Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Entertainment News

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের মৃত্যু হয়েছে মনে করেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

আর এক দিন পরেই তাঁর লেখা গল্পছবি 'রসগোল্লা'-র রিলিজ। ট্রেলর লঞ্চ, গান থেকে অভিনেতাদের নিয়ে  হুল্লোড় সর্বত্র। কিন্তু তিনি মেঘ শীতের ভৈরবীতে অন্ধ ঘরে দোর দিয়েছেন। লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। বললেন, 'এক সাফল্য থেকে আর এক প্রাপ্তির মাঝ রাস্তার নাম ব্যর্থতা। কিছুই তো করতে পারিনি। এই ব্যর্থতাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি।

লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।

লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৯
Share: Save:

আর এক দিন পরেই তাঁর লেখা গল্পছবি 'রসগোল্লা'-র রিলিজ। ট্রেলর লঞ্চ, গান থেকে অভিনেতাদের নিয়ে হুল্লোড় সর্বত্র। কিন্তু তিনি মেঘ শীতের ভৈরবীতে অন্ধ ঘরে দোর দিয়েছেন। লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। বললেন, 'এক সাফল্য থেকে আর এক প্রাপ্তির মাঝ রাস্তার নাম ব্যর্থতা। কিছুই তো করতে পারিনি। এই ব্যর্থতাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি।

এত নিস্পৃহ কেন আপনি?
আমার নিস্পৃহতা কোনও শৌখিন বিষয় নয়। চল্লিশ বছরের আগের স্মরণজিৎ এতো নিস্পৃহ ছিল না তো। তাঁর জীবনের ঘটনা তাকে নিস্পৃহ করেছে। বুঝিয়েছে তুমি যদি নিস্পৃহ না হও তুমি বাঁচতে পারবে না।

ব্যর্থতা নিয়েও কী বাঁচা যায়?
চল্লিশ বছরের এক মানুষ বেলা বারোটায় অন্ধকার ঘরে বসে আছে। তার কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। সে ভাবছে সমুদ্রের কথা। এই তো কিছু দিন আগে গোয়ায় গিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী, মেয়ে সবাই ছিল। আমি একদিন রাত্রে একলা অনেকক্ষণ সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। দূর থেকে জাহাজের আলো... আকাশে শুয়ে আছে কালপুরুষ! ওই বিশালতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মনে হল আসলে কেউ বড় নয়। সাফল্যকে ভয় হয়। বিখ্যাত, বড়, সাফল্য এই শব্দগুলোর সঙ্গে নিজের জীবনকে জুড়ে দিতে মানুষ কি না করছে! ওই অসীম রাত্রি আকাশের সামনে নিজেকে ভৃত্যের মতো লাগছিল আমার।

এই অসীমের মাঝে রসগোল্লা এল কী করে?
পাভেল আমার বন্ধু। মাঝেমধ্যেই নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা হয় আমার। ও একটা অন্য ছবির গল্প নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি একদিন কথায় কথায় নবীনচন্দ্র দাসের গল্প বলি ওকে। ও ছবি করার কথা ভাবে। আমরা প্রচুর পড়াশোনা করি। শিবপ্রসাদের কাছে যাওয়া হয়। ও প্রযোজনায় আগ্রহী হয়। তার পর তো চিত্রনাট্য লেখা।

আরও পড়ুন, বড়দিনের আগে ঋতুপর্ণার কাছে হঠাৎ অজানা পার্সেল!

সাহিত্যিক বাংলা ছবির চিত্রনাট্যকার...
আসলে আমি অবসর সময় প্রচুর ছবি দেখি। আমার কাছে দশ হাজার সিনেমার সংগ্রহ আছে।তবে প্ল্যান করে কিছু হয়নি। আমি আবার কিছু প্ল্যান করতে গেলেই সেটা ব্যর্থ হয়। আমি ডকুমেন্টারি দেখি। ইতিহাস পড়ি। আর মনে হয় কিছুই করতে পারলাম না। অথচ কী করব? সে বিষয়েও সম্যক ধারণা নেই।

'রসগোল্লা' নিয়ে কী ধারণা?
'রসগোল্লা'র ক্যাপ্টেন তো পাভেল। খুব যত্ন নিয়ে ছবিটা করা।তবে একটা কথা খুব মনে হয়। 'রসগোল্লা'-র মধ্যে যে ইনোসেন্স এসেছে সেটা দর্শকদের নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। আমার তো মনে হয় 'দাদার কীর্তি'-র পরে এমন ইনোসেন্সের ছবি বাংলায় আর হয়নি।


