ডিম নিয়ে আমার অনেক ড্রিম। এগরোল থেকে কবিরাজি। মোগলাই পরোটা থেকে অমলেট। ডিমের ডালনা থেকে ভুজিয়া। কোথায় নেই এই মনমোহন ডিম্ব, যার সমস্ত লোভনীয় রেসিপি আজকাল আর প্লেটে নয়, আমার স্বপ্নে আসে। কারণ, আমার জীবনটা এখন এগলেস। কোলেস্টরল নামক ঘাতক বস্তুটি যাতে শরীরে গেঁড়ে বসতে না পারে, তাই ডাক্তারবাবুর হুকুম। অমান্য করব, এমন পুরুষসিংহ আমি নই। স্ত্রীর কড়া নজর বাঁচিয়ে তারপর বাঁচব ভেবেছেন? তাই, ডিম নিয়ে প্রেম নয়, বিরহের কথা বলে, আসুন আজকের আড্ডা শুরু করি।
এখনও মনে আছে, আমাদের শ্যামপুকুর বাড়ির পুবদিকের জানালা বেয়ে যখন সূর্য উঠত, পাড়ার মাখনদার চায়ের দোকানে ঠিক তার পরে-পরেই তেমনই অরেঞ্জ-কুসুম সমেত ভেসে উঠত দিনের প্রথম পোচ, যার ম’ম’ করা গন্ধে আসছে-পরীক্ষার টেনশন কোথায় হাওয়া! খাদ্যবস্তুর লোভ সংবরণ করার অগ্নিপরীক্ষায় আমি চিরদিনই ডাহা ফেল। সেদিনও তার নড়চড় হয়নি, পড়ার ঘর থেকে সোজা মাখনদার কাঠের বেঞ্চিতে। অবশ্য এজন্য বাড়িতে দিদিদের কাছে কম কানমলা খাইনি! আর শোভাবাজার মোড়ের মিত্র কাফের সেই বিখ্যাত ডিমের ডেভিল, মিনি গ্রেনেড ভেবে যাকে বারবার ভুল ভেবেছে গোয়েন্দারা। অমন নিঃশব্দ বিস্ফোরণ খুব কম অস্ত্রেই সম্ভব। পুরু টোস্ট বিস্কুটের আবরণ ভেদ করে যখন তার প্রাণকেন্দ্রে কেউ প্রবেশ করত, আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, আনন্দে আবেগে আমার মতো আরও অনেক ডিম-ড্রিমারদের চোখেই জল চলে এসেছে। সেদিনও, আজও।
তবু, কারও কাছে যেমন হুঁশিয়ারি, কারও কাছে তেমনই ওয়েলকাম ডায়েট এই ডিম। খেলোয়াড়দের তো মাস্ট, অন্যান্য নানা রকম শরীরচর্চাকারীর কাছেও ডিম এক সুস্বাস্থ্যের বার্তা। ডিমের সাদা অংশটি তো রীতিমতো পুষ্টিকর, কুসুম ঠিক ততটা নয়। কিন্তু কে বোঝাবে ডাক্তার-বদ্যিদের যে, যত স্বাদ ওই নিষিদ্ধ কুসুমিত গোলকটিতেই। স্বাদ আর স্বাস্থ্যের এই বিবাদ তো বহু দিনের। যেটা খেতে ভাল লাগে, সেটা খাওয়া ভাল না। কোন দিকে যাবেন?
‘যেদিকেই যাস, যাত্রার আগে খবরদার ডিম দেখিস না’—আমার বুড়ি পিসিমার সাবধানবাণী ছিল বাড়ির সবার জন্য। ডিমভক্ত হওয়ার সুবাদে সেই ফতোয়া মানিনি কখনও, তবে নিজের চোখে হস্টেলের এক বন্ধুকে দেখেছি, পরীক্ষার দিন ডাইনিং হলে ডিমের মুখদর্শন করে বেসিনে গিয়ে চোখমুখ ধুয়ে আসতে। ডিম নিয়ে এমন আদেখলেপনা দেখলে সেদিনও হাড়পিত্তি জ্বলে যেত, আজও যায়।
মাঝে মাঝে আমার এই অতিরিক্ত ডিমপ্রীতির কারণে, আমার বন্ধুরা আমাকে ‘অঞ্জন আন্ডা-র কন্ট্রোল’-এ বলে খ্যাপায়। কিন্তু সব আওয়াজ কি গায়ে মাখলে চলে? তার চেয়ে বরং ডিমের একটা পুরোনো গল্প বলে আজকের মতো শেষ করি। সেই যে একটা ঘোড়া ছিল, যাঁর মালিক খুব আশা করে ছিল একদিন না একদিন ঘোড়াটা ডিম পাড়বে। কিন্তু ওর মন ভেঙে গেল সেদিন, যখন জানতে পারল ওটা আসলে একটা গাধা। হলফ করে বলতে পারি, ডিমের ব্যাপারে এই লোকটি আমার চেয়েও একটু বেশি অবসেসেড ছিল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy