Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জনজোয়ার আর গান স্যালুটে বিদায়

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘পদ্মশ্রী’ নায়িকার দেহ জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়। প্রথমে পুজোপাঠ ও প্রার্থনা সঙ্গীত। তারপরে গান স্যালুট দিয়ে বিদায় জানানো হয় অভিনেত্রীকে। রাজ কপূরের মতো খুব হাতেগোনা তারকার মৃত্যুর পরেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।

শেষযাত্রা: শ্মশানের পথে শ্রীদেবীর দেহ। ছবি:রয়টার্স

শেষযাত্রা: শ্মশানের পথে শ্রীদেবীর দেহ। ছবি:রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০৪:০৩
Share: Save:

চোখে দেখতে পান না যতীন বাল্মীকি। কখনও কোনও সিনেমাও দেখেননি। তবু ‘ভাগ্য’র সামনে অপেক্ষা করছেন দু’দিন ধরে। একবার দেখবেন তাঁকে। প্রিয় নায়িকা নন, শ্রীদেবী তাঁর ত্রাতা। ‘‘ভাইয়ের ব্রেন টিউমার চিকিৎসার সময়ে দু’লক্ষ টাকা সাহায্য পেয়েছিলাম ওঁর কাছ থেকে,’’ বলতে বলতে গলা ধরে এল উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা যতীনের।

ওডিশা থেকে গুজরাত, তামিলনাড়ু থেকে উত্তরপ্রদেশ— কাল রাত থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হচ্ছিলেন লোখণ্ডওয়ালায় বনি কপূরদের বাংলোর সামনে। কাল রাতে যখন বিমানবন্দর থেকে শ্রীর দেহ তাঁদের গ্রিন একরের বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে, তখনই বাড়ির বাইরে হাজার দুয়েক মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। আজ ভোর ছ’টা থেকে সেই ভিড় বাড়তে বাড়তে জনসমুদ্রের রূপ নেয়। সেই ২০১২ সালে রাজেশ খন্নার মৃত্যুর পরে এতবড় জনসমাগম আর দেখেনি এ শহর।

সকাল নটার সময়ে শ্রীদেবীর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি থেকে কয়েক মিনিট দূরে, সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে। পরণে সোনালি-মেরুন কাঞ্জিভরম শাড়ি। গাঢ় লাল লিপস্টিক। কপালে বড় লাল টিপ। গলায় সোনার বড় হার। শ্রীদেবীকে দেখে মনেই হচ্ছিল না, মৃত্যুর পরে তিন দিনেরও বেশি কেটে গিয়েছে। পরে হেমা মালিনী টুইট করেন, ‘‘লাল শাড়িতে অপরূপ দেখাচ্ছিল ওঁকে। শান্ত, সমাহিত।’’ সাদা গোলাপ, জুঁই ফুল আর সাদা লিলি দিয়ে সাজানো হয়েছিল হলটি। ভিআইপি, সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ— হলে ঢোকার তিনটি আলাদা দরজা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘পদ্মশ্রী’ নায়িকার দেহ জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়। প্রথমে পুজোপাঠ ও প্রার্থনা সঙ্গীত। তারপরে গান স্যালুট দিয়ে বিদায় জানানো হয় অভিনেত্রীকে। রাজ কপূরের মতো খুব হাতেগোনা তারকার মৃত্যুর পরেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার।

স্বজনহারা: মেয়ে জাহ্নবীকে নিয়ে শ্রীদেবীর শেষকৃত্যে বনি কপূর। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই

হলের ভিতরে ছিলেন বনি, অর্জুন, বনির ভাই অনিল ও সঞ্জয়, অনিলের ছেলে হর্ষবর্ধন এবং মেয়ে রিয়া ও সোনম। একটু পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শ্রীদেবীর দুই মেয়ে— জাহ্নবী ও খুশি। অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন সোনম। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন রানি মুখোপাধ্যায়-ও। বললেন, ‘‘আহিরা (রানির মেয়ে) ওর মাসিকে হারাল।’’ ভিড় সামলাতে মোতায়েন ছিল দু’শোরও বেশি পুলিশ। এসেছিলেন উদ্ধব ও আদিত্য ঠাকরে, বিদ্যা বালন, হেমা মালিনী, মাধুরী দীক্ষিত, রেখা, রণবীর সিংহ ও দীপিকা পাড়ুকোন, ঐশ্বর্যা রাই, জয়া বচ্চন, রজনীকান্ত, কমল হাসন, সস্ত্রীক শাহরুখ খান, কাজল ও অজয় দেবগণ এবং সুস্মিতা সেন। সোজা শ্মশানে গিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন-ও।

ক্লাব থেকে যাত্রা শুরু হয় বেলা সাড়ে বারোটায়। ফুলে ঢাকা একটি মাথাখোলা ট্রাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কাসকেটে শ্রীর দেহ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ভিলে পার্ল সেবা সমাজ শ্মশানের দিকে। ট্রাকের গায়ে তাঁর এক বিশাল ছবি। প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষ বারের মতো দেখতে ট্রাকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভিড়। লোকজন ঝুলছিল রাস্তার পাশে গাছের ডাল থেকেও। ভিড়ের চোটে প্রথমে ট্রাক এগোতেই পারছিল না। অর্জুন কপূর তখন জনতার উদ্দেশে জোড়হাত করে অনুরোধ করেন, ‘‘আপনারা একটু জায়গা করে দিন।’’ লোখণ্ডওয়ালা থেকে শ্মশান মাত্র সাত কিলোমিটার পথ। কিন্তু দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় সেই পথটুকু পার করতে।

শ্রীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে গত কয়েক দিনে বিস্তর চর্চা হয়েছে। দুবাইয়ের বাসিন্দা, কেরলের আশরফ তামারাসারি শ্রীর দেহ ফেরত পাঠানোয় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। আজ তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ওঁকে এক ঘুমন্ত পরীর মতো দেখতে লাগছিল। কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্নও ছিল না।’’ বাথটবে পড়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর মাথায় জোর আঘাত লাগে বলে দু’দিন আগেই খবর রটেছিল। আশরফ বলেছেন, ‘‘এমবাম হওয়ার পরে শ্রীর দেহ প্রথমে তিনটি সাদা কাপড়ে মোড়া হয়। তারপর ১৮৪০ দিরহাম (আনুমানিক ৩২ হাজার টাকা) দিয়ে কেনা একটি সাধারণ কাঠের কফিনে পুরে বিমানে তোলা হয় সেটি।’’

সন্ধেবেলা পরিবারের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে ‘এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ’ জানানো হয়েছে। আর সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, ‘‘এই দুঃখের সময়ে আমাদের একটু একা থাকতে দিন। শোকপালনের সুযোগটুকু দিন জাহ্নবী-খুশিকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE