Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেটফ্লিক্স বা ইউটিউবে সিনেমা আপলোড করলে আটকাতে পারবেন তো? প্রশ্ন অনীকের

ভূতের ‘ভবিষ্যৎ’ ছিল। কিন্তু ‘ভবিষ্যতের ভূত’? 

কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সে অনীক দত্ত (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সে অনীক দত্ত (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

ভূতের ‘ভবিষ্যৎ’ ছিল। কিন্তু ‘ভবিষ্যতের ভূত’?

কোনও এক ‘ভৌতিক’ কারণে হঠাৎ ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছিল পরিচালক অনীক দত্তের এই ছবি। শনিবার দুপুর থেকেই তার প্রদর্শন শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে স্থগিত হয়ে যায়। কেন স্থগিত হয়েছে, তার সদুত্তর দর্শকেরা তো দূর অস্ত, খোদ পরিচালকও খুঁজে পাননি। আর লালবাজারের তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা কাউকে সিনেমা বন্ধের নির্দেশ দেয়নি।

এই পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন পরিচালক। এবং তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমি যদি নেটফ্লিক্স বা ইউটিউবে এই সিনেমা আপলোড করি, আটকাতে পারবেন তো?’’

অনীকের ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ কিছু চিমটি ছিল, অনেকের মতে যা কিছুটা রাজনৈতিক। শুক্রবার যাঁরা ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখে ফেলেছেন, তাঁরা বলছেন, এ ছবিতে রাজ্যের রাজনীতি নিয়ে ব্যঙ্গ আরও স্পষ্ট।

প্রশ্ন উঠেছে, সেই জন্যই কি কোনও ‘প্রভাবশালী’ মহল থেকে সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে? সদুত্তর মেলেনি। সিনেমার মালিকদের একাংশ প্রদর্শন বন্ধ করার জন্য ‘পুলিশি চাপ’-এর কথা বলছেন। যদিও শহরের হলমালিকরা বা মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও লিখিত নির্দেশ দেখাতে পারেননি। পুলিশও তেমন কথা অস্বীকার করায় রহস্য আরও ঘনীভূত। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের বিভিন্ন হল ও মাল্টিপ্লেক্সে এ দিন ছবিটি দেখতে গিয়ে দর্শকরা শুনেছেন, ছবি দেখানো হচ্ছে না। আগে থেকে কাটা টিকিটের দাম ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘ওঁরা দেশদ্রোহী’, শাবানার বিরুদ্ধে হুঙ্কার কঙ্গনার

এ দিন বিকেলে সাউথ সিটি আইনক্সে যান অনীক নিজে। সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা কৌশিক সেন এবং আরও অনেকে। পরিচালক আইনক্স কর্তৃপক্ষের কাছে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের কারণ জানতে চান। তাঁর দাবি, ওই হল কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে নির্দেশ আছে। এক লিখিত বয়ানে আইনক্স জানিয়েছে, ‘‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দর্শকদের স্বার্থের কথা ভেবে ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ সেই ‘কর্তৃপক্ষ’ কে, তার বিশদ উত্তর মেলেনি। শনিবার রাতে অবশ্য শহরতলির কিছু প্রেক্ষাগৃহে অনলাইন টিকিট বুকিং চালু ছিল।

আরও পড়ুন: গরুর ‘ধাক্কায়’ হোঁচট খেল বন্দে ভারত

অনীক এ দিন অভিযোগ করেছেন, সিনেমার শুটিংয়ের সময় থেকেই নানা ভাবে বাধা তৈরি হচ্ছিল। কখনও সিনেমার বিষয়বস্তু নিয়ে মামলা হয়েছে, কখনও টেকনিশিয়ানদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘শুনেছি রাজনৈতিক প্রভাবশালী কেউ এর পিছনে ছিলেন। কিন্তু টেকনিশিয়ান এবং প্রযোজকদের সংগঠন ইম্পা পাশে দাঁড়ানোয় ছবির কাজ শেষ করেছি।’’
ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিচালকের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আমি তো ভক্তিরস বা প্রেমের সিনেমা করিনি। সিনেমার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চেয়েছি। এটুকু না থাকলে আর শিল্পের স্বাধীনতা কোথায়!’’
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘ছবিটা দেখিনি। সেন্সরের ছাড়পত্র পাওয়া একটি ছবিতে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার দেখানো যাবে না, এটা খুবই অদ্ভুত লাগছে। এমন অভিপ্রেত নয়।’’ কবি সুবোধ সরকার বলছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কতই বিদ্রুপ করা হয়। তখন তো কাউকে আটকানো হয় না। এ ছবি নিয়ে কী হয়েছে তা বলতে পারব না।’’ চিত্রপরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেসবুকে লেখেন, ‘‘কোনও ছবি পছন্দ না হলে তার সমালোচনা করাই যায়। কিন্তু জোর করে ছবি দেখাতে না দেওয়া কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE