Advertisement
E-Paper

ফেলু রহস্যের সমাধান

আবীরের বদলে কে? জোর চমক দিলেন সন্দীপ রায়। নতুন কোনও নাম নয়। ফিরিয়ে আনলেন পুরনো ফেলুদাকে — সব্যসাচী চক্রবর্তী। ফেলু-তদন্ত শেষ করলেন ইন্দ্রনীল রায়।দিন দশেক আগে গরমের এক সন্ধেবেলা।১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডের (গেটের বাইরে যদিও নীল-সাদা রংয়ের ফলক বলছে ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’) সেই বিখ্যাত বাড়ি থেকেই একটি ফোন যায় দক্ষিণ কলকাতার হরিপদ দত্ত লেনের ফ্ল্যাটে।

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২২

দিন দশেক আগে গরমের এক সন্ধেবেলা।

১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডের (গেটের বাইরে যদিও নীল-সাদা রংয়ের ফলক বলছে ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’) সেই বিখ্যাত বাড়ি থেকেই একটি ফোন যায় দক্ষিণ কলকাতার হরিপদ দত্ত লেনের ফ্ল্যাটে।

‘‘বেণু, কোথায় তুমি? কালকে একটু সন্ধের দিকে বাড়ি আসবে?’’ ফোনে অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীকে বলেন সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়।

যেমন আদেশ তেমন কাজ। পরের দিন সেই চারতলার লম্বা বারান্দাওয়ালা বাড়িতে হাজির হন সব্যসাচী।

ড্রয়িংরুমে বসে সিগারেট ধরিয়ে সন্দীপ রায় ধীরে ধীরে বলেন, ‘‘বেণু, তুমি কি চাও ফেলুদা ফ্র্যাঞ্চাইজি বন্ধ হয়ে যাক? চাও না তো? আমি তোমার কথা শুনে অনেককে দেখলাম। কিন্তু কারও মধ্যেই আমি আমার মনের মতো ফেলুদা পাচ্ছি না। খুব খুশি হব, যদি তুমি আবার ফেলুদা হও।’’ বলে অ্যাশট্রে-তে সিগারেটের ছাই ঝাড়েন সন্দীপ।

সেই সময় ঘরে ছিলেন সন্দীপ রায়ের স্ত্রী ললিতা রায়ও। সব্যসাচীকে দেওয়া সন্দীপ রায়ের প্রস্তাব শুনে তিনি তখন মুচকি মুচকি হাসছেন।

প্রস্তাব পেয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি সব্যসাচীরও। খুব দেরি করেননি, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান তিনি। এর পরই সবার জন্য চা বলতে ভিতরে ঢুকে যান ললিতা।

সমাধান হয় হালফিলের টালিগ়ঞ্জের সবচেয়ে বড় রহস্যের।

আক্ষরিক অর্থেই এ যেন ফেলুদা রিটার্নস।

যে দিন থেকে আবীরকে ফেলুদা অথবা ব্যোমকেশ — দু’টোর একটা বেছে নিতে বলেছিলেন সন্দীপ, সে দিন থেকেই গোটা টালিগঞ্জের সব আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটাই আলোচনা। কে হচ্ছেন ফেলুদা ?

ভাসতে থাকে নানা নাম। এর মধ্যেই খোদ সব্যসাচী চক্রবর্তী, সত্যজিৎ রায়ের নাতি সৌরদীপের ইমেলের মাধ্যমে সন্দীপ রায়কে কয়েকটি শো-রিল পাঠান। তার মধ্যে একটা ছিল বাংলা থিয়েটার ও সিনেমা-র প্রতিভাবান অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের।

বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে খবরও বেরিয়ে যায় অনির্বাণ হচ্ছেন পরের ফেলুদা। কিন্তু তার পর আনন্দplus-কেই সন্দীপ রায় প্রথম জানান, অনির্বাণকে তিনি ফেলুদা হিসেবে মানতে পারছেন না। আনন্দplus-এর স্রবন্তী বন্দ্যোপাধায়কে তিনি জানিয়েছিলেন, “অনির্বাণের অনেক ধরনের ছবি দেখেছি কিন্তু ফেলুদার জন্য ও এখনও পরিণত নয়। অনেকের কাছে শুনেছি ও সাঙ্ঘাতিক অভিনেতা। কিন্তু ওর চোখেমুখে ফেলুদার ম্যাচিওরিটি দেখতে পাইনি।’’

এর পর আবার শুরু হয় খোঁজ।

উঠে আসতে থাকে নানা নাম। ব্যাপারটা এত দূর গড়ায় যে, ইরফান খান, কে কে মেনন, রণদীপ হুডার নাম নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু ফেলুদাকে বাঙালি হতেই হবে — সন্দীপ রায়ের এই আল্টিমেটামের সামনে বাদ চলে যান তাঁরা।

তত দিনে আবীরের প্রত্যাবর্তন হতে পারে এমন খবরও রটে যায় স্টুডিয়ো পাড়ায়। মাঝখানে শোনা যাচ্ছিল কৌশিক সেন, যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও নাকি আলোচনা হচ্ছে সন্দীপ রায়ের ড্রয়িং রুমে।

শনিবার দুপুরে যখন পরিচালকের বাড়ি পৌঁছনো গেল, তখন সেই বাড়িতে যেন চাপা দুঃখের সুর। ২৪ বছর আগে এই ২৩ এপ্রিলেই ‘পথের পাঁচালী’ ছবির স্রষ্টা সেই ছ’ফুট সাড়ে চার ইঞ্চির লম্বা মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ছবির সামনে বসেই সন্দীপ শুরু করলেন কথাবার্তা।

“আমি অনেককে দেখলাম। কিন্তু কাউকে পেলাম না। আবীরকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। কিন্তু ওর একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হচ্ছিল। লোকে ‘বাদশাহী আংটি’ দেখে এসে বলছিল, ‘‘আবীর, তোমার ব্যোমকেশটা বেশ লাগল।’’ আমার এটা ভাল লাগছিল না। সবাইকে দেখেটেখে আমি এটা বুঝেছি বেণু ছাড়া আর সত্যি কেউ নেই। আমি খুব খুশি যে বেণু আগের মতোই এক্সাইটেড। হি ইজ দ্য বেস্ট চয়েস,’’ খুশি খুশি বলেন সন্দীপ রায়।

তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে আবার বলা শুরু করেন, ‘‘তা ছাড়া এই বছরটাও স্পেশাল। এটা ফেলুদার পাবলিকেশনের পঞ্চাশতম বছর। ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ যা তিনটি কিস্তিতে বেরিয়েছিল। ডিসেম্বর ১৯৬৫ এবং ১৯৬৬-র জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। সে জন্যই আমার একটা বড় প্ল্যান আছে,’’ বলেন সত্যজিৎ-পুত্র।

বড় প্ল্যানটা কী?

‘‘যেহেতু এটা পঞ্চাশ বছর ফেলুদার, তাই সেটার সঙ্গে একটা ট্রিবিউটের ব্যাপার থাকে। তাই ঠিক করেছি এ বারে ছবির নাম হবে ‘ডাবল ফেলুদা’। এত দিন গল্পের নামে ছবি হয়েছে। এই প্রথম ফেলুদার নাম ফিল্মের টাইটেলে থাকবে। আর এ বার যে গল্প দু’টি নিয়ে ছবি করছি সেই দু’টোই বাবার খুব প্রিয়। প্রথমটি ‘সমাদ্দারের চাবি’, দ্বিতীয়টি ‘গোলকধাম রহস্য’।

একটা ফার্স্ট হাফ। অন্যটা সেকেন্ড হাফ। লালমোহনবাবু নেই কোনওটাতেই। ছবির প্রযোজক মুম্বইয়ের ইরোস ইন্টারন্যাশনাল,’’ বলে সিগারেট ধরান সন্দীপ।

তার কাছ থেকেই জানা গেল, এখনও তোপসে কে হবে সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ছবিটির শ্যুটিং শুরু হবে জুলাই মাস থেকে। “জুলাইতে শ্যুটিং শুরু করে ডিসেম্বরে বড়দিনের সময় রিলিজ করার প্ল্যান আছে আমার আর ইরোসের,’’ সাফ জানান তিনি।

এর পাশাপাশি ফেলুদার অফার পেয়ে একই সঙ্গে উত্তেজিত এবং চিন্তিত সব্যসাচী নিজেও।

‘‘আমার ভয়ও করছে, আবার উত্তেজিতও লাগছে। এটা ভেবে ভাল লাগছে যে বাবুদা আজও আমার উপর ভরসা রেখেছেন। আমি চেষ্টা করব আবার একটা দারুণ ফেলুদা দর্শককে উপহার দিতে। আমার কাছে তো এটা ঘরে ফেরার মতো। ইট ইজ আ হোমকামিং,’’ রোববার সকালে বলছিলেন সব্যসাচী।

কিন্তু যখন আবীরকে ফেলুদা হিসেবে চূড়ান্ত করেছিলেন সন্দীপ রায়, তার পর পর আনন্দplus-এই এক সাক্ষাৎকারে সব্যসাচী জানিয়েছিলেন, বয়স হচ্ছে বলেই এ বার তিনি ফেলুদার রোল থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে।

‘‘হ্যাঁ, বলেছিলাম তো। ওজন বাড়ছিল, একটু ভুঁড়ি হচ্ছিল, চামড়া ঝুলে যাচ্ছিল। তারপর অবশ্য আমি ওজনটা কমিয়েছি তবে বয়সটা তো কমেনি। সে জন্যই আমার যে একটু ভয় ভয় করছে না তা নয়। কিন্তু বাবুদা ক্রমাগত সাহস জুগিয়ে চলেছেন। মনে হয় না খুব একটা অসুবিধা হবে ফেলুদা করতে। ওই চরিত্রটাকে যে আমি বড্ড ভালবাসি,’’ বলেন সব্যসাচী।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, হালফিলের অন্যতম জটিল ‘সিনে-রহস্য’‌র যে সমাধান হল এই সিদ্ধান্তের ফলে, সেটা মেনে নিচ্ছেন সন্দীপ-সব্যসাচী দু’জনেই।

কিন্তু তাকে খোঁজা নিয়ে গোটা বিষয়টা যে এই রকম ‘হাইলি সাসপিসাস’ হয়ে উঠবে সেটা বোধহয় কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবেনি ফেলু মিত্তির।

Feluda Sandip Roy Satyajit Ray সত্যজিৎ রায় ফেলুদা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy