Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
OTT platform

অভিনয়ে রসোত্তীর্ণ

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা, গেরুয়া শক্তির উত্থান এই গল্পের চালিকা শক্তি।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

দ্য ম্যারেড উওম্যান
পরিচালনা: সাহির রাজ়া
অভিনয়: ঋদ্ধি, মণিকা, সুহাস, ইমানুদ্দিন, আয়েশা
৬/১০

গল্পটি নব্বইয়ের দশকের। দিল্লির এক সাধারণ বাড়ির বৌ আস্থা কপূর (ঋদ্ধি ডোগরা) কলেজের অধ্যাপিকাও বটে। স্বামী হেমন্তের (সুহাস আহুজা) সঙ্গে শ্বশুর-শাশুড়ি, দুই সন্তান নিয়ে তার সাদামাঠা সংসার। আস্থার জৈবিক-পারিবারিক সব চাহিদাই পূর্ণ করে হেমন্ত। কিন্তু অতিথিদের সঙ্গে বৌকে আলাপ করাতে গিয়ে সে বলে, ‘আস্থার হাতের কচুরি দারুণ খেতে।’ একটিবারও সে বলে না, রোজগেরে গিন্নি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা। এই না-বলার পিছনে যে কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে, ঠিক তা নয়। তবে এগারো বছরের দাম্পত্যে এমন প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠে, যখন আস্থা আবিষ্কার করে তার ধুলো পড়ে যাওয়া সত্তা, তার উভকামী যৌন প্রবৃত্তিকে। কলেজে নাটকের শিক্ষক এজ়াজ় খানের (ইমানুদ্দিন শাহ) মুক্ত জীবনবোধ, প্যাশন আকৃষ্ট করে আস্থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে গাড়ি-বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এজ়াজ়ের। পরে তার বিধবা স্ত্রী পিপলিকাই (মণিকা ডোগরা) হয়ে ওঠে আস্থার লক্ষ্মণরেখা লঙ্ঘনের কারণ, তার আত্মার দোসর।

মঞ্জু কপূরের লেখা উপন্যাস ‘আ ম্যারেড উওম্যান’ অবলম্বনে জ়ি ফাইভ ও অল্ট বালাজির ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য ম্যারেড উওম্যান’। পরিচালক সাহির রাজ়া। যে ছকভাঙা কনটেন্টের জন্য ওয়েবের সমাদর, এই গল্প সেই ধারার অনুসারী। নারীমনের জটিলতা, সমকামিতা, সম্পর্কের ওঠা-নামা নিয়ে আগেও অনেক ছবি হয়েছে। তবে ওয়েবের দৌলতে লাইমলাইট পাচ্ছেন নতুন মুখেরা। আস্থার চরিত্রে ছোট পর্দার অভিনেত্রী ঋদ্ধি অনবদ্য। তবে সিরিজ় হিসেবে কিছু খামতিও আছে।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা, গেরুয়া শক্তির উত্থান এই গল্পের চালিকা শক্তি। গল্পে বারবার কারফিউ, ১৪৪ ধারা, রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বলা হয়। কিন্তু আদতে গল্পে তার প্রভাব পড়ে না। বিশেষত, রাজধানী দিল্লিতে দেশের যে কোনও প্রান্তের অস্থিরতার ঢেউ পড়তে বাধ্য। কিন্তু শেষের একটি ঘটনা ও সাধারণ উল্লেখ ছাড়া এই গল্পে রাজনৈতিক অনুষঙ্গ সম্পৃক্ত করা হয়নি।

গল্পের শুরু থেকেই আস্থা দর্শকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। সিরিজ় যত এগোয়, আস্থার সেই যোগাযোগ স্থাপন কমতে থাকে। সিরিজ়ের পরের পর্বগুলিতে আস্থার দর্শকের সঙ্গে কথোপকথনে নতুন কিছু থাকে না। ইতিমধ্যে যা দেখানো হয়েছে, তারই যেন পুনরাবৃত্তি তার কণ্ঠে। তাই এই ন্যারেটিভ ডিভাইসের ব্যবহারও গল্পে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সিরিজ়ের আর এক স্তম্ভ-শিল্পী মণিকা। কিন্তু ঋদ্ধি নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তাঁর পাশে মণিকাকে ফিকেই লাগে। আস্থার স্বামীর চরিত্রে সুহাস ভীষণ ভাল। ইমানুদ্দিন শাহ অতিথি-শিল্পী হিসেবে রয়ে যান। আস্থার ননদিনীর চরিত্রে আয়েশা রাজ়া ভাল।

সাহিরের সঙ্গে এই সিরিজ়ের সংলাপ লিখেছেন জয়া মিশ্র এবং সুরভি সারাল। কিন্তু পিপলিকার মুখে যে পরিমাণ মিলেনিয়াল শব্দ দেওয়া হয়েছে, তা নব্বইয়ের দশকের সঙ্গে বেমানান। আমেরিকা-ফেরত চরিত্র, ইংরেজি বেশি বলবে প্রত্যাশিত। কিন্তু শব্দচয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। পিপলিকার পোশাকও ওই সময়ের নিরিখে বেমানান।

থ্রিলার ও থ্রিলার হয়ে ওঠার চেষ্টায় বানানো সিরিজ়ের ভিড়ে সংবেদনশীল গল্প আশ্রিত সিরিজ়টি অভিনয়ের গুণে নজর কাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Web Series Bollywood OTT platform
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE