রতন থিয়ম আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারের স্তম্ভ, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তার অনেক কারণও রয়েছে। রতনের থিয়েটারের যে ভাষা, তা একেবারে স্বতন্ত্র। তিনি নিজে শুধু থিয়েটার করেননি, মণিপুরী থিয়েটারের আঙ্গিকটাই বদলে দিয়েছেন। মণিপুরের মার্শাল আর্টে পারদর্শীদের নিয়ে নাট্যদল বানিয়েছিলেন। সেই দলে যাঁরা ছিলেন তাঁরা কিন্তু কেউই অভিনেতা নন! রতন একটি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। যাকে বলে শিকড় থেকে মানুষ নিয়ে, তাদের গড়েপিটে অভিনেতা বানিয়েছিলেন। এ জন্য দীর্ঘ অনুশীলন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে, তাঁর দলের প্রত্যেককে।
রতনের নাটকে গানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একই ভাবে দৃশ্যকল্প তৈরিতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে আধুনিক নাট্যের বয়ান। আবার শিকড়ের টানও রয়েছে। এই যে মিশ্রণ, ভারতীয় থিয়েটারে এই বিশেষ ধারা সকলে আনতে পারেননি। আধুনিক যে মঞ্চ-বয়ান, থিয়েটারকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়া— হাতেগোনা কয়েক জন এই কাজটি করতে পেরেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রতন। এই ক্ষেত্রে জাপানে এক নাট্য ব্যক্তিত্ব তাদাশি সুজ়ুকির নামও করতে হয়। অভিনয়শৈলীর একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করেছিলেন তিনিও।
আরও পড়ুন:
রতনের নাটক মন দিয়ে যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন, মহাভারতের কাহিনি থেকে শুরু করে শেক্সপিয়রের বিয়োগান্ত নাটক— কী অনায়াসে মঞ্চে তুলে ধরতেন! আলাদা একটা নাট্যভাষ তৈরি করেছিলেন। যা সত্যিই একটা ভারতীয় থিয়েটারের আলাদা একটি অধ্যায়।
বাংলা থিয়েটারের সঙ্গেও রতনের যোগ ছিল। ওঁর প্রথম কাজ দেখেছি নান্দীকার জাতীয় নাট্যমেলায়। কলকাতার সঙ্গে ওঁর নিবিড় যোগ ছিল। শুধুই কলকাতা নয়, মফস্সলে, বোলপুরে গিয়ে অনেক কাজ করেছেন নাট্যকর্মীদের সঙ্গে। তার উপরে এমনিতেই আমরা প্রায় প্রতিবেশী রাজ্য। শেষের দিকে রতন ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তখনও চিকিৎসার জন্য এই শহরের উপরেই ভরসা ছিল তাঁর। এখানকার চিকিৎসকেরা বহু বার তাঁকে সুস্থ করেছেন। অনেকেই হয়তো ভাববেন, বাংলার সঙ্গে যাঁর এত আত্মিক যোগ তিনি কি বাংলা নাটক পরিচালনা করার ইচ্ছাপ্রকাশ কখনও করেছিলেন? না, রতনের সে রকম কোনও ইচ্ছার কথা কখনও জানাননি।