Advertisement
E-Paper

ত্রিমূর্তি

কলকাতার বড় ক্লাব পারেনি। পারেননি কোনও ইভেন্ট ম্যানেজার। বা সংগঠক । অসাধ্যসাধন করলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বহু বছর পর একসঙ্গে নিয়ে এলেন ভারতীয় ফুটবলের ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে। তুলসীদাস বলরাম, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী। ওঁরা দেখলেন ‘লড়াই’। একমাত্র ফুটবলই আজও তাঁদের মেলাতে পারে। হলের ভেতর দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।কলকাতার বড় ক্লাব পারেনি। পারেননি কোনও ইভেন্ট ম্যানেজার। বা সংগঠক । অসাধ্যসাধন করলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বহু বছর পর একসঙ্গে নিয়ে এলেন ভারতীয় ফুটবলের ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে। তুলসীদাস বলরাম, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী। ওঁরা দেখলেন ‘লড়াই’। একমাত্র ফুটবলই আজও তাঁদের মেলাতে পারে। হলের ভেতর দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
Share
Save

একজন ৮০।

একজন ৭৮।

আর একজন ৭৬।

প্রথম জন তুলসীদাস বলরাম তাঁর উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে সচরাচর বেরোন না। শত অনুরোধেও টলানো মুশকিল।

দ্বিতীয় জন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দিন আগেই তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে ফিরেছেন হাসপাতাল থেকে।

আর তৃতীয় জন চুনী গোস্বামী যে কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে।

তিপ্পান্ন বছর আগে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে এই তিন জনই ছিলেন রহিম সাহেবের সোনাজয়ী দলের সদস্য। ফের এই তিন বন্ধু একত্রিত হলেন মঙ্গলবার। একত্রিত করল তাঁদের আদরের ফুটবল।

শীতের সন্ধ্যায় রাজারহাটের মাল্টিপ্লেক্সে তিন জনই হাজির প্রসেনজিত্‌ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘লড়াই’ (৯ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে) ছবির বিশেষ শো দেখতে। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কোচিং জীবনের মতোই এলেন সবার আগে। তিনি আবার এই ছবির পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর পিছু পিছুই এলেন তাঁর ‘গোঁসাই’ চুনী গোস্বামী। আর বলরামকে নিয়ে ছবির পরিচালক পরমব্রত ঢুকলেন ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ছ’টা পঁচিশে। বলরামকে দেখেই পিকে নস্ট্যালজিক, “কী রে বলরাম, মনে পড়ছে জাকার্তা এশিয়ান গেমসের সেই সেমিফাইনালটা। আমরা তিন জনে ঠিক এ ভাবেই পাশাপাশি গ্যালারিতে বসে ম্যাচটা দেখেছিলাম। আজও আড্ডা দিচ্ছি সেই ফুটবলকে নিয়েই।”

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘর অন্ধকার। ছবি শুরু।

তার আগে চুনীর বয়স নিয়ে রসিকতা শুরু করে দিলেন পিকে। “ও কিন্তু বয়সটা দু’বছর কমিয়ে বলছে।” হাসিমুখে চুনীর পাল্টা, “আরে, আমার বয়স তো পঁচাশি। কমালাম কোথায়?” মিনিট পাঁচেক সবাই চুপ। যেন টাইম মেশিনে করে পাড়ি দিলেন পাঁচ দশক আগের নিজেদের ফুটবল কেরিয়ারের আনাচে কানাচে। নীরবতা ভাঙলেন সেই পিকেই। ছবির কোচ রায়ান সেবাস্তিয়ান (প্রসেনজিত্‌)-কে দেখেই বললেন, “সমঝদারো কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়। কী ভাবে জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া একজন কোচের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হবে সেটা বোঝাতে মাত্র দু’টো ক্লাস লেগেছিল। শেখাতে গিয়ে কুস্তি বা পাখি পড়াতে হয়নি।”

ছবি তখন মাঝপথে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো এতক্ষণ ছবি দেখতে থাকা চুনী গোস্বামী এ বার ছুড়লেন প্রশ্নটা, “হঠাত্‌ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কোচের আমদানি করতে হল কেন?” ছবির প্রথমার্ধ টানা দাঁড়িয়ে থাকা পরমব্রত বললেন, “যে সব চরিত্র নিয়ে এই লড়াই তাঁদের জীবন ও সমাজ সম্পর্কে অজ্ঞ একজনকেই দরকার ছিল। তাই রায়ানের চরিত্রট এসেছে।” শুনে ঘাড় নেড়ে এ বার সায় দিলেন চুনী। “আমাদের ছোটবেলায় অস্ট্রেলীয় বা ইংরেজ কোচরা খেলাধূলার অ, আ, ক, খ-শেখাতেন হাতে ধরে।

পরের আড়াই ঘণ্টায় যা হল, তা ‘লড়াই’য়ের নিছক দৃশ্যায়ন নয়, ভারতীয় ফুটবলের তিনমূর্তি যেন টাইম মেশিনে চেপে ঘুরে এলেন পাঁচ আর ছয় দশকে তাঁদের ফুটবলজীবনের আনাচে কানাচে। আর পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে রয়েছেন সেখানে গল্প থাকবে না হয় নাকি? পিকে বলতে শুরু করলেন, “ফুটবল দিয়ে সমাজ ব্যবস্থাটারও পরিবর্তন হবে না কেন? কৃষ্ণাঙ্গ পেলেকে যদি শ্বেতাঙ্গ ববি মুর ফুটবলের জন্য জড়িয়ে ধরতে পারেন। আফ্রিকায় গৃহযুদ্ধ থেমে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ক্রিসমাসের ছুটিতে যদি যুযুধান দুই পক্ষ ফুটবল খেলে ‘ফ্রেন্ডশিপ’ বিতরণ করতে পারে তা হলে এখানে হবে না কেন?”

ক্লাইম্যাক্সটা এল শেষের কুড়ি মিনিটে। তিন জনেই যখন নড়েচড়ে বসলেন।

ছবিতে তখন কুসুমডি একাদশের সঙ্গে কলকাতার ম্যাচের বিরতি। প্রসেনজিত্‌ ভোকাল টনিক দিচ্ছেন। তার পর বললেন, “স্রেফ পাঁচ মিনিট চাই। গ্রামের জন্য জিতে এসো।” তারপরেই টানটান উত্তেজনার মুহূর্ত। ছবি শেষ হতেই শিশুর মতো ছুটতে ছুটতে গিয়ে তুলসীদাস বলরাম গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন পরমব্রতকে। “আমার পা তো ঠকঠক করে কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল নিজেই নেমে পড়ি। এখনও ঘোরের মধ্যে রয়েছি।” শরিক হলেন পিকে-চুনীও। পিকে চলে গেলেন রহিম সাহেবের জমানায়। এ ভাবেই তো জাকার্তা এশিয়ান গেমসে রহিম সাহেব বলেছিলেন, “ওস্তাদ আজ মুঝে তোফা দো। এক ট্রফি দো।তার পর তিনজনে দিলেন জমাটি আড্ডা। যেখানে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, আইএসএল সব এল।

হঠাত্‌ চুনী-পিকে-বলরামকে নিয়ে এই বিশেষ শোয়ের কারণ কী?

পরমব্রত বললেন, “বলরাম স্যরের জন্যই বুক ঢিপঢিপ করছিল। প্রদীপদা তো আমার ছবিতে পরামর্শদাতা হিসেবে ছিলেনই। চুনীদাও প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যান। কিন্তু বলরাম স্যরকে ফোন করতেই ভয় হচ্ছিল। কিন্তু কপাল ঠুকে ফোন করতেই বলেছিলেন, বন্ধু অসুস্থ। সুস্থ হলে নিশ্চয়ই আসবেন। গাড়ি চালিয়ে ওঁকে নিয়ে এলাম,” বললেন ছবির পরিচালক।

শোয়ের শেষে ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন তিন বন্ধু। একে অপরের পিঠে হাত রেখে আড্ডা মারলেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, আইএসএল নিয়ে। তখন রাত সাড়ে ন’টা। একে অপরকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়লেন গাড়িতে। ফুটবল আবার কাছে আনল ভারতীয় ফুটবলের ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে।

শীতের রাত বলে বিদায় মুহূর্তে চোখের জলটা দেখতে পেলাম না তিন বন্ধুর।

ছবি: কৌশিক সরকার।

lorai debanjan bandopadhay chuni goswami tulsidas balaram parambrata chattopadhay exclusive ananda plus pk bandopadhay

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}