Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চলে গেলেন পার্থ মুখোপাধ্যায়

পার্থ মুখোপাধ্যায় বিয়ে করেছিলেন সংগীত পরিচালক অসীমা ভট্টাচার্যকে। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন অনেক দিন ধরেই। গত এক মাস ধরে ডায়ালিসিস চলছিল। গতকাল ভোর ৩-১৫ নাগাদ ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়।

‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিতে পার্থ

‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিতে পার্থ

সুদেষ্ণা বসু
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:৪০
Share: Save:

মিষ্টি হাসি, নিষ্পাপ চাহনি আর পাশের বাড়ির ছেলের ইমেজ ... এতেই জয় করে নিয়েছিলেন আপামর বাঙালির মন। এক সময় উত্তমকুমারের ভাই বা ছেলের ভূমিকায় পার্থ মুখোপাধ্যায়ের আসন ছিল পাকা। ‘বালিকা বধূ’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘অগ্নীশ্বর’, ‘বাঘবন্দি খেলা’র মতো অসংখ্য হিট ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

এম কম পড়তে পড়তেই তিনি সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে পড়া আর শেষ করা হয় না। পার্থ গানও গাইতেন খুব ভাল। এবং অনেক কালচারাল অনুষ্ঠানে গানের জন্য ডাক পড়ত। ১৯৫৬ সালে পরিচালক চিত্ত বসুর ‘মা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি, বাচ্চা ছেলের ভূমিকায়। সেই ছবির সূত্রে পার্থকে স্টুডিয়োয় দেখেন স্বনামধন্য পরিচালক তপন সিংহ। পরিচালকের মনে ধরে যায় নবাগত ছেলেটি। তার পর তপনবাবু যখন ‘অতিথি’ ছবিটি করছেন, ডাক পড়ে পার্থর। লিড রোল তারাপদর ভূমিকায়। সে ছবিতে তিনি এত ভাল অভিনয় করেছিলেন যে, জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ছবিটি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও যায়। কিন্তু মাত্র কয়েকটি ভোটের জন্য তিনি সেখানে পুরস্কার পাননি।

১৯৬৭ সালে তরুণ মজুমদারের ‘বালিকা বধূ’তে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে। এ রকম একটি চরিত্রের জন্য পার্থকে নির্বাচিত করা প্রসঙ্গে তরুণবাবু বললেন, ‘‘অতিথি’র যখন শ্যুটিং চলছিল, তখনই ও ‘বালিকা বধূ’র জন্য সিলেক্টেড হয়। আমাকে একজন এসে বলেছিল, তপনবাবুর ছবিতে একটি ছেলে অভিনয় করছে, আপনি ওকে এই ছবিটির জন্য দেখতে পারেন। তখনই ওকে নিই।’’ নতুন অভিনেতাদের নিজের হাতে তৈরি করে নেওয়ার বিশেষ সুখ্যাতি তো এই বর্ষীয়ান পরিচালকের আছেই। পার্থকে কী ভাবে ওই চরিত্রটির জন্য তৈরি করেছিলেন তিনি? কী মনে হয়েছিল ওঁকে দেখে? ‘‘মনে হয়েছিল ও খুব স্বতঃস্ফূর্ত। আমার অফিসঘরে তখন রিহার্সাল হত। মৌসুমী আর ও দু’জনেই আসত। ওকে দেখেই বোঝা গিয়েছিল, ও খুবই ভাল করবে। গানের প্রতিও ওর অনুরাগ ছিল। তপনবাবুর ছবিতে যে গানগুলো ছিল, সেগুলো গেয়ে শোনাত,’’ জানালেন প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদার।

‘বালিকা বধূ’র পর ১৯৭১-এ ‘ধন্যি মেয়ে’, ১৯৭৫-এ ‘বাঘবন্দি খেলা’ ও ‘অগ্নীশ্বর’। তিনি সিনেমাতেই য়ে শুধু মহানায়কের ভাই বা ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তা নয়। উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্কও ছিল। সুচিত্রা সেনের সঙ্গেও তিনি একটি উল্লেখযোগ্য ছবিতে কাজ করেন, ‘ফরিয়াদ’। সুচিত্রার ছেলের ভূমিকায়। পরিচালক তপন সিংহ ভীষণ ভালবাসতেন পার্থকে। এই পরিচালকের প্রায় আটটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে ‘হাটেবাজারে’, ‘অন্তর্ধান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পার্থ মুখোপাধ্যায় বিয়ে করেছিলেন সংগীত পরিচালক অসীমা ভট্টাচার্যকে। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন অনেক দিন ধরেই। গত এক মাস ধরে ডায়ালিসিস চলছিল। গতকাল ভোর ৩-১৫ নাগাদ ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। মৃত্যুকালে অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partho Mukerjee passes away
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE