Advertisement
E-Paper

তৃণমূল সরকার কাজ দেয় না! তা-ও আমি আমার সংসার চালাতে পারছি, নিজেকে লক্ষ্মী বলেই মনে করি: শ্রীলেখা

কিছু লোক তো আমার নামে ব্যানার-পোস্টার দিয়ে লিখেছিল ‘অসভ্য শ্রীলেখা মিত্র’! আবার লিখেছে যাতে আমাকে ‘বয়কট’ করা হয়। আর ভেবেছিল আমি লক্ষ্মী হয়ে মেনে নেব!

শ্রীলেখা মিত্র

শ্রীলেখা মিত্র

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০৮
শ্রীলেখা মিত্র।

শ্রীলেখা মিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দেবী দুর্গা চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে ক’টা দিনে বাপের বাড়িতে ঘুরতে আসেন। আমার মতে, এই চারজনের মধ্যে যাকে নিয়ে বরাবর বেশি টানাটানি, তিনি লক্ষ্মী। যদিও ব্যক্তি শ্রীলেখার লক্ষ্মীর থেকে টান বেশি সরস্বতীর প্রতি।

যদিও এখন যা পরিস্থিতি, তাতে জনপ্রিয়তার নিরিখে দিদিকে তো রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে গণেশ! সে যা-ই হোক। গৃহস্থ বাঙালি বাড়িতে এখনও বৃহস্পতিবার করে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া হয়। তবে লক্ষ্মীঠাকুরের কথা উঠলেই আমার শুধু মায়ের মুখ ভেসে ওঠে। অনেকের চোখে আমি হয়তো ‘অলক্ষ্মী’। কিন্তু আমি বরাবর নিজেকে লক্ষ্মী মেয়েই ভেবেই এসেছি।

লক্ষ্মীর মূর্তি মানেই ঢেউ খেলানো চুল, শান্ত একটা মিষ্টি মুখ। আমার মা একেবারে তেমনটাই ছিলেন। আমার মা কোনও দিনই কারও সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলতেন না। টেনে টেনে সুর করে কথা বলতেন। এককথায় ‘লক্ষ্মীমন্ত’ বলতে যা বোঝায়, আমার মা ঠিক তেমনই ছিলেন। আমার মা খানিকটা অভিনেত্রী সন্ধ্যারানির মতো ছিলেন। আমার মুখশ্রী নিয়ে অনেক ভাল কথা শুনলেও আমার আচরণ সবটাই বাবার থেকে পাওয়া।।

যদিও এই সমাজের নিয়মে, সময়ের নিয়মে সব কিছুই কেমন যেন বদলে যায়। তবু ছোটবেলা থেকে যেন আমি একই রয়ে গেলাম। ছোটবেলায় মা দুব্বোঘাস হাতে ধরিয়ে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া শেখাতেন। পড়তাম। কিন্তু, খানিকটা ‘এডিট’ করে! যে জায়গা পরপুরুষের সঙ্গে জোরে কথা, উচ্চ হাসির যে নিষেধ থাকত, সেগুলি পড়তে পড়তে প্রশ্ন করতাম নিজেকে, কেন এমনটা হবে? ছোটবেলায় পড়লেও পরে আর পড়তাম না ওই জায়গাগুলো। গল্পটা পড়েছি, অঞ্জলিও দিতাম। কিন্তু যা লেখা আছে, তা হুবহু পড়তাম না, মানতাম মা। যেমন কিছু জায়গায় লেখা আছে, স্বামীর আগে খাওয়া বারণ। ছোট থেকে কল্পনাপ্রবণ ছিলাম, জিজ্ঞাসুও ছিলাম। তাই মনে হত, কারও যদি খিদে পায়! সে কি অপেক্ষা করবে! আমি তো পারব না। তাই আমি নিয়ম ভেঙে ফেলে মা লক্ষ্মীকে ছোট্ট করে একটা ‘সরি’ বলে দিতাম।

আসলে লক্ষ্মী সম্পর্কিত যে ভাষ্য, তার কিন্তু আমূল পরিবর্তন হয়েছে। যদিও আমি নিজেকে লক্ষ্মী বলেই মনে করি। রাজ্য সরকার কাজ দেয় না। তা-ও আমি আমার সংসার চালাতে পারছি। কারণ, আমি যখন অনেক টাকা রোজগার করেছি, তখন টাকা উড়িয়ে দিইনি। বিদেশি ব্র্যান্ডের ব্যাগ, জুতো, প্রসাধনী কিনে টাকা নষ্ট করিনি। বরং আমার ভিতরের লক্ষ্মীকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আজ কাজ নেই বলে আমার জীবনধারায় কোনও বদল ঘটেনি। নিজের বাড়িতে থাকি, মেয়েকে মানুষ করেছি। আমার পোষ্যদের ভাল রাখি। ঘর গুছিয়ে রাখি। তা হলে আমি লক্ষ্মী নই কি! আমাকে দেখে ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও ভাবে, এর চলছে কী ভাবে! আসলে চলছে, কারণ আমার লোভ নেই। তাই আমি আমার শর্তে চলতে পারছি।

লক্ষ্মীর যেমন ধরে রাখার একটা প্রবণতা আছে, তেমনই লক্ষ্মী কিন্তু চঞ্চলাও। তার মানে, কিছু উনিশ-বিশ করলে লক্ষ্মীর চলে যেতেও দু-মিনিট সময় লাগবে না কিন্তু। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই ভাবেন, শ্রীলেখা মানেই ‘ওরে বাবা’! আমি কিন্তু এমনিতে লক্ষ্মী মেয়ে, যতক্ষণ না আমাকে অকারণে কেউ ঘাঁটাচ্ছে। আর সেটা না করলে তো আমাকে চঞ্চলা কিংবা চণ্ডী হতে হয় না! তাই যারা আমার সঙ্গে লক্ষ্মী হয়ে থাকে, আমিও তাদের সঙ্গে লক্ষ্মী হয়ে থাকি।

সমাজের একটা স্তরের লোকজনই তো আমার নামে ব্যানার-পোস্টার দিয়ে লিখেছিল ‘অসভ্য শ্রীলেখা মিত্র’। আবার লিখেছে যাতে আমাকে ‘বয়কট’ করা হয়। আর ভেবেছিল আমি লক্ষ্মী হয়ে মেনে নেব! মোটেই না। আমাকে বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছিল একটা প্রতিবাদের মঞ্চে আমার বলা একটি বক্তব্যের জেরে। সেই প্রসঙ্গে আমি কিন্তু আজও অনড়।

তাই ‘লক্ষ্মীমন্ত’ মানে চুপ করে মেনে নেওয়া নয়, পাল্টা জবাব দেওয়াও। আমি কিন্তু কাউকে ভয় পাইনি। আসলে কিছু মানুষ চায়, যাতে আমি নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু আমার ছাড়ার পাত্রী নই। আসলে যত বয়স বেড়েছে, অন্যায় মেনে নেওয়ার সহনশীলতা কমেছে। যত বোধ বাড়ছে, বুঝতে পারছি সমাজটা অসুরে ভরে গিয়েছে। তাই আর লক্ষ্মী নয়, এদের বধ করার জন্য সত্যিকারের দুর্গার দরকার।

Sreelekha Mitra Durga Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy