একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন দুই গায়িকা, জোজো ও পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্য়মে দু’জনেই মুখ খুলেছেন। তা নিয়ে সরগরম সমাজমাধ্যম। দুই শিল্পীর অনুরাগীরাও নিজেদের মতামত ভাগ করে নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রথমে পৌষালী ও তার পরে জোজোর গাওয়ার করার কথা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, অনুষ্ঠানের আগে প্রথমে জোজো ও তার পরে পৌষালীর সাউন্ড চেক করার কথা। জোজো তাঁর সমাজমাধ্যমে একটি লাইভ করে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথমে সাউন্ড চেক সেরে খাওয়াদাওয়া করতে চলে যান। যাওয়ার আগে নিজেদের বাদ্যযন্ত্র সরিয়ে রেখে যান। শুধু তাঁদের ড্রামস্ ছিল মঞ্চে। পৌষালীর সঙ্গে ড্রামস্ ছিল না। জোজোর অভিযোগ, তাঁদের অনুপস্থিতিতে কোনও অনুমতি ছাড়াই তাঁদের দলের বাদ্যযন্ত্র সরিয়ে দিয়েছিলেন পৌষালীর দলের শিল্পীরা। এই অভিযোগ এনে সরব হন তিনি। গোটা ঘটনাকে ‘অসভ্যতামি ও অপেশাদার’ বলেও কটাক্ষ করেন। পৌষালীর সঙ্গে ব্য়ক্তিগত সম্পর্ক ভাল, এই দাবি করেও জোজো বলেন, “এই মঞ্চ কারও বাবার সম্পত্তি নয়।”
শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এই কথাগুলি বলেছিলেন জোজো। রবিবার সকালে ফেসবুকেই মুখ খোলেন পৌষালী। তাঁর দাবি, জোজোর দল নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। তার পরে মঞ্চ থেকে ড্রামস্ সরানোর কথা বলায় জোজোর দলের শিল্পী রূঢ় আচরণ করেছেন বলে জানান গায়িকা। পৌষালী তাঁর ফেসবুক লাইভে বলেন, “জোজোদি খুবই অভিজ্ঞ শিল্পী। আমি সেই তুলনায় অনেক জুনিয়র। তবে আমি নিজের ভাগের কথাটুকু এবং যেটা সত্যি সেটা বলতে চাই।!”
এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার ডট কম দুই শিল্পীর সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল। পৌষালী বলেন, “আমি কালকের লাইভ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। ভাবতে পারিনি, আমাকে ও আমার দলকে জোজোদি এই ভাবে ধুয়ে কাপড় পড়াবেন। আমরা একসঙ্গে আমেরিকায় অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি। একসঙ্গে পার্টিতে আনন্দ করেছি। একসঙ্গে খাবার খেয়েছি।” অনুষ্ঠানের দিনও জোজোর তরফ থেকে ফোনে একটি বার্তা পেয়েছিলেন গায়িকা। পৌষালীর বক্তব্য, “খুব রেগেই ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন জোজোদি। কিন্তু সেখানেও আমাকে ‘বাবা’ বলে কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘কোনও চিন্তা কোরো না। এখন অনুষ্ঠান করো মন দিয়ে। আমি দেখছি।’ সেটা শোনার আগেই মঞ্চ থেকেই আমাদের বাজে কথা বলেছেন। মঞ্চ থেকে নেমে আমার ভয়েস মেসেজ পেয়েও শান্ত হননি। তার পরে রাতে আবার ফেসবুকে লাইভ করেছেন।”
এই প্রসঙ্গে পৌষালী আরও বলেছেন, “একজন অভিজ্ঞ শিল্পী হিসেবে দিদির এই কথাগুলো বলার ১০০ শতাংশ অধিকার রয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞ হিসেবে একজন জুনিয়র শিল্পীকে জনসমক্ষে এই ভাবে অপদস্থ করা যায় কি? আমাকে নানা কথা, অপেশাদার থেকে অহঙ্কারী বা বোকা, ন্যাকা এই সব বলাই যায়। এগুলো আমরা শুনেই থাকি। কিন্তু বাবা তুলে বলা যায় কি? ‘মঞ্চটা কারও বাবার নয়’, এই কথা বলা যায়?” জোজোকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ফেসবুকে লাইভে এসে পৌষালী যা যা বলেছেন তা সত্যি নয়। তিনি বলেন, “পৌষালী যা যা বলেছেন, তা সত্যি নয়। আমার একটাই প্রশ্ন, কী ভাবে আমাদের অনুমতি ছাড়া আমাদের বাদ্যযন্ত্র মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল! এটা তো সত্যিই অপেশাদার আচরণ। অন্য কারও সঙ্গেও এমন হতে পারত। আমায় তো পাগল কুকুরে কামড়ায়নি যে, আমি অকারণে কিছু না জেনে অভিযোগ তুলব!”
জোজো জানান, তাঁদের সাউন্ড চেক-এর পরে বাদ্যযন্ত্র মঞ্চ থেকে তাঁরা সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “মঞ্চটা দুই শিল্পীরই সমান ভাবে। আমার আজ পর্যন্ত কোনও জুনিয়র শিল্পীর সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। একসময় তো আমিও জুনিয়র শিল্পী ছিলাম। আসলে আমাদের সাউন্ড চেক আগে হয়। সব সময় পুরো ড্রামস্ সরানো যায় না। তবুও আমরা সরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরে আমাদের দলের শিল্পীরা এসে দেখেন, ওঁরা নিজেদের মতো আমাদের ড্রামস্ সরিয়ে দিয়েছেন। ওঁরা পাল্টা দাবি করেছেন, আমার দলের শিল্পীরা নাকি খারাপ ব্যবহার করেছেন। অথচ এমন কিছুই ঘটেনি।” জোজোর দাবি, তিনি এই একটি কারণেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, “কারও অনুমতি ছাড়া বাদ্যযন্ত্র কী ভাবে সরিয়ে দেওয়া যায়! বাদ্যযন্ত্রের ক্ষতি হলে তার দায় কে নিত?”
পৌষালীর বক্তব্যকে জোজো মানতে নারাজ। ‘মঞ্চটা কারও বাবার নয়’ এই প্রসঙ্গেও জোজোর বক্তব্য, “আমি তো কারও বাবা বলেছি। নির্দিষ্ট কারও কথা বলিনি তো। নিজের গায়ে কাদা মেখে নিলে তো মুশকিল। আমার একটাই প্রশ্ন, বিনা অনুমতিতে কেন আমাদের বাদ্যযন্ত্র সরানো হল?” পৌষালী বলেছেন, “জোজোদি বলেছেন, আমি সব মিথ্যে বলেছি ফেসবুক লাইভে। উনি যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি মিথ্যে বলছি, আমি মেনে নেব।”