ছবি করিয়েরা আসলে গল্প বলিয়ে। সবার উপরে গল্প সত্যি। স্মৃতিভ্রংশে গুরুতর অসুস্থ এক প্রাক্তন পরিচালক চরিত্রের (মনোজ মিত্র) মুখ দিয়ে ‘উমা’র শুরুতেই কথাগুলো বলিয়ে নিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এ ছবিতে যে গল্পটা সৃজিত শুনিয়েছেন, ট্রেলার আর অজস্র সাক্ষাৎকারের দৌলতে এত দিনে সেটা মোটামুটি সবাই জানে। ছবির গল্পের আড়ালের গল্পটাও অনেকের জানা। সেটা ৭ বছরের ইভান লেভারসেজের গল্প। ক্যানসারে মৃত্যুপথযাত্রী ইভানের ইচ্ছেয় কানাডার সেন্ট জর্জ-এর বাসিন্দারা ২০১৫-র অক্টোবরেই তৈরি করেছিলেন আস্ত একটা বড়দিন। সান্তা এসেছিল, কৃত্রিম তুষারে ভরেছিল মাটি। ইভান মারা গিয়েছিল ‘সত্যিকারের’ বড়দিনের আগেই।
ইভানের ছায়াতেই উমার জন্ম। উমা (সারা সেনগুপ্ত) থাকে সুইৎজ়ারল্যান্ডে, বাবা হিমাদ্রির (যিশু সেনগুপ্ত) সঙ্গে। বাবা গল্প শোনায় কলকাতার দুর্গাপুজোর। উমা ভাবে, কলকাতায় গেলে হয়তো দেখা হবে ছোটবেলায় ছেড়ে যাওয়া মা মেনকার (সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে। এমন সময়ে হিমাদ্রি জানতে পারে, দুর্গাপুজো পর্যন্ত হয়তো বাঁচবেই না উমা। হিমাদ্রি আসে কলকাতায়। বন্ধু বরুণ (নীল মুখোপাধ্যায়) ও তার স্ত্রী নীরার (নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে বসে ঠিক করে, মার্চ-এপ্রিলের কলকাতাতেই সিনেমার সেটের মতো দুর্গাপুজো তৈরি করবে তারা। প্রোডাকশন ম্যানেজার গোবিন্দ (রুদ্রনীল ঘোষ) তাদের পাঠায় ব্যর্থ পরিচালক ব্রহ্মানন্দ চক্রবর্তীর (অঞ্জন দত্ত) কাছে। নিজেকে শেষ বার প্রমাণ করতে মরিয়া ব্রহ্মানন্দ কাজ শুরু করে তার ‘স্বপ্নের কারখানায়’। উমার ‘মা’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে আসে মারিয়াম (শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়)। ‘সাজানো’ দুর্গাপুজোয় প্রবল বাধা দেয় কট্টর হিন্দুত্ববাদী মহীতোষ সুর (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। ভাড়াটে গুন্ডা পাঠায়। যে গুন্ডার চরিত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়! অন্তত ন’জন পরিচালক অভিনয় করেছেন এই ছবিতে।
দেখা যাক, গল্পটা কী ভাবে শুনিয়েছেন আমাদের গল্প বলিয়ে। সত্যি বলতে, প্রথমার্ধে মনখারাপই হয়। কোথায় গেল ‘চতুষ্কোণ’ বা ‘হেমলক সোসাইটি’র ধাক্কা দেওয়া মুহূর্তগুলো? প্রথম শোয়ের সাধারণ দর্শক ধরে ফেলছেন, এই দৃশ্যে কী ঘটবে, পরের দৃশ্যে কী হবে। বুঝে ফেলছেন, কখন হবে বিরতি! হিমাদ্রির স্বপ্নের দৃশ্যটা নিতান্ত সাধারণ। ব্রহ্মানন্দ চরিত্রে অঞ্জন যে কথাগুলো বলছেন, প্রায় একই ছাঁদের সংলাপ নিজের অভিনীত-পরিচালিত ছবিতে অজস্র বার বলেছেন তিনি। বরং ছক্কা হাঁকাচ্ছেন রুদ্রনীল। আর ভীষণ ভাল লাগছে উমাকে। কে বলবে, যিশু-কন্যা সারার এটাই প্রথম ছবি!
উমা পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায় অভিনয়: সারা, যিশু, অঞ্জন, নীল, শ্রাবন্তী, সায়ন্তিকা, রুদ্রনীল ৬/১০
আক্ষেপের অনেকটা অবশ্য মিটিয়ে দেয় দ্বিতীয়ার্ধ। তৈরি হয় ভাললাগা-মাখা বেশ কিছু মুহূর্ত। শক্ত জমি পান অভিনেতারাও। এত ক্ষণে অচেনা মোড় দেখা যায় গল্পে। যদিও তখন কৌতূহল মূলত ক্লাইম্যাক্স ঘিরে। অর্থাৎ বিজয়া। দুর্গা, মানে উমার বিদায়। তবে উমার আশপাশের মানুষগুলোর নাম পৌরাণিক চরিত্রের আদলে না হলেও খুব ক্ষতি হতো না। বাবা হিমাদ্রি, মা মেনকা, স্বপ্নের স্রষ্টা ব্রহ্মানন্দ, মহিষাসুর ভেঙে মহীতোষ সুর— আরোপিত শুনিয়েছে।
অনুপম রায়ের গানগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আগেই। তবে সবচেয়ে গভীর সময়টা তৈরি হল ছবি শেষের পরে। শেষ গানের সঙ্গে পর্দায় পড়তে থাকে ছোট্ট ইভানের একের পর এক ছবি। হলের অন্তত অর্ধেক দর্শক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ইভানকে দেখে গেলেন শেষ পর্যন্ত। উমার গল্প জিতে গেল এখানেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy