Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Tollywood

আওয়াজ তুলল টলিউড...

দেশজুড়ে চলা প্রতিবাদ আন্দোলনে চুপ ছিলেন অনেক টলি তারকাই। মুখ খুললেন আনন্দ প্লাসের সামনে

সৌমিত্র, শুভশ্রী, প্রসেনজিৎ।

সৌমিত্র, শুভশ্রী, প্রসেনজিৎ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

এ বঙ্গের কবিই লিখেছিলেন, তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়... সে কথা যে দিনে দিনে এতটা সত্যি হয়ে যাবে, তা হয়তো শ্রীজাত নিজেও ভাবেননি। দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদ চলছে। সেলেব্রিটি মহলও চুপ নেই। মুম্বইয়ে অনুরাগ কাশ্যপ, বিশাল ভরদ্বাজ, সুধীর মিশ্র, তাপসী পান্নু, রিচা চড্ডা, দিয়া মির্জা, রাহুল বসু, স্বরা ভাস্করেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বটেই, রাস্তায় নেমেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু সে ছবি টলিউডে কোথায়? প্রথম সারির প্রায় একজন তারকাকেও রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। কয়েক জন অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব। কিন্তু সে অর্থে টলিউড প্রতিবাদে মুখর হয়নি।

কিন্তু কেন? প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। যিনি শুরু থেকে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতা করে আসছেন। আলিগড়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরমব্রতর কথায়, ‘‘জানি না কেন বাকিরা মুখ খুলছে না। হয়তো ঘটনাগুলো এখনও তাদের মানসিক পীড়ার কারণ হচ্ছে না।’’ নিয়মিত টুইট করছেন পরমব্রত। ২৭ ডিসেম্বর বিড়লা অ্যাকাডেমির প্রতিবাদী সভাতেও ছিলেন। ‘‘এখন আমাদের ভীষণ ভাবে রাস্তায় নামা প্রয়োজন। ‘আমি রাজনীতি বুঝি না’ বা ‘বিষয়টা ঠিক জানি না’, এই জাতীয় কথাগুলো বলার সময় চলে গিয়েছে। আজ রাস্তায় না নামলে আর কবে নামব আমরা?’’ প্রশ্ন পরমব্রতর।

জেএনইউ-এ পড়ুয়াদের উপরে হামলার ঘটনায় সরব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ‘‘আমার বাক্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে! যে ঘটনা ঘটেছে, তা তো আমার দেশেই ঘটেছে! এ কি সত্যি আমার দেশ? আমি চিনতে পারছি না আমার দেশকে। এ দেশ কখনওই আমার দেশ হতে পারে না, যে ভাবে সেখানে হাড়-হিম-করা আক্রমণ নেমে আসছে ছাত্রছাত্রীদের উপরে। এ মৃত্যু-উপত্যকা আমার দেশ নয়।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত বিরোধিতা করে যাচ্ছেন অপর্ণা সেন। সৌমিত্র, অপর্ণার মতো প্রবীণদের পাশাপাশি প্রতিবাদে মুখর হয়েছে টলিউডের আগামী প্রজন্মও। ঋদ্ধি সেন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়রা রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, জিতের মতো তারকারা চুপ কেন? পরিস্থিতি যে দিকে গিয়েছে সেখানে মুখ বুজে থাকা মানে কি অন্যায়কে সমর্থন করা নয়?

এ প্রসঙ্গে আনন্দ প্লাসের কাছে অবশ্য নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন প্রসেনজিৎ, ‘‘আজ দেশের যা পরিস্থিতি তাতে আমার ভূপেন হাজারিকার দুটো লাইন খুব মনে পড়ছে। ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু...’ আজ সকলে বড্ড অস্থির, বড্ড অধৈর্য হয়ে উঠেছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি, মান আর হুঁশ এই দুই মিলেই মানুষ হয়। জেনএনইউ-তে যেটা হয়েছে, তার পিছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ আছে কি না জানি না। যত বার মানুষ মনুষ্যত্ব হারাবে, তত বার আমি প্রতিবাদ করব।’’

নুসরত জাহান বলছেন, ‘‘এ রকম ভাবে দেশের আওয়াজ বন্ধ করা যাবে না। সরকারকে অনুরোধ করব যে, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে এ রকম গুন্ডামি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’

আবীর চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু বৃহত্তর প্রতিবাদে শামিল হতে অধিকাংশকেই দেখা যাচ্ছে না। অনেক সেলেব্রিটির মতে, তারকা জীবনের কিছু বিড়ম্বনা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরোধিতা করে কিছু লিখলে পাল্টা পোস্ট ধেয়ে আসে। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বলতে চাননি শুভশ্রী। কিন্তু আনন্দ প্লাসের কাছে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, ‘‘ছাত্রদের উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বলিনি মানে এই নয় যে, প্রতিবাদ করছি না। যে যাঁর মতো করে প্রতিবাদ করছেন।’’ পরমব্রত যেমন বললেন, ‘‘ট্রোলকে অবজ্ঞা করাটা সবচেয়ে সহজ পন্থা। কিন্তু মাঝেমাঝে জবাব দেওয়াটাও জরুরি হয়ে পড়ে। মনে হয়, বুঝিয়ে বললে লোকটা হয়তো বুঝবে।’’

নানা কারণে ট্রোলড হয়ে থাকেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও নিজের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেখানে বক্তব্য রাখাটাই কি যথেষ্ট? ‘‘সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন জনমত তৈরি হচ্ছে। তাই আমার যা কিছু বলার ওখানেই বলব,’’ বললেন সৃজিত। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আবার তাঁর ছবির মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করতে চান। বলছেন, ‘‘প্রতিবাদের প্রতিফলন মানুষের কাজের মধ্য দিয়েই হওয়া উচিত।’’

সচরাচর কোনও বিতর্কে জড়ান না কোয়েল মল্লিক। এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কোয়েলের বক্তব্য, ‘‘আমি সম্পূর্ণ ভাবে বিরোধিতা করি এই আইনের। এবং আমি স্টুডেন্টদের পাশে। জেএনইউ-র এই ঘটনা খুব খারাপ একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমাদের সন্তান কি তা হলে স্কুল, ইউনিভার্সিটিতে নিরাপদ নয়? এটা অত্যন্ত দুঃখের, যন্ত্রণার সময়। নতুন বছরে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এত দিন বলতাম, সবাই যেন ভাল থাকে, সুস্থ থাকে। কিন্তু ২০২০-তে এসে বলতে হচ্ছে, মানসিক সুস্থতা দরকার। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে মন-প্রাণ দিয়ে সব রকম ভাবে প্রতিবাদের সঙ্গে রয়েছি।’’ রাস্তায় নামবেন কি? ‘‘প্রয়োজন হলে আমি সঙ্গে রয়েছি,’’ জবাব নায়িকার।

টলিউডের অনেক সেলেব্রিটিই যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন, তা নয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তাঁরা অনেকেই নিজেদের মতামত, প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেটাই বা কম কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood CAA Prasenjit Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE