মনামী-মানালি-সন্দীপ্তা-ইন্দ্রাণী
যশের কাছে কি ফিরবে শবনম? শ্যামাকে ভুলে মামকে বিয়ে করবে নিখিল? ইরাবতী কি ফিরে পাবে প্রাপ্য সম্মান? ছোট পর্দার দর্শক বসে রয়েছেন অপেক্ষায়। দর্শক যেমন মিস করছেন শ্রীময়ী, ইরাবতী, শবনম, শ্যামাকে, তেমনই এই চরিত্রাভিনেত্রীরাও মিস করছেন তাঁদের কাজের জগৎ। কিন্তু এর বাইরে? কেউ মিস করছেন মনের মানুষকে, কারও বা মনে পড়ছে বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডার মুহূর্ত। আবার কারও একা একা ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে। লকডাউনে ঘরে বসেই ‘মিস’ করার নানা কাহিনি শোনালেন টেলি-তারকারা।
আড্ডা ছাড়া কি বাঙালি থাকতে পারে? বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফসোসের সুর শ্রীময়ী অর্থাৎ ইন্দ্রাণী হালদারের কণ্ঠে। স্কুল-কলেজ ও আশপাশের বন্ধুদের নিয়ে তৈরি তাঁর দল। নিয়মিত কারও না কারও বাড়িতে বসত মজলিশ। এই আড্ডাই ছিল ইন্দ্রাণীর কাছে গ্রীষ্মের দুপুরে এক পশলা বৃষ্টির মতো। কেজো জগতে নিয়ে আসত টাটকা বাতাস। কিন্তু করোনার কোপে সবটাই বাতিল। ‘‘প্রত্যেকেই হাঁটা দূরত্বে থাকি। কিন্তু নিজেরাই ঠিক করেছি, লকডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বেরবো না,’’ দৃঢ় কণ্ঠস্বর ইন্দ্রাণীর। তাই মন খারাপের পিওন এলেই ডাক পাঠাচ্ছেন ভিডিয়ো কলে।
কিন্তু নিয়ম মানলেন না ইরাবতী অর্থাৎ মনামী ঘোষ। কোনও এক শান্ত, নির্জন পাহাড়ে চলে গিয়েছেন তিনি। সেখানে সবুজ গালিচামোড়া উপত্যকায় এক কাপ চায়ে খুঁজে পেয়েছেন মনের শান্তি। লকডাউনের মধ্যে কোথায় গেলেন মনামী? তিনি আসলে বেরিয়েছেন মানসভ্রমণে। মন চলে যাচ্ছে, কখনও দার্জিলিংয়ের হিমালয় আবার কখনও সুইৎজ়ারল্যান্ডের আল্পসে। ‘‘ছুটি পেলেই বেরিয়ে পড়তাম, তা সে ঘরের পাশে আরশিনগর হোক, বা বহু দূর। কিন্তু এমন হঠাৎ পাওয়া ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যেতে পারছি না,’’ একরাশ হতাশা তাঁর কণ্ঠে। বেড়ানোর আনন্দ ভীষণই মিস করছেন বলে জানালেন মনামী।
মনামীর মতো সন্দীপ্তা সেনেরও পায়ের তলায় সরষে। কয়েক মাস আগেই ‘আয় খুকু আয়’ ধারাবাহিক শেষ হয়েছে। পরবর্তী কাজ এপ্রিলের শেষ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। মাঝের সময়টুকু জার্মানি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাদ সাধল করোনাভাইরাস। তাঁর বাতিল হওয়া জার্মানি ট্রিপই সবচেয়ে বেশি মিস করছেন অভিনেত্রী। অখণ্ড অবসরে নিজের বেড়ানোর ছবি দেখে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরনো ছবি আপলোড করে দুঃখ ভোলার চেষ্টা করছেন।
বিরিয়ানির নাম শুনলেই মন উথালপাথাল হয় মানালি দের। যাঁকে ভালবাসেন, তাঁর সঙ্গে বিরিয়ানি খাওয়ার অনাবিল আনন্দের মুহূর্ত মিস করছেন সব সময়ে। ‘‘কলকাতার বিভিন্ন রেস্তরাঁয় ঘুরে ঘুরে মাটন বিরিয়ানি ট্রাই করতাম। প্রতি সপ্তাহে এ ভাবে চলতে থাকায় অভিমন্যুর (মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) তেল ও চর্বি জাতীয় খাবারে নিয়ন্ত্রণ জারি হয়। কিন্তু বিরিয়ানি ছাড়তে পারিনি দু’জনের কেউই,’’ খানিকটা লাজুক শোনাল মানালির স্বর। তিনি এখন অন্তহীন অপেক্ষায়, কবে ফিরবে সেই দিন।
অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিয়াশা রায়ও। মিস করছেন সেটের মেকআপ রুমের খোশগল্প। ‘কৃষ্ণকলি’ দিয়েই তিয়াশার ছোট পর্দায় প্রবেশ। তাই এই মুহূর্তে তাঁর সবচেয়ে ভালবাসার জায়গাও সেটিই। সিনিয়র শিল্পীদের কাছ থেকে পাওয়া কাজের টিপস, সমবয়সিদের সঙ্গে মশকরা বা সকলের সঙ্গে স্কুলের মতো লাঞ্চবক্স শেয়ার করা, সবই মনে পড়ছে তাঁর। ‘শ্যামা’ বা ‘মাম’ হয়ে নিজেকে ফের দেখতে চান পর্দায়, খুব শিগগিরই। সেই অপূর্ণতা তাঁকে ঘিরে রেখেছে এখন বিষাদে।
হঠাৎ পাওয়া ছুটি নয়, দিতিপ্রিয়া রায় চেয়েছিলেন পরীক্ষাশেষে পাওয়া ছুটির অনাবিল আনন্দ। লকডাউনের কারণে অপ্রত্যাশিত ভাবে ছুটি পেয়েও তিনি প্রতি মুহূর্তে মিস করছেন তাঁর সেই স্বপ্নের ছুটি। ‘‘এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। এডুকেশনের পরীক্ষা দেওয়া এখনও বাকি,’’ বললেন দিতিপ্রিয়া। বাস্তবেও টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছেন রাণী রাসমণির চরিত্রাভিনেত্রী। ছুটির মজা তাই তিনি কারও সঙ্গেই ভাগ করে নিতে পারছেন না। পাশাপাশি পরীক্ষা শেষ না হওয়ার অস্থিরতায় ভুগছেন বলেই জানালেন। পরীক্ষা দেওয়ার পরে অখণ্ড অবসর মিলবে কি না, তা নিয়েও ধন্দে দিতিপ্রিয়া।
স্নাতক স্তরে সোশিয়োলজি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্ট জ়েভিয়ার্সে পড়বেন বলে ইচ্ছে রয়েছে দিতিপ্রিয়ার। তেমনই মানালিও বাড়িতে বিরিয়ানি তৈরির রেসিপি শিখছেন। আবার সন্দীপ্তা-মনামী মনে মনেই হারিয়ে যাচ্ছেন কোথাও। সকলেই আশাবাদী, করোনার কালো দিন কাটিয়ে আগামী দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy