Advertisement
E-Paper

সম্রাট শশাঙ্ক

‘থ্রি ইডিয়টস’ দেখতে ভালবাসেন। লন্ডনে বেড়াতে না গিয়ে হোটেলে কাজ করেন। ঘড়ি পরেন না। আর গত পঁচিশ বছরে ছুটি মানে মহাবালেশ্বর। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন অধীশ্বর শশাঙ্ক মনোহর-কে নিয়ে নানা অজানা কথা লিখলেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়।‘থ্রি ইডিয়টস’ দেখতে ভালবাসেন। লন্ডনে বেড়াতে না গিয়ে হোটেলে কাজ করেন। ঘড়ি পরেন না। আর গত পঁচিশ বছরে ছুটি মানে মহাবালেশ্বর। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন অধীশ্বর শশাঙ্ক মনোহর-কে নিয়ে নানা অজানা কথা লিখলেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩০

সালটা ২০০১।

নাগপুর থেকে তখন বোর্ডের কাজে প্রায়ই মুম্বই যেতে হচ্ছে তাঁকে।

সেই সময়ের সিসিআই প্রেসিডেন্ট রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের নিমন্ত্রণে মুম্বইতে গেলে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয় ওই ক্লাবের দোতলার গেস্টরুমগুলোয়।

সে রকমই এক বিজনেস ট্রিপের ব্রেকফাস্ট টেবিলে রাজ সিংহের সঙ্গে দেখা আজকের বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের।

এমনিতে প্রথম দিন থেকেই শশাঙ্ক চোখে পড়ে গিয়েছিলেন রাজভাইয়ের। বোর্ডের মিটিংয়ে প্রথম সারিতে বসতে চেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি না করতে দেখে রাজ নাকি তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘খুব ভাল লাগল এটা দেখে যে সামনের রো-তে বসা নিয়ে আপনি হ্যাংলামো করলেন না। দেখবেন, একদিন সবচেয়ে বড় চেয়ার আপনার অপেক্ষায় থাকবে।’’

কাট টু ব্রেকফাস্ট টেবিল।

সেই টেবিলেই নাগপুরের অতিথিকে ঐতিহাসিক ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ার অনারারি মেম্বার হওয়ার প্রস্তাব দেন রাজভাই।

শশাঙ্কও প্রস্তাব শুনে হতচকিত। হ্যাঁ, না- কিছুই সঙ্গে সঙ্গে বলেননি। একদিন পরে নাকি তিনি রাজভাইকে বলেছিলেন, ‘‘সিসিআই-এর মেম্বারশিপ পাওয়ার জন্য দশ বছর ধরে অপেক্ষা করছে বহু মানুষ। সেখানে বোর্ডের কর্তা বলে আমি বিশেষ সুবিধে পেয়ে যাব, এটা ঠিক নয়। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, ওই অনারারি সদস্য আমি হতে পারব না।’’

এই হচ্ছেন শশাঙ্ক মনোহর। ন্যায়, নিয়ম আর সত্যের পথে থাকা ছাড়া যিনি আজ অবধি অন্য কোনও পথে হাঁটেননি।

সিসিআই-এর অনারারি মেম্বারশিপের গল্পটা কিন্তু ওখানেই শেষ হয়নি। দিন দশেক আগে বোর্ডের অফিসে একটা খাম পৌঁছয় শশাঙ্ক মনোহরের নামে। প্রেরক: ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়া।

চিঠির বক্তব্য, ‘‘ক্রিকেটকে দূষণমুক্ত করতে আপনি যা যা করেছেন তার জন্য আমাদের ক্লাব একটা রেজোলিউশন পাস করেছে। যাতে আপনাকে আমরা অনারারি মেম্বার করতে পেরে ধন্য।’’

সে দিন নাকি চিঠি পড়ে কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলেন শশাঙ্ক।

আসলে শশাঙ্ক মনোহর মানে এমন একজন মানুষ, যাঁর চরিত্রে ও শার্টে কোনও দাগ নেই।

নাগপুরের বিখ্যাত অ্যাডভোকেট ভি আর মনোহরের ছেলে নিজেও দুর্দান্ত উকিল। কিন্তু শোনা যায়, তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘‘আমি আর কী করলাম! বাবার নখের যুগ্যিও তো হতে পারলাম না!’’

কিন্তু বোর্ডের বাকিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব কঠিন কোনও আইনি চিঠি পড়ে সেটার ব্যাখ্যা করতে তাঁর লাগে ঠিক দু’মিনিট।

এই যদি হয় তাঁর আইনি জ্ঞান, তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল এর পর যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করে, তা হল শশাঙ্কর জেদ।

শোনা যায়, ছেলে জন্মেছিল যে দিন, সে দিন থেকে সিগারেট ও মদ দু’টোই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর আর কোনও দিন ছুঁয়েও দেখেননি।

আসলে শশাঙ্ক মনোহর মানেই ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম’। একটা অদ্ভুত পাগলামি। সেখানে ‘শো’বাজি নেই, দেখনদারি নেই, আছে শুধু সততা আর পরিশ্রম।

এ ছাড়াও শশাঙ্ককে নিয়ে নানা গল্প রয়েছে মিডিয়া মহলে। যেমন?

যেমন শশাঙ্ক নাকি ঘড়ি না পরেও সময় বলে দিতে পারেন।

বোর্ডের নানা মিটিং কভার করতে গিয়ে দেখেছি, সত্যিই কখনও ওঁর হাতে ঘড়ি থাকে না। কিন্তু কেউ যদি সময় জিজ্ঞেস করে, কোনও এক অসম্ভব ক্ষমতায় প্রায় ঠিক সময় বলে দিতে পারেন তিনি।

আমি নিজে সাংবাদিক হয়ে প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু দু’-একবার সময় জিজ্ঞেস করাতে দেখেছি হুবহু ঠিক সময় বলে দিচ্ছেন তিনি।

কিন্তু আজকে শশাঙ্কের এই বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পিছনের গল্পটা কিন্তু আরও চমকপ্রদ। শোনা যায়, ১৯৯৯-এ তিন বছর ভিসিএ প্রেসিডেন্ট থাকার পর তিনি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন ক্রিকেট সংক্রান্ত সব কিছু।

সেই সময় খুব সিনিয়র এক সদস্যকে সব রকম সাহায্য করে বসিয়েছিলেন ভিসিএ-র প্রেসিডেন্টের পদে। কিন্তু সেই সময়ের এক ভিসিএ সদস্য সে দিন বলছিলেন, কোনও ঝামেলা হলেই নাকি নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে না-গিয়ে সবাই শশাঙ্কের কাছে ছুটতেন।

এটা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে যায় যে ভিসিএ-র প্রায় সব সদস্যই সারাদিন শশাঙ্কের বাড়িতেই পড়ে থাকতেন। এ নিয়ে নাকি তাঁদের একদিন ভর্ৎসনাও করেছিলেন শশাঙ্ক। কিন্তু দু’বছর পর বেশ আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি আবার ফিরে আসেন ক্রিকেট প্রশাসনে।

অনেকেই জানেন না, বিদর্ভ অনূর্ধ্ব -২২ টিমে নিয়মিত খেলতেন শশাঙ্ক। এমনকী বার অ্যাসোসিয়েশনের ম্যাচগুলোয় তো প্রায় চল্লিশ বছর বয়স অবধি খেলেছেন তিনি।

অসম্ভব মশলাদার খাবার এবং রসগোল্লা-প্রিয় শশাঙ্কের জীবনের আর এক ঘটনা শুনলে অনেকেই চমকে যাবেন। গত পঁচিশ বছর তিনি একমাত্র ছুটি কাটাতে যে শহরে গিয়েছেন সেটা মহাবালেশ্বর।

এমনকী বোর্ডের কাজে যখন তাঁকে লন্ডন যেতে হয়েছে সেই সময় বিসিসিআই-এর সবাই বাকিংহ্যাম প্যালেসের কাছে একটি হোটেলে ছিলেন। সবাই কাজের পরে ট্যাক্সি নিয়ে লন্ডন বেড়াতে যেতেন কিন্তু একজনই শুধু হোটেলে থাকতেন। তিনি শশাঙ্ক।

কেন যাচ্ছেন না জিজ্ঞেস করাতে তিনি নাকি বলেছিলেন, ‘‘এখানে কাজ করতে এসেছি তো, সেটা করি ভাল করে। আপনারা ঘুরুন।’’

এ ক’বছর শশাঙ্ক আর শ্রীনি-কে নিয়েও যে পরিমাণ নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে সেটা অবিশ্বাস্য। একসময় দু’জনেই যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু গুরুনাথ মেইয়াপ্পানের নাম জড়িয়ে পড়ার পর পরামর্শ চাইতে শ্রীনি চেন্নাই থেকে নাকি ফোন করেছিলেন নাগপুরে।

কিন্তু যেখানে দুর্নীতি বা দুর্নীতির ছায়া — সেই দিক কোনও ভাবেই মাড়াবেন না বলে শশাঙ্ক মুখের উপর বলে দেন, ‘‘মিস্টার শ্রীনিবাসন, ইউ শুড স্টেপ ডাউন।’’ সেখান থেকেই শ্রীনি-শশাঙ্ক সম্পর্ক খারাপ হওয়া।

আসলে শশাঙ্ক এমনই। কোনও রকম আপস তিনি করবেন না। নিজের মতো চলবেন। প্রত্যেকটা মিটিংয়ে পড়াশোনা করে ঢুকবেন। আর সময় পেলেই দেখবেন ‘থ্রি ইডিয়টস’। র‌্যাঞ্চো আর ভাইরাস সহস্রবুদ্ধির গল্প টিভিতে চললে নাকি মিটিংও পিছিয়ে দিতে পারেন তিনি।

শশাঙ্ক মনোহর।

ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সম্রাট।

sanjiv mukhopadhay sanjiv mukherjee bcci president sasanka manohar column
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy