শনিবার সন্ধ্যায় ভগবানদাসপুরের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘দেবী চৌধুরাণী’ ছবির ‘জাগো মা’ গেয়ে হেনস্থার শিকার লগ্নজিতা চক্রবর্তী। সোমবার ছবির পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের কাছে সে প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁর আফসোস, “বাংলাও এই ধরনের ঘটনার শিকার।”
শনিবার ভোররাতেই পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গায়িকা। “লগ্নজিতা জানায়, ওর সঙ্গে কী হয়েছিল। অভিযোগপত্রের স্ক্রিনশটও পাঠায়। এই ধরনের ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। সবটা শুনে তাই স্তম্ভিত।” ঘটনাটিকে পরিচালক দু’রকমের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন। তাঁর মতে, শিল্পীর হেনস্থার পাশাপাশি ধর্ম অসহিষ্ণুতাও ছিল। তাঁর সাফ জবাব, “শিল্পীকে এ ভাবে হেনস্থা করার অধিকার কারও নেই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শিল্পীর কথাই বলছি। কারণ, মঞ্চের ওঠার পর তার উপরে অধিকার একমাত্র শিল্পীদের।” কাউকে সমাদর করে ডেকে নিয়ে গেলে তাঁর নিরাপত্তা এবং সমাদরের দায়িত্ব আয়োজকের।
পরিচালকের প্রশ্ন, কেন শিল্পীকে ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যেতে হবে?
নেতিবাচক ভাবে হলেও আরও একবার ‘দেবী চৌধুরাণী’ আলোচনার কেন্দ্রে। কথা শেষ হতেই শুভ্রজিৎ বললেন, “বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এই ভাবে আমার ছবি শিরোনাম হোক, চাই না। সেই সময়ে এ সব কথা মনেও আসেনি। কেবল মনে হয়েছে, বাংলায় কি শিল্পীরা আর নিরাপদ নন?” তাঁর দাবি, এই ধরনের ঘটনা বাংলায় এই প্রথম। তাই এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। একজনকে দেখে একাধিক জন যেন উৎসাহিত হয়ে না ওঠেন।
শুভ্রজিতের উপলব্ধি, “সঙ্গীতের কোনও ধর্ম হয় না। সেটা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করাই হোক বা ইবাদত করা হোক। প্রার্থনা আর ইবাদতের সুর কিন্তু এক। এই দেশে বিলায়েৎ খান, আলি আকবর খান, বিসমিল্লা খানের মতো প্রতিভা জন্মেছেন। তাঁরা হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে অসংখ্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। সেই দেশে এই ধরনের আচরণ কাম্য নয়।” পরিচালকের মনে হয়েছে, যথার্থ শিক্ষার বদলে রাজনীতি আর ধর্ম জনসাধারণের মনে-মাথায় ছড়িয়ে দেওয়ার ফলেই এই আচরণ। সবাই ক্রমশ হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ছেন।
এখন নেতিবাচক প্রচারকেও ‘প্রচার’ হিসাবেই দেখেন খ্যাতনামীরা। সেই দিক থেকে দেখলে শুভ্রজিতের ছবি এবং তার গান নতুন করে প্রচার পেল। লগ্নজিতা এ বিষয়ে কী বলবেন? গায়িকার কথায়, “হতে পারে। তবে শনিবার যখন মেহবুব মল্লিক আমায় মারতে এসেছিলেন, তখন তো আমি এটা ভেবে খুশি হইনি যে, দারুণ হল ব্যাপারটা! আমার খুব খারাপই লেগেছিল। সমানে মনে হয়েছে, এটা না হলে ভালই হত।”