Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
abhishek chatterjee

Abhishek-Sreelekha: ‘দিদি’র সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পরেই কাজ হারালেন মিঠুদা, জায়গা নিলেন ‘দাদা’: শ্রীলেখা

ইন্ডাস্ট্রির ‘দাদা’, ‘দিদি’কে দেখে বুঝি, মানুষ বড়ই ‘আমি’ময়। তাঁদের ধারণা, ৯০- এর দশকেও তাঁরা তারকা, ২০২২-এ এসেও তাঁরা তারকা। কিন্তু তা নয়। এখনও এক জন ভাবেন, তাঁর বাড়িতে খাবার না পৌঁছলে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করতে হবে। আর এক জনের দাবি, তিনি দেরি করে বিমানবন্দরে পৌঁছলেও বিমান তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে।

অভিষেককে নিয়ে মুখ খুললেন শ্রীলেখা

অভিষেককে নিয়ে মুখ খুললেন শ্রীলেখা

শ্রীলেখা মিত্র
শ্রীলেখা মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ১৩:০০
Share: Save:

মিঠুদা (অভিষেক চট্টোপাধ্যায়) নেই। তবুও তাঁকে ভুলতে পারছি না। এখনও অনেকেই ওঁকে নিয়ে লিখছেন। কিন্তু তিনি যখন বেঁচে ছিলেন, তখন কেউ বুঝল না। জানল না। বা জেনেও জানল না। টলিউড ইন্ডাস্ট্রি যে কথা চাপা রেখেছিল, মিঠুদা চলে যাওয়ার পরেই তা যেন তেড়েফুঁড়ে উঠল। আমারও থেকে থেকে মনে হচ্ছে কিছু লিখি।

আসলে মিঠুদা কিন্তু কোনও দিনই চেপে রাখেননি কিছু। জীবিত অবস্থায় একাধিকবার এই ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জন শিল্পীর নাম নিয়েই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ‘দাদা, ‘দিদি’র নামে কিছু বললেই অন্যান্যরা যেন কেমন অস্বস্তিতে পড়ে যেতেন। যেন, ওঁদের নিয়ে বলা বারণ। কিন্তু সেই মিঠুদার মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী সংযুক্তা (চট্টোপাধ্যায়) যে ভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য কথা বললেন, তাতে তাঁর কষ্টটা অনুভব করতে পারলাম। সদ্যই স্বামী-বিয়োগ হয়েছে। এখনই তাঁর স্বামীর সম্পর্কে এত মিথ্যে রটনা শুনতে কার ভাল লাগে?

আমিও বলেছিলাম। আমার কথা শুনে আলাদা করে ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা বলেছিলেন, ‘‘বাবা! তোর কী সাহস! এ ভাবে সত্যি কথাগুলো বলে দিলি?’’ কিন্তু বাইরে বেরোলেই সেই প্রভাবশালী ‘দাদা’, ‘দিদি’র ভয়ে তাঁরা মুখ খোলেননি। আমি চলে যাওয়ার পরে হয়তো তাঁরাও মৌনতা ভাঙবেন।

কর্মফলে বিশ্বাস রয়েছে আমার। তাঁরা কর্মের ফল পাবেন। এই ‘তাঁরা’ আসলে কারা? আমি যাঁদের নিয়ে আজ লিখছি, তাঁরা কিন্তু কেবল ‘দাদা’, ‘দিদি’তে সীমিত নেই। পর পর দু’টি ছবি হিট করে গেলেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ক্ষমতার আসনে বসেন। আর তার পর ক্ষমতার দেখনদারি শুরু হয়। সমস্ত প্রভাবশালী মানুষকে নিয়েই আমার এই লেখা। আর বারবার শ্রীলেখা মিত্র সকলের নাম নেবে কেন? যাঁদের কথা বলছি, তাঁরা তো অন্তত বুঝবেন। আর কী চাই? সেই মানুষগুলি বারবার বলেন, ‘‘আমরা ইন্ডাস্ট্রির মুখ, আমরাই বাংলা ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। হাল ধরেছি।’’ তাঁদের মনে করাতে চাই, কেউ বিনামূল্যে কাজ করেননি। প্রযোজকের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন বলেই একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তা ছাড়া সবই তো এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। এ ভাবে মিঠুদার কাছ থেকেও কি কম ছবি হাতছাড়া হয়েছে? ইন্ডাস্ট্রির ‘দিদি’র সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পরে লোকে ভুলেই গেল অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে। ‘দিদি’র জীবনে তখন ‘দাদা’র প্রবেশ ঘটল। ‘দাদা’ যা-ই সিনেমা করেন না কেন, তাতে ‘দিদি’কে নায়িকা হিসেবে চাই-ই চাই। আমাকেও একাধিক ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘দাদা’র সঙ্গে একটি ছবি সুপারহিট হওয়ার পরেও ‘দাদা’ আর আমাকে কাজে ডাকেননি।

ইন্ডাস্ট্রির ‘দাদা’, ‘দিদি’কে দেখে বুঝি, মানুষ বড়ই ‘আমিময়’। তাঁদের ধারণা, ৯০- এর দশকেও তাঁরা তারকা, ২০২২-এ এসেও তাঁরা তারকা। কিন্তু আসলে তা নয়। এখনও এক জন ভাবেন, তাঁর বাড়িতে খাবার না পৌঁছলে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করতে হবে। আর এক জনের দাবি, তিনি দেরি করে বিমানবন্দরে পৌঁছলেও বিমান তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে।

তাই আজ যখন সেই মানুষেরা এসে বলেন, তাঁরা এক সময়ে মিঠুদার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন মানবজাতির কথা ভেবে লজ্জা বোধ করি। যাঁরা লোকের কাজ কেড়ে নেন, তাঁরা টাকার অঙ্ক দেখাচ্ছেন? এ সমস্তই মিথ্যে। চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা।

অভিষেকের স্ত্রী সংযুক্তা বলেছিলেন, ‘‘কয়েক জন গুজব ছড়াচ্ছেন, প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নাকি এসে দেখা করছেন। কেউ ৫ লক্ষ, কেউ ১০ লক্ষ করে টাকাও দিয়েছেন। তাঁদের বলি, সদ্য চলে গিয়েছেন অভিষেক। এখনই এত মিথ্যে খবর ছড়াবেন না ওঁর নামে। কেউ আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবেও শোক জানাতে আসেননি। আর্থিক সাহায্য তো দূরের কথা।’’

মনে আছে তো মিঠুদার স্ত্রীর এই কথাগুলি?

আমি আসলে নগন্য। তা ছাড়া প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে না আমার। ক্লান্ত লাগে। কিন্তু কর্মফলের তো ক্লান্তি নেই। তাই... থাক, বাকিটা না হয় না-ই বললাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE