সামনে বড়দিন। উৎসবের মরসুম। তার আগে মুক্তি পেয়েছে চারটি বাংলা ছবি। তালিকায় ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’, ‘ডিপ ফ্রিজ’, ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’ আর ‘পুলিশ’।
চারটি ছবির মুক্তি মানে বাংলা ছবির বাণিজ্যে জোয়ার, এমনটাই আশা করেন প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার এবং ছবির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে। মুক্তির চার দিন পরে চারটি ছবি কি সেই আশা পূরণ করতে পারল?
খোঁজ নিতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল পরিবেশক এবং প্রেক্ষাগৃহের মালিক শতদীপ সাহা, বিনোদিনী (সাবেক ‘স্টার’) প্রেক্ষাগৃহের মালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের মালিক অরিজিৎ দত্ত, মিনার-বিজলি-ছবিঘর প্রেক্ষাগৃহের মালিক সুরঞ্জন পাল, ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’ ছবির প্রযোজক সঙ্গীতা সিংহের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
শতদীপ চারটি ছবির মধ্যে এগিয়ে রেখেছেন জয়ব্রত দাসের ‘দি অ্যাকাডেমি’কে। তাঁর কথায়, “ইচ্ছা করেই শুরুতে কম প্রেক্ষাগৃহ এবং কম শো নিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল, ভাল ফল করলে প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা নিজেরাই ছবির প্রতি আগ্রহ দেখাবেন। সেটাই হচ্ছে। ৪৬টি প্রেক্ষাগ়ৃহ, ৪৮টি শো নিয়ে ছবিমুক্তি ঘটিয়েছিলাম। শো বেড়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও বাড়ছে।” এর ফলে চার দিনে ছবিটি ১০ লক্ষেরও বেশি আয় করে ফেলেছে বলে পরিবেশকের দাবি। লোকমুখে প্রচারে ‘দি অ্যাকাডেমি’ যদি কোটির ক্লাবেও পা রাখে, তাতেও অবাক হবেন না পরিবেশক শতদীপ। তাঁর এ-ও ধারণা, প্রথম সপ্তাহান্তের থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে এই ছবি আরও বেশি ভাল ফল করবে। তাঁর যুক্তি, “এই ধরনের ছবির কথা লোকের মুখে ছড়ায় বেশি।”
আরও পড়ুন:
বাকি ছবির ফলাফল কী? বিনোদিনী প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার জয়দীপ জানিয়েছেন, তিনি ‘ডিপ ফ্রিজ’ আর ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’ দেখাচ্ছেন। দুটো ছবির মধ্যে এগিয়ে রেখেছেন দ্বিতীয়টিকে। তাঁর কথায়, রবিবার রামকমলের ছবির ৪০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি এও জানিয়েছেন, চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাওয়ায় যতটা বাণিজ্যের আশা করেছিলেন ততটাও হচ্ছে না। তিনি তাই দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে তাকিয়ে।
মিনার-বিজলি-ছবিঘর প্রেক্ষাগৃহের মালিক সুরঞ্জনের দু’টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে বাকি তিনটি ছবি। তাঁর মতে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করছে রামকমল মুখোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’। তার পরেই তালিকায় অর্জুন দত্তের ‘ডিপ ফ্রিজ’। আয়ের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও সুরঞ্জন বলেছেন, “দর্শকের কাছে রামকমলের ছবির চাহিদা বেশি। মিনার প্রেক্ষাগৃহেও একই ফলাফল।”
‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’-এর ব্যবসা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন প্রযোজক সঙ্গীতা। তাঁর কথায়, “৯০টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিমুক্তি ঘটিয়েছি। চার দিনে ১১টি শো হাউসফুল। দর্শক আসছেন আমাদের ছবি দেখতে। শো আরও বাড়ানো হবে।” তবে আয়ের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তিনিও দেননি। জানিয়েছেন, সাত দিন না গেলে সঠিক আয় দেওয়া সম্ভব নয়।
এ দিকে প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার অরিজিৎ বলছেন অন্য কথা। তাঁর প্রেক্ষাগৃহে অর্জুনের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ছবি চলছে। খুব যে ভাল আয় করেছে সেই ছবি, তেমন আভাস মিলল না তাঁর কথায়। অরিজিৎ বলেছেন, “শুনছি, রামকমলের ছবি প্রথম সপ্তাহেই আমার প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে। আমার মতে ছবিটিকে আরও এক সপ্তাহ চালানো উচিত।” কেন এই সিদ্ধান্ত? জবাবে তাঁর বক্তব্য, “সম্ভবত, আশানুরূপ ফল করছে না।” যদিও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ছবির প্রযোজক সঙ্গীতা।
চারটি ছবির মধ্যে রাজা চন্দের ‘পুলিশ’ ছবিটিও আছে। এই ছবি সম্পর্কে মুখে কুলুপ পরিবেশক, প্রেক্ষাগৃহের মালিক— সবার। পরিচালক এই মুহূর্তে গোয়ায়। বলেছেন, “প্রযোজকের সঙ্গে কথা না বলে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।”
যদিও এই ফলাফল মোটে চার দিনের। প্রযোজক-পরিবেশক থেকে হলমালিক— সকলেরই বক্তব্য, এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরেই ছবির ভাগ্য স্পষ্ট হয়।