‘রসগোল্লা’র পোস্টারে উজান-অবন্তিকা।

এই অস্থির সময়ে ইনোসেন্স, প্রেম এই অনুভূতি নিয়ে মানুষ ভাবে?
দেখুন সোশ্যাল মিডিয়া এসে প্রেম নষ্ট করে দিয়েছে। আমার কাছে প্রচুর অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা এসে কাঁদে। একটি মেয়ের সঙ্গে একটি ছেলের প্রেম হল। প্রথম দিকে সব ভাল লাগার পর একটা সময় তো কঙ্কালের কাঠামো বেরিয়ে আসবে। সেই সময়েই দেখা গেল চ্যাটে বা ডেটিং অ্যাপে অন্য আর একটি ছেলে সেই মেয়ের প্রতি মুগ্ধ! সারাক্ষণ ভাল ভাল কথা বলছে। ব্যস এখন তো কেউ দুধ আর জল আলাদা করতে পারে না। মেয়েটি সেই ছেলের দিকে গেল। প্রেমের মধ্যে কোনও লয়্যালটি নেই। শুতে চাওয়া আছে। এই 'ফলস্ প্রাইড' তো সব সম্পর্কগুলোকে বদলে দিচ্ছে। ভেঙে দিচ্ছে। সবাই প্রিয়ঙ্কা চোপড়া হবে। পুজো এলে সবাই ক্যামেরা কিনে গলায় ঝুলিয়ে ফটোগ্রাফার। আপনি মিলিয়ে নেবেন এই প্রশংসা শোনার অ্যাডিকশনে, লাইক পাওয়ার নেশায় আজ থেকে দশ বছর পর গোটা পৃথিবী তাসের ঘরে পরিণত হবে। না থাকবে কনটেন্ট না থাকবে কোয়ালিটি।এই লাইক পাওয়াটা একটা মেন্টাল অরগ্যাজমের জায়গায় চলে গেছে। আর সেখান থেকেই একা বাঁচার ভয়।

আপনি একা বাঁচতে চান?
আমি ছোটবেলা থেকেই একা বাঁচতে ভালবাসি।

লোকে বলে আপনি শুধু ছোট ছেলেমেয়েদের প্রেম নিয়ে লেখেন?

এই ধারণাটা কেন বলুন তো? ধরুন রাত্রে ভূতেরা বেরোয়। আসলে মার্কেটে আমাকে নিয়ে অনেক খবর থাকে।

আরও পড়ুন, আলিয়াকে একটি বিশেষ অধিকার দিলেন রণবীর! কী জানেন?


যেমন? বলুন না...
আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি না। আমি খুব অ্যারোগেন্ট।

আপনার অনেক গল্পের শুরু ভায়োলেন্স থেকে শেষে আবার একটা মায়া, স্নেহ জড়ো হয়...
আসলে আমি মফস্বলের মানুষ। বাটানগরে বড় হয়েছি। চোখের সামনে বোমাবাজি দেখেছি। মধ্য আশির দশক। সে সময়ে পাইপগান ছিল। দেখেছি বালতিতে বোমা চুবিয়ে রাখতে। আমাদের বাড়ির সামনে পুকুর ছিল তার পাশে শ্যামা ডাকাত থাকতো। সে ছ’মাস বাড়িতে, ছ’মাস জেলে থাকতো। কতদিন দেখেছি মা ওকে খেতে দিচ্ছে। আমরা দুষ্টুমি করলেই মা বলতো 'শ্যামা রিভলভার টা দেখা তো!আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একাকিত্ব ভালবাসি। গোষ্ঠিভুক্ত হতে চাই না বলে লেখকের মহলে গালিগালাজ ও চলে আমায় নিয়ে।মঞ্চে উঠতে একদম ভাল লাগে না আমার। সে নিয়েও কথা শুনতে হয়।

কোন লেখক আপনাকে প্রভাবিত করেন?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। আমি ওঁর অন্ধ ভক্ত। কোনোও ঠোঙায় ওঁর লেখা ছাপা দেখলাম, সেটাও রেখে দিই। ছোটবেলা থেকে ওঁর লেখা পড়ছি। লেখার মধ্যে এত স্নেহ! কোনোও জ্ঞান দেওয়ার অভিপ্রায় নেই। অথচ কী অসম্ভব 'হুইট', আর নিস্পৃহ।

আপনার মেয়ে বা স্ত্রী আপনার লেখা পড়েন?
বাড়িতে কাউকে পড়াই না আমার লেখা। একটা লেখা লিখে মনে হয় এটাই আমার শেষ লেখা আর লিখতে হবে না। যাক বাবা!
থামলেন স্মরণজিৎ।
শূন্য থেকে শূন্যতায় নিরাকার অস্ফূট তাঁর নিশ্বাস...
নিজের সঙ্গে কথা বলে ওঠেন...
'শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে!'

(কোন সিনেমা বক্স অফিস মাত করল, কোন ছবি মুখ থুবড়ে পড়ল - বক্স অফিসের সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE