Advertisement
E-Paper

সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন যৌনতা নিয়ে

লিখছেন মধুমন্তী পৈত চৌধুরীযদি আপনার ন’ বছরের ছেলে প্রশ্ন করে, ‘‘ধর্ষণ কী? কেন হয় এমন?’’ উত্তর দেবেন না কি এড়িয়ে যাবেন? যদি লিঙ্গ-বর্ধক ক্যাপসুল আর তেলের পাতাবাহারি বিজ্ঞাপন দেখে আপনার সাত বছরের মেয়ে প্রশ্ন করে,‘‘এগুলো কী?’’ কিছুটা থমকে গিয়ে কী বলবেন?

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৬ ০০:২৫

যদি আপনার ন’ বছরের ছেলে প্রশ্ন করে, ‘‘ধর্ষণ কী? কেন হয় এমন?’’ উত্তর দেবেন না কি এড়িয়ে যাবেন? যদি লিঙ্গ-বর্ধক ক্যাপসুল আর তেলের পাতাবাহারি বিজ্ঞাপন দেখে আপনার সাত বছরের মেয়ে প্রশ্ন করে,‘‘এগুলো কী?’’ কিছুটা থমকে গিয়ে কী বলবেন? এই তো, ‘‘পাকা পাকা কথা বলবে না। এ সব জানার বয়স তোমার হয়নি।’’

আসলে যুগটাই ভীষণ ‘পাকা’।. তাই জানার বয়সে পৌঁছবার আগেই আপনার শিশুর জানা হয়ে যাচ্ছে জানার লিস্টের বাইরে থাকা অনেক কিছুই। সৌজন্যে ইন্টারনেট, মাস মিডিয়া।. কিন্তু সে সব জানাই ভাসা-ভাসা।. কাঁচা বয়সের কৌতূহলও থাকে অদম্য। তাই মনে ভিড় করে নানা প্রশ্ন। তবে উত্তর দেবে কে? এ সব নিয়ে তো কথা তুলতে নেই!.

যৌনতা, যৌনাঙ্গ, যৌন সম্পর্ক, যৌন প্রবৃত্তি-এই শব্দগুলির সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমাদের সমাজে যে সচেতন দূরত্ব গড়ে তোলা হয়, বয়স বাড়লেও সে দূরত্ব যেন ঘোচে না!. বিষয়গুলি ঘিরে থাকে এক অযৌক্তিক ভয়, লজ্জা, সংকোচ ও বিভ্রান্তি.। সেই দোলাচলের ফাঁকেই শিশুমন নিজের মতো উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় হারিয়ে যায় কানাগলিতে। কিছু বুঝে উঠবার আগেই শিকার হয় ভয়াবহ অভিজ্ঞতার।.

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৭ সালের এক সমীক্ষা অনুয়ায়ী ভারতে প্রায় ৫৩% শিশু কোন না কোন সময় যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো রিপোর্ট করা হয় না.।

তবে এ বার কথা বলতে হবে। আপনার শিশুর স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে।.আর তার জন্য সবার প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে বাবা-মাকে। শরীর, শরীরের জৈবিক পরিবর্তন, শরীরের চাহিদা, ভালবাসার সম্পর্কে শরীরের ভূমিকা, ভিন্ন যৌন প্রবৃত্তি, ভিন্ন লিঙ্গের প্রতি সহনশীলতা- এই বিষয়গুলি নিয়ে আর ফিস-ফাস বা রাখ-ঢাক নয়। বইয়ের সিলেবাসের বাইরে গিয়ে জীবনের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কথা বলুন আপনার শিশুর সঙ্গে।.

তবে বেশির ভাগ সময়ে বাবা-মায়ের প্রশ্ন থাকে, কোন বয়সে গিয়ে এ সব নিয়ে কথা বলা ভাল? বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির নিরিখে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করাই শ্রেয়।. কারণ দু-তিন বছরের শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা না থাকলেও ‘বডি টাচ’ তারা বুঝতে পারে। তাই ‘‘আদর করার বাহানায় শিক্ষক, আত্মীয় বা অন্য কারোর অবাঞ্ছিত স্পর্শকে সরাসরি যেন না বলতে শেখে আপনার শিশু’’, বললেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ জয়রঞ্জন রাম। প্লে হাউসে যাওয়ার দিন থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলুন আপনার শিশুর মধ্যে।. আর তার জন্য শিশুকে তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে পরিচিত হতে দিন। সে বলতে শিখুক প্রতিটি অঙ্গের নাম।. যৌনাঙ্গ নিয়ে তার মনে যেন কোনও দ্বিধা না তৈরি হয়।

বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নের ভিড় এমনিই বাড়ে। যেমন ছেলেদের প্রশ্ন থাকে, হস্তমৈথুন করলে শুক্রানু ক্ষরণ কমে কি না। তা ছাড়াও মেয়ে সহপাঠী বা শিক্ষিকার শরীর নিয়েও টিন-এজার ছেলেদের বিশেষ কৌতূহল থাকে।.মেয়েদের ঋতুস্রাব বা টিনএজেই শারীরিক মিলনের ইচ্ছা নিয়েও উঠতে পারে প্রশ্ন। বকা-ঝকা না করে সে ক্ষেত্রে ছেলেদের সঙ্গে বাবা ও মেয়েদের সঙ্গে মা যদি খোলাখুলি তাদের প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেন, তা হলে কিন্তু অনেকটাই সুবিধা হয় তাদের। ‘‘আগেকার দিনের বাবা মা উদ্যোগী না হলেও আজকের বাবা-মা কে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতেই হবে,’’ বলছিলেন স্কুল শিক্ষিকা পর্ণা সেনগুপ্ত।

শুধু নিজের শরীর নয়, অন্য লিঙ্গের শরীরের প্রতিও যেন আপনার ছেলে সন্তান সহনশীল হয়। লিঙ্গ-সমতার প্রথম ধাপ কিন্তু শরীর। নারী শরীরের গঠন আলাদা। আর তার উপরে পুরষ-শরীরের ক্ষমতা দেখানো পৌরুষের পরিচয় নয়। এই ধারণা গুলিও যেন এই বয়স থেকেই গড়ে ওঠে।

আজকের টিনএজাররা কিন্তু এলজিবিটি কমিউনিটির কথা জানে। তাই সমকামিতা নিয়ে নানা বিধ প্রশ্ন করতেই পারে আপনার ছেলে বা মেয়ে। মেয়েলি পুরষ মানেই সমকামী নয়। আবার তখাকথিত পুরুষালী পুরুষ সমকামী হতেও পারে- এমন নানা মিথ কোনও রকম পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বোঝাতে হবে আপনার সন্তানকে। যাতে স্কুলে কোনও সহপাঠীর যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে সংশয় জাগলে, তা হাসির খোরাক না হয়। হয়ত দেখবেন, আপনার ছেলে বা মেয়েই তাকে বাড়িয়ে দেবে সাহা্ষ্যের হাত।. বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় যিনি ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষক বা বাবা-মায়ের কাছে সেই সাহাষ্যটুকু সব সময় পাননি, এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের থেকে এই দায়িত্ব আর কেউ ভাল ভাবে করতে পাবরেন না।’’

তবে কিছুটা হলেও সচেতনতা গড়ে উঠেছে আজকের শহুরে শিক্ষিত বাবা-মায়েদের মধ্যে। পাঁচ বছরের মেয়ের মা রিণি নন্দী বলেন, ‘‘গায়ে হাত দেওয়ার ব্যাপারে ও স্কুলে বাথরুমে কোনও ভাবে কেউ সুষোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে কি না তা নিয়ে এখন থেকেই মেয়েকে সতর্ক করে দিয়েছি।’’

বলিউড-হলিইডের হাত ধরেই কিশোর মন প্রথম যৌনতার স্বাদ পায়। শরীর নিয়ে যে ভণ্ডামি সমাজে গভীর ভাবে অন্তর্নিহিত, সেই জন্যই কিন্তু স্কুল পড়ুয়াদের পর্ণোগ্রাফির দিকে ঝোকঁ বাড়ে। কিন্তু এই মাধ্যমের কোনটাই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেয় না.। কলকাতার নামী দামী স্কুলে জীবনশৈলীর শিক্ষা এখনও প্রবেশাধিকার পায়নি। তবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর সমাজে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার শিশুকে সম্মুখীন হতে হয় অপ্রিয় পরিস্থিতির।.কেউ জানে না কখন কী ভাবে! বড়দের কাটেনি সংকোচ. আর ছোটরা আছে তিমিরে। সেই তিমিরেই আশার আলো জাগাতে এগিয়ে আসতে হবে বাবা মাকে। নিজেদের তাগিদেই।

children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy