আসেন, তিনি হতাশ হবেন। এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন, লক্ষ্মণ উটেকর, ঋষি ভিরমানি, কৌস্তুভ সাভারকর, উন্মান ভানকর এবং ওঙ্কার মহাজন। ছবির নাম ‘ছাওয়া’, যার অর্থ সিংহশাবক। অথচ ছবির প্রথম দিকে সম্ভাজি (যাকে এই ছবিতে সিংহশাবক) বলা হচ্ছে, তিনি যুদ্ধে এক সিংহের মুখোমুখি হয়ে, তাকে মেরে ফেলছেন অনায়াসে। এমনধারা রূপক দিয়ে লেখক ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন, সেই উত্তর শুধুমাত্র তাঁদের কাছেই মিলবে।

যত বার মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাচ্ছেন, তত বার উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে যাচ্ছেন যে, মরাঠাদের লড়াই কোনও বিশেষ জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়— তাঁদের যুদ্ধ শুধুমাত্র যারা স্বরাজের শত্রু, তাদের বিরুদ্ধে। এ-হেন সংলাপ থাকলেও কর্মে তার বিশেষ প্রতিফলন ঘটছে না। নায়ক সকল ভুলের ঊর্ধ্বে— তা দেখাতে গিয়ে অপর পক্ষকে চরম হিংস্র ও নীচ দেখাতে যেন বদ্ধপরিকর হয়েছেন পরিচালক। যার ফলে ছবিতে তথ্যের গলদও দেখা দিয়েছে (যাঁরা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা অনায়াসে ধরতে পারবেন) ।

এক ধরনের চিন্তাধারা দর্শকের মনে প্রতিষ্ঠা করার এই যে প্রচেষ্টা, তা আগেও বেশ কিছু ঐতিহাসিক ধারার সিনেমায় দেখা গিয়েছে। ‘ছাওয়া’ও এর ব্যতিক্রম হতে পারেনি, বা হতে চায়নি। আর এর প্রতিফলন ঘটেছে অভিনয়েও।

সম্ভাজির চরিত্রের জন্য ভিকি কৌশল যে পরিশ্রম করেছেন, তাঁকে পর্দায় দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। শরীরের ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কেজিরও বেশি। শ্মশ্রু-গুম্ফ, রাজবেশে, যুদ্ধের বর্মে তাঁকে দেখতেও লেগেছে ছত্রপতির মতোই। যুদ্ধের দৃশ্যে যতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করা উচিত, ততটাই করেছেন। কিন্তু যে ছবিতে গল্পই বাড়ন্ত, সেখানে তাঁর অভিনয় কেবল যুদ্ধশস্ত্র প্রদর্শনে আর আস্ফালনেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে ঔরঙ্গজেব-রূপী অক্ষয় খন্নারও। তাঁর বেশির ভাগ সংলাপ প্রবল আবহসঙ্গীতের ঠেলায় কর্ণগোচর হওয়াই দুঃসাধ্য। শ্রীকান্ত দেশাইয়ের রূপটানে ঔরঙ্গজেবের বার্ধক্য আর দুর্বল চেহারা ফুটে উঠেছে ভাল। আর অক্ষয় শুধুমাত্র তাঁর চোখের চাহনি আর হাঁটাচলার মধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, ছবির চিত্রনাট্য তাঁর চরিত্রের প্রতি অনীহা দেখালেও, তিনি চৌখস অভিনেতা। সম্ভাজির স্ত্রী যেশুবাই-এর চরিত্রে রশ্মিকা মন্দানার হিন্দি উচ্চারণ আগের চেয়ে খানিক স্পষ্ট হলেও, তাঁর চিবিয়ে সংলাপ বলার অভ্যাস যায়নি। বরং ছোট দু’টি চরিত্রে আশুতোষ রানা ও নীল ভূপলমকে ভাল লাগে। ডায়ানা পেন্টি ও দিব্যা দত্তের বিশেষ কিছু করার ছিল না।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

পরিচালক লক্ষ্মণ উটেকর নিজেই আগে চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তার ফলে, গোটা ছবির চিত্রগ্রহণের দিকে তাঁর কড়া নজর ছিল। আলো-ছায়া, মেটে প্যালেট— সব মিলিয়ে সৌরভ গোস্বামী যুদ্ধের দৃশ্যগুলি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। এআর রহমানের আবহসঙ্গীতে কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কিছু কিছু দৃশ্যে।

ঔরঙ্গজেবের সেনাদের হাতে সম্ভাজির বন্দি হয়ে আসা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় পুরোটাই মেল গিবসন-এর ‘দ্য প্যাশন অফ দ্য ক্রাইস্ট’ থেকে নেওয়া হয়েছে। অনুভূতির ঘাটতি থাকায় গোটা ছবির বেশির ভাগটাই অন্তঃসারশূন্য মনে হয়। ফলে, ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ক্যানভাস তৈরি করা সত্ত্বেও লক্ষ্মণ উটেকর যে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘পিরিয়ড ড্রামা’ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে, তা এখানে স্পষ্ট।

Vicky Kaushal Rashmika Mandanna Akshay Khanna Chhaava

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}