Advertisement
১০ মে ২০২৪
Suman Mukherjee

Suman Mukherjee: হ্যাঁ-হ্যাঁ বলা সং হতে পারব না, কলকাতায় নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল, সটান সুমন

সুমন বুঝেছেন, কলকাতা তাঁকে যতই হতাশ করুক, তিলোত্তমাই তাঁর প্রকৃত প্রেমিকা।

মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিতে সুমন পাড়ি দিয়েছিলেন আরবসাগর তীরে।

মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিতে সুমন পাড়ি দিয়েছিলেন আরবসাগর তীরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ১২:২৮
Share: Save:

একাধিক সফল নাটকের নাট্যকার, পরিচালক। সমালোচক-প্রশংসিত ছবিও পরিচালনা করেছেন, বাংলাতেই। শিক্ষিত দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘মাধব মালঞ্চ কইন্যা’, ‘কাঙাল মালসাট’, ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’, ‘হারবার্ট’-এর মতো নাটক, ছবি। সেই সুমন মুখোপাধ্যায় গত পাঁচ-সাত বছর ধরে ছিলেন মুম্বইবাসী। বাংলা প্রতি মুহূর্তে তার ভূমিপুত্রের অভাব অনুভব করেছে। কিন্তু সাহসে ভর করে জিজ্ঞেস করতে পারেনি, সুমন আপনি বাংলা থেকে দূরে কেন? আনন্দবাজার অনলাইন সেই অসম্ভবও সম্ভব করেছে শনিবাসরীয় শীত-সন্ধ্যায়। ‘অ-জানা কথা’য় আমন্ত্রিত অতিথি সুমনের কাছে আন্তরিক ভাবেই জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন বাংলা থেকে এত দূরে তিনি?

কী বললেন মঞ্চ-পর্দার সফল মানুষটি? জবাবে কখনও একাধিক কারণ, কখনও মৃদু অনুযোগ উঠে এসেছে। কখনও ধরা দিয়েছেন সাময়িক ‘একা’ হয়ে যাওয়া এক শিল্পীর সত্তা। যিনি সব সমস্যার সমাধান খোঁজেন তাঁর কাজে, পেশায়। সুমনের দাবি, ‘‘কবীর সুমনের গানের কথা ধার করে বলছি, আমি কখনও হ্যাঁ-হ্যাঁ বলা সঙের দলে যাব না। একই ভাবে ছবি বা নাটক করতে গিয়ে বিশেষ কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠীতে যদি নাম লেখাতে হয়, সেটাও আমি করব না। তার থেকে একাকীত্বই শ্রেয়।’’ এবং সুমন উপভোগ করেন তাঁর সেই একাকীত্ব। পাশাপাশি, মুম্বই চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

সুমনের এই একাকীত্বের নেপথ্য-কারণ রাজনীতি। ব্রাত্য বসু, কৌশিক সেন, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং তিনি একটা সময় প্রায় হরিহরআত্মা ছিলেন। সুমনের দাবি, মননে, কাজে বাকি তিন জনের থেকে সমৃদ্ধ হতেন তিনি। সুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতেন চার জনেই। আজও হন। অন্তরে পরস্পর পরস্পরের প্রতি চোরা টানও অনুভব করেন। কিন্তু সেটা আর আগের মতো প্রকাশিত হয় না। কারণ, রাজনীতি! বাকিরা হয়তো সময়ের স্রোতে গা ভাসাতে পেরেছেন। নাট্যকার-অভিনেতা পারেননি। ফলে, তিনি কোথাও যেন আটকিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দমবন্ধ হয়ে আসতে আরম্ভ করেছিল। তখনই মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নিতে পাড়ি দিয়েছিলেন আরবসাগর তীরে। পরিচালকের রসিকতায়, ‘‘শরীর ভাল রাখতে অনেকেই হাওয়া বদল করেন। আমি হাওয়া বদল করেছি মন ভাল রাখব বলে!’’

সেটা ২০১২। একাকীত্ব, বন্ধুদের থেকে দূরত্বে কাটানো যাপিত জীবন তাঁর চোখে কলকাতাকে ধীরে ধীরে করে তুলেছিল অসাড়! একটি করে দিন কেটেছে। তিনি যেন লড়তে লড়তে ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়েছেন। কাজের আবহাওয়া, কাজের পরিবেশ, সবার মনোভাব তাঁর বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছিল। কাকতালীয় ভাবে তখনই তিনি ডাক পান মুম্বই থেকে। একঘেয়েমি কাটাতে বেশ কিছু বছরের জন্য ঘাঁটিও গাড়েন সেখানে। ৫-৭ বছর মায়ানগরীতে কাটানোর পরে কি সেই শহর আপন হয়েছিল সুমনের? এই জায়গা-বদলই চোখ খুলে দিয়েছে তাঁর। পরিচালক বুঝেছেন, অন্যত্র কাজ করা আর নিজের শহরে থেকে সৃষ্টি করার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বিনোদন দুনিয়ায় উচ্চমানের নাটক বা ছবির জন্ম দিতে গেলে ভূমিপুত্র হতে হয়। কলকাতা তাঁকে যতই হতাশ করুক, তিলোত্তমাই তাঁর প্রকৃত প্রেমিকা। এই উপলব্ধির পরেই অভিমানী প্রেমিক ফের ফিরে এসেছেন তাঁর প্রেয়সী শহরের বুকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suman Mukherjee Actor Director
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE