জীবন এখন কর্পোরেট। সম্পর্ক ভার্চুয়াল। ফলে, দেখাসাক্ষাৎ, আন্তরিকতা— অতীতের সোনালি স্মৃতি। সেই স্মৃতি হঠাৎই দুর্গা পুজোর আবহে ফিরে এলে? উৎসব বাড়িতে বাড়তি প্রাণের সঞ্চার কতটা হয়? কী পড়ে থাকে উৎসবের পরে? ২০১১-র প্রেক্ষাপটে সেই ঝলক উঠে আসছে পরিচালক অভিনন্দন দত্তের দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজ ‘উৎসবের পরে’-তে। আটটি পর্বে কলকাতার এক বনেদি বাড়ির পুজোয় দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের শাখা-প্রশাখা আবার এক ছাদের নীচে জড়ো হবেন। থাকবে ’৪৩, ’৭২ আর এখনকার রাজনৈতিক আবহও। আড্ডা টাইমসের এই সিরিজে থাকছেন কৌশিক সেন, বিমল চক্রবর্তী, সত্যম ভট্টাচার্য, ঐশ্বর্য সেন, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে।
সিরিজে কৌশিক পরিবারের এক ছেলে। যিনি নকশাল আমলে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন। পরে বদলে যায় তাঁর জীবন। কর্মসূত্রে তিনিই এখন প্রবাসী বাঙালি। পুজোয় কলকাতায় ফিরতেই ফিরে আসে তাঁর অস্বস্তিকর অতীত। তাকে ঢাকবেন না বয়ে বেড়াবেন? সিরিজ জুড়ে সেই দ্বন্দ্ব।
কিসের আকর্ষণে অভিনয়ে রাজি হলেন কৌশিক? অভিনেতার বক্তব্য, অযথা অ্যাডাল্টরি নেই। বাঙালিয়ানার গন্ধ মাখানো গল্প বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। সম্পর্ক, আত্মীয়তা নিয়ে এখন আর আগের প্রজন্মের মানসিকতার টানাপড়েন থাকবে না এখানে। এগুলোই তাঁকে আকর্ষণ করেছে।
কৌশিকের এক দাদার ছেলে ঋতব্রত ওরফে ‘ঋক’। ফিল্ম স্কুলে পড়ে। ছবি পরিচালনার স্বপ্নে বুঁদ ঋকের রাজনৈতিক মতাদর্শ বাড়ির অন্যদের থেকে ভীষণ স্ট্রং। ফলে, উৎসবকে ঘিরে লোক দেখানো গেট টুগেদার তার ভয়ানক নাপসন্দ, শুটের ফাঁকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে নিজের চরিত্র সম্বন্ধে জানালেন ঋতব্রত। সঙ্গে ছোট্ট সংযোজন, ‘‘কাকতালীয় ভাবে আমার ডাক নামও ঋক!’’
ছবিতে ঋতব্রত-র লুক
তাহলে নিশ্চয়ই রিল-রিয়েল ঋক এক? ‘‘প্রায় এক। পুরোটা নয়’’ সাফ জবাব ঋতব্রতের। ‘‘আমিও কলেজ গোয়ার্স। যাদবপুরে আমার চরিত্রের মতো দাদাদের দেখেছি। সিরিজের ঋকের মতো আমারও রাজনৈতিক মত রয়েছে। এবং কম কথার মানুষ’’, অকপট স্বীকারোক্তি। সিরিজের জন্য লুকটাও বদলেছেন নিজেই। বললেন, এমনিতেই লকডাউনে চুল-দাড়ি কাটতে পারেননি। সেই লুক কাজে লেগে গেল।
সিরিজে পরিবারিক গল্পের বুনোটে রাজনৈতিক আবহ খুব দরকার ছিল? প্রশ্ন রাখতেই অভিনন্দনের যুক্তি, যে কোনও পরিবারের মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য দায়ী রাজনীতি। সেটা বোঝাতেই পুজো, পরিবারের পাশাপাশি এই দিকও থাকছে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’ এই সিরিজের অনুপ্রেরণা? ‘‘২০ বছর আগে কলেজে পড়ার সময় ঋতুপর্ণের ছবিটি দেখেছিলাম। তারপরেই এই গল্প লিখি। অবশ্যই অনুপ্রাণিত। তাই ছবিটি প্রয়াত পরিচালককে উৎসর্গ করেছি। দু’একটি চরিত্র আর আবহে সামান্য মিল থাকলেও বাকিটা আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা’’ বক্তব্য, পরিচালকের।
করোনা আবহে পুজোয় নতুন ছবির বদলে নতুন সিরিজ দেখা যেতেই পারে। সেই ভাবনা মাথায় নিয়ে ‘উৎসবের পরে’র শুটিং জোর কদমে চলছে বেলগাছিয়া রাজবাড়িতে, জানালেন অভিনন্দন।