Advertisement
E-Paper

প্রাণবন্ত হাওয়ায় মাতাল এক সন্ধ্যা নেমে এল মঞ্চে, এমন গল্পযাপন বহুদিন মনে রাখবে কলকাতা

কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে কী অসীম নৈঃশব্দ্য! ছোট প্রাণের ছোট ব্যথার সঞ্জীবিত ধারায় অবগাহন, সে কি মুখের কথা! এ অবগাহনে চেতনা আর আত্মাকে মিলিয়ে দিলেন মঞ্চের শিল্পীরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ১৬:৫৭
Sujoy Prasad

মঞ্চে শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত।

‘বেগানা’ বাংলাদেশের ভাষা চিনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, সুর চিনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ভাষা আর সুরকে এক সঙ্গে বেঁধে, পদ্মার কচি ধানের মতো প্রাণবন্ত হাওয়ায় মাতাল এক সন্ধ্যা নেমে এল জ্ঞান মঞ্চে। গত একুশে মে। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে কী অসীম নৈঃশব্দ্য! ছোট প্রাণের ছোট ব্যথার সঞ্জীবিত ধারায় অবগাহন, সে কি মুখের কথা! এ অবগাহনে চেতনা আর আত্মাকে মিলিয়ে দিলেন মঞ্চের শিল্পীরা। অ্যাডভার্টাইজ়িং ক্লাব: কলকাতা, এসপিসি ক্র্যাফ্ট, সময়চারীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই গল্পযাপন বহুদিন মনে রাখবে কলকাতা।

মঞ্চে আলো ফুটতেই এক অপূর্ব বিন্যাস দৃশ্য.... ছোটগল্পের অন্তরালে থাকা ছোট ছোট প্রাণের নিতান্ত অন্তরঙ্গ ব্যথার পরিচয় ঘটল একটি ভাঙা দরজার ও-পার থেকে... দরজার ও-পারের অন্ধকারের ছায়াযুদ্ধ নেমে আসবে, এ-পারের অন্ধকারে বসে থাকা অজস্র দর্শকের দিনগত পাপক্ষয়ের জীবনযুদ্ধ হয়ে। সেই মঞ্চে এসে দাঁড়ান প্রবীণ অভিনেত্রী সোহাগ সেন, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’-এর নন্দর মা.... বয়স যাঁর কাছে একটা সংখ্যা মাত্র। নিপুণ অভিনয়ের সূক্ষ্ম কারুকাজে ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পের নিজস্ব আবেগবার্তাকে তুলে ধরলেন সোহাগ! তার পরেই যার কথা বলতে হয়, তিনি বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ! বাচনিক ভঙ্গি ও শব্দ উচ্চারণে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মূর্ছনা তাঁর গলায়। তন্বী কণ্ঠে পড়ে চলেন ‘রবিবার’ গল্পের অভীকের চিঠি, বিভার নারীরূপে কল্পিত আলোকসত্তা! অভিনেত্রী চৈতি ঘোষালের পাঠে ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পের মেজবউ-এর অন্তরাত্মার অভিঘাত উদ্বেল হয়ে ওঠে! শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায়, রুবাই মাইতি, সুতীর্থ বেদজ্ঞ সঙ্গত ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন ছোটগল্পের রক্তমাংসের মানবিক অনুভূতিগুলি। তবে ছোটগল্পে সাধারণ মানুষের জীবন স্পন্দন প্রগাঢ় সহানুভূতির সঙ্গে উচ্চারিত হয় সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এর পাঠে।

‘নষ্টনীড়’-এর চারু-অমলের কাহিনির অন্তরালে দুঃখ-দুর্যোগের শ্রেয় অনুরাগে পুড়ছিল আর একটি মানবী হৃদয়.... সেই হৃদয়ের নাম মন্দা! সুজয়ের পাঠে উঠে আসে মন্দার অপরিমেয় যন্ত্রণা, ‘বদনাম’ গল্পে পিতৃতান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সৌদামিনীর ‘ঘোমটা খসা’ অসাধারণ নারী হয়ে ওঠা, আবার ‘মুসলমানি গল্প’-এর হবির খাঁয়ের স্নেহমাখা প্রশ্রয় আর পিতৃত্ব। একাধারে নারী ও পুরুষ দ্বৈত কণ্ঠে অভিনয়, উভয় চরিত্রের আঁতের কথা তুলে ধরতে সুজয় পুরোমাত্রায় সফল।

অনুষ্ঠানের উপরি পাওনা শবনম মেঘালির অরূপ-সমাহিত কণ্ঠে, সুরে, উচ্চারণে গেয়ে চলা রবীন্দ্রগান.... তথাগত ও সুরজিতের যোগ্য সঙ্গত... চারপাশের ধ্বংস ও হতাশার ছবির মাঝে এক অপূর্ব স্থিতিময়তা যেন পূর্ণতা পেয়েছিল সেদিনের সন্ধ্যায়! ছিল বিশুদ্ধ আনন্দ উপলব্ধির ধ্রুবপ্রকাশ.... আর মনের অন্তরালে সেই অমোঘ উচ্চারণ... ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ!’

Sujoy Prasad Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy