Advertisement
E-Paper

আমার সিম্বা যেন থাকে দুধেভাতে

সিংহ মানেই কি শুধু পশুরাজ ? নাকি, সিংহরও একটা কাঁধ লাগে, যেখানে সে মাথা রেখে চোখের জল ফেলতে পারে? লায়ন কিং মানে জীবনচক্র ছাপিয়ে আরও অনেক কিছু। যেখানে প্রায় বাবাকে-না-পাওয়া সন্তান সারাজীবন খুঁজে চলে তার বাবাকেই। সিম্বা আর মুফাসার সম্পর্ক কেবল ঝাঁ চকচকে হলিউডি মোড়কেই ছিল না, বরং তাদের ভিতরে খুঁজে পাওয়া যায় সেই মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারকেও। যেখানে বাবা-মা চেয়ে এসেছেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। কিংবা সেই পরিবারকে, যেখানে বাবার অকালবিদায় এক লহমায় অনেকটা বড় করে দেয় সন্তানকে।

অর্পিতা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ১৯:১৬
জীবনবৃত্তের সন্ধানে নতুন ‘লায়ন কিং’।

জীবনবৃত্তের সন্ধানে নতুন ‘লায়ন কিং’।

‘আফ্রিকা বললে তোর সবার প্রথমে কী মনে পড়ে রে তোপসে?’

‘জঙ্গল!’

‘আর জঙ্গল বললে?’

‘জানোয়ার।’

‘আর কিং অব জানোয়ার বলতে?’

ফেলুদার প্রশ্নের উত্তর তোপসের মুখে আর বসাননি দীর্ঘদেহী পরিচালক। পরের দৃশ্যে সোজা শঙ্খ-উলুধ্বনির মধ্যে ঘোষাল বাড়ির দুর্গামণ্ডপ। যেখানে মা দুর্গার বাহনের মুখে চুইংগামের ভরসায় যা রাখা ছিল, শুধু ক্যাপ্টেন স্পার্ক আর র‌্যাক্সিটের বন্ধুত্ব নয়, বরং কয়েক প্রজন্মের বাঙালির নস্ট্যালজিয়া।

ক্যাপ্টেন স্পার্কের চিলেকোঠায়।

আরও কয়েক দশক পরে, ১৯৯৪-এ বাঙালি শৈশব আর কৈশোর আরও এক বার পশুরাজের দেখা পেল। তখন মধ্যবিত্ত পরিবারে গুটিগুটি পা রাখছে বিএসএনএল ল্যান্ডলাইন। পাড়ার মোড়ে মোড়ে ঝড়ের গতিতে বসছে পাবলিক টেলিফোন বুথ। আর টেলিভিশনে মেট্রো চ্যানেল। রাতের সুপারহিট মুকাবিলা তখনও নিষিদ্ধ ছোটদের জন্য। এহেন প্রাক শপিং মল-স্মার্টফোন-কফিশপ-মাল্টিপ্লেক্স যুগে এল একটা সিনেমা। রোল চাউমিনে সবে মুখ রাঙাতে শেখা বাঙালির বেশির ভাগ তখনও জানত ওয়াল্ট ডিজনি মানে শুধুই মিকি মাউজ আর ডোনাল্ড ডাক। সেই ভুল ভাঙিয়েছিল ‘লায়ন কিং’। তার আগে আরও অনেক অ্যানিমেটেড মুভি তৈরি করেছেন ওয়াল্ট ডিজনি। কিন্তু লায়ন কিং তাঁর সংস্থাকে যা পরিচিতি ও মাইলেজ দিয়েছিল, অন্য ছবি দিতে পারেনি।

সিংহেরও একজোড়া কাঁধ লাগে, চোখের জল ফেলার জন্য।

কিন্তু সিংহ মানেই কি শুধু পশুরাজ ? নাকি, সিংহেরও একটা কাঁধ লাগে, যেখানে সে মাথা রেখে চোখের জল ফেলতে পারে? লায়ন কিং মানে জীবনচক্র ছাপিয়ে আরও অনেক কিছু। যেখানে প্রায় বাবাকে-না-পাওয়া সন্তান সারাজীবন খুঁজে চলে তার বাবাকেই। সিম্বা আর মুফাসার সম্পর্ক কেবল ঝাঁ চকচকে হলিউডি মোড়কেই ছিল না, বরং তাদের ভিতরে খুঁজে পাওয়া যায় সেই মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারকেও। যেখানে বাবা-মা চেয়ে এসেছেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। কিংবা সেই পরিবারকে, যেখানে বাবার অকালবিদায় এক লহমায় অনেকটা বড় করে দেয় সন্তানকে।

বিশ্বায়নও নাকি বাঙালিকে বড় করে দিয়েছে? তাই বোধহয় স্কাইপে চোখ রাখা নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একাকিত্বের দুঃখ ভুলে যান বিদেশে সন্তানের ছবি দেখে। সিকি দশক আগে তাঁদের পাশে বসেই হয়তো কচি চোখ আর কাঁচা মন মুগ্ধ হয়েছিল সিম্বাকে দেখে। সে দিনের ফুরফুরে কচি আজ ভারাক্রান্ত সংসারী। বরং তাদের থেকে অনেক বেশি জানে তাদের সন্তানরা। যাদের হাতেখড়ি হয়েছে আইপ্যাড আর আইফোনে। তাই তাদের জন্য হাজির নতুন লায়ন কিং। পুরনো একমাত্রিক সিনেমায় মন ভরে না আজকের শৈশবের। চোখে থ্রি-ডি চশমা, হাতে চিজ দেওয়া পপকর্ন ছাড়া আবার সিনেমা-দেখা হয় নাকি?

নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন মোড়কে পুরনো গল্প।

তাই নতুন করে আসে আলাদিন, মোগলি অথবা সিম্বা। কিন্তু তারা কি আদৌ টেক্কা দিতে পারছে পুরনোদের? হয়তো পারছে। হয়তো পারছে না। সবই নির্ভর করছে দর্শকের উপর। পুরনো প্রজন্ম বলবে, আমাদের সেই ‘জঙ্গল জঙ্গল পতা চলা’-র কাছে সেভেন ডি-ও ম্লান। আর চোখ ফুটেই ইউটিউব দেখা নতুন প্রজন্ম বলবে, ‘ইটস সো বোরিং!!’ আসলে, যে কোনও ছবির ফিডব্যাক নির্ভর করে নস্ট্যালজিয়ার গভীরতার উপরে। শুক্রবার, ১৯ জুলাই মুক্তি পাওয়া নতুন ‘লায়ন কিং’-ও নিঃসন্দেহে সেই পথেই হাঁটবে।

প্রথম লায়ন কিং একটা মাইলস্টোন। শুধু আর্থিক দিক দিয়েই নয়, বাকি সব দিক দিয়েই ওয়াল্ট ডিজনি লম্বা লাফ দিয়েছিল এই ছবির উপর ভর করেই। তাই তুল্যমূল্য বিচার আসবেই। সম্পূর্ণ ভারচুয়াল রিয়্যালিটিতে শুট করা হয়েছে নতুন লায়ন কিং। তার জন্য বক্স অফিস উপচে পড়বে, সে ভবিষ্যৎবাণী করতে সিনেবোদ্ধা লাগে না। এই প্রযুক্তিকে ফিল্ম মেকিংয়ের ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে। পরিচালক জন ফাভরু তার জন্য নিন্দিত হবেন, নাকি নন্দিত হবেন, তা বলবে আগামী দিন। আপাতত ইন্টারনেট মগ্ন এই তথ্যে যে সিনেমার শুটিংয়ে কাস্ট ও ক্রু বিশেষ চশমা পরে কাজ করেছেন।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেমাও এখন প্রযুক্তি-সর্বস্ব।

প্রথম লায়ন কিং ভারতে মুক্তি পেয়েছিল শুধু ইংরেজিতে। কিন্তু তার উত্তরসূরি বহুভাষিক। হিন্দি ভার্সনে মুফাসা স্বয়ং কিং খান। সিম্বা তাঁর পুত্র। এই নিয়ে যে খবর ট্রেন্ডিং তা হল দু’জনের কণ্ঠ একই রকম লেগেছে শুনতে। কিন্তু ট্রেলর আর ছবির মধ্যে পার্থক্য কয়েক যোজন। ডাবিং যেমন সাফল্য দিতে পারে, তেমনই ছবিকে ডুবিয়েও দিতে পারে। তাই পর্দায় চোখের পাশাপাশি কান থাকবে শাহরুখ, আরিয়ান, আসরানি বা তামিলে অরবিন্দ স্বামীর কণ্ঠের দিকে। আর মন? সে কোথায় পাড়ি দেবে, সে নিজেও জানে না। ঠিক যেমন জানত না কাজল, তার বাবাকে কেমন দেখতে? শুধু এইটুকু বুঝেছিল, একগাল দাড়িগোঁফওয়ালা ‘বন্ধু’-র ঘাড়ে চেপে বসলে কলকাতায় বাবার কাছে যাওয়া যায়। সিম্বাও কি যেতে পেরেছিল বাবার কাছে? না কি তার খোঁজা শেষ হয়নি এখনও যেমন প্রতিটা মেয়ে খোঁজে বাবাকে, তার জীবনসঙ্গীর মধ্যে। অথবা বিদেশে প্রজেক্টে ঘাড়গোঁজা ছেলে কম্পিউটার-ক্লিষ্ট চোখ রাখে কালপুরুষের দিকে। ছোটবেলায় তাকে রাতের আকাশে তারা-চেনানো লোকটা তো আজ চলে গিয়েছে কালপুরুষেরই কাছে!

‘বন্ধু’-র সঙ্গে বাবার খোঁজে।

সিম্বা আর মুফাসা বসে থাকে পাহাড়ে কিনারে। জীবনবৃত্ত মেলানো জ্যামিতির বৃত্তের থেকেও জটিল। আবার সহজও। সেই সহজপাঠের গপ্পোই তো ‘দ্য লায়ন কিং’!

আরও পড়ুন: ধুতি-শার্টে সর্বভারতীয় বাঙালিই থেকে গেলেন হেমন্ত

আরও পড়ুন: পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন অর্জুনের বান্ধবী গ্যাব্রিয়েলা

The Lion King Simba Mufasa Shahrukh Khan Aryan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy