Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি

মাস্টারমশাই নন। সাংবাদিককে বলা। ভোররাতে নায়িকা আর তারকা ক্রিকেটারকে একসঙ্গে দেখার পর। গার্লফ্রেন্ড আর সহবাস ভারতীয় ক্রিকেটে বরাবরই ছিল। লিখছেন গৌতম ভট্টাচার্য।হরভজন সিংহ-(কু)খ্যাত সেই ‘মাঙ্কিগেট’ টেস্ট ম্যাচের ভোররাত। ভারত সিডনি ক্রিকেট মাঠে টেস্ট হেরে গিয়েছে অন্তত ছ’ঘণ্টা হল। অস্ট্রেলিয় সময়ে রাত সাড়ে তিনটে। তবু টিম হোটেলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ সচিন তেন্ডুলকরের জন্য ধৈর্যশীল অপেক্ষা। মাঠে আসলে হরভজন-সহ সচিন আর অধিনায়ক কুম্বলেকে ডেকেছেন ম্যাচ রেফারি। সেই সাক্ষ্যদান এমন ম্যারাথন কেন চলছে বুঝতে পারছি না। কিন্তু হোটেলের গেটে অপেক্ষা ছাড়া উপায়ও নেই।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

হরভজন সিংহ-(কু)খ্যাত সেই ‘মাঙ্কিগেট’ টেস্ট ম্যাচের ভোররাত। ভারত সিডনি ক্রিকেট মাঠে টেস্ট হেরে গিয়েছে অন্তত ছ’ঘণ্টা হল। অস্ট্রেলিয় সময়ে রাত সাড়ে তিনটে। তবু টিম হোটেলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ সচিন তেন্ডুলকরের জন্য ধৈর্যশীল অপেক্ষা। মাঠে আসলে হরভজন-সহ সচিন আর অধিনায়ক কুম্বলেকে ডেকেছেন ম্যাচ রেফারি। সেই সাক্ষ্যদান এমন ম্যারাথন কেন চলছে বুঝতে পারছি না। কিন্তু হোটেলের গেটে অপেক্ষা ছাড়া উপায়ও নেই। মাঠে অন্তত জনা চল্লিশেক সাংবাদিক অপেক্ষায়। তার চেয়ে এটা অনেকটা নিরিবিলি। সচিনকে ধরার সেরা লোকেশন। ধারে কাছে দেখছি মাত্র দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী। দিল্লির মহিলা ক্রীড়া সম্পাদক। আর কলকাতার সিনিয়র ক্রিকেট লিখিয়ে।

অপেক্ষায় প্রায় ঘুম পেয়ে যাওয়ার জোগাড়। হঠাৎই সামনে একটা কালো মার্সেডিজ এসে থামল। নির্ঘাত সচিন! একটু এগিয়েছি। কোথায় সচিন! এক সুন্দরী নেমে এলেন। এসেই আবার ভূত দেখার মতো গাড়িতে ঢুকে গেলেন। মনে হল ওয়াসিম জাফরের স্ত্রী। ওয়াসিমের স্ত্রীকে টিম হোটেলে দেখেছি। খুব সুন্দরী। যদিও এত রাতে তিনি কী করছেন বুঝলাম না। গাড়িটা থেমেই রইল। মিনিট পাঁচেক বাদে সেখানে থেকে বেরিয়ে এলেন ভারতের ফ্ল্যামবয়েন্ট মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ঘণ্টাখানেক আগে এসসিজি-তে রান পাননি। কিন্তু এই ভোর রাতে তিনি কোথা থেকে এলেন? তাঁকেও কি তার মানে সাক্ষ্যদানের জন্য আইসিসি রেফারি মাইক প্রোক্টর ডেকেছিলেন?

এরই মধ্যে এবিপি ক্রীড়াবিভাগ থেকে ফোন এসেছে। অস্ট্রেলিয়ায় রাত সাড়ে তিনটে হলে কী হবে, কলকাতায় তো সবে সন্ধে সাতটা। ভরপুর প্রাইমটাইম। কলকাতা অফিস জানতে চাইছে সচিনের কোনও ‘কোট’ পাওয়া গিয়েছে কি না? তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখছি দিল্লির মহিলা সাংবাদিক আর ক্রিকেটার মিলে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলছেন। সাংবাদিক এ বার এগিয়ে এল। বলল, “তোমায় একটা কথা দিতে হবে।”

—কী কথা?

—সুস্পষ্ট একটা কমিটমেন্ট চাই। এক্ষুনি যা দেখলে সেটা তোমার কাগজে লিখবে না।

ক্রিকেটারটি তখন সামান্য দূরে। মুখভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এ বার অবাকই লাগল। কিছুই তো দেখিনি। তা হলে লিখবটা কী? আর আমি ছাড়া এখানে কলকাতার আর একজন সাংবাদিকও তো আছে। তেমন কিছু দেখে থাকলে সে লিখবে না, তার নিশ্চয়তা কি?

দিল্লির সাংবাদিক জানাল, “ও অলরেডি কথা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা শিওর হতে পারছি না তোমাকে নিয়ে। তাই ‘অমুক’ পরিষ্কার একটা প্রতিশ্রুতি চাইছে।”

তখনও বুঝেই উঠতে পারছি না চেপে যে যাব, চাপবটা কী? রাত সাড়ে তিনটেয় প্লেয়ার ফিরছে এটা কোনও মতেই দোষের হতে পারে না। টেস্ট যেখানে আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তা হলে রিপোর্টারকে এত কীসের ভয়।

‘যা দেখেছি সেটা আর লেখার মতো কী? ওয়াসিম জাফরের স্ত্রীকে...’ বলায় এ বার মৃদু ধ্যাতানি খেলাম। “ন্যাকামি কোরো না। ইউ হ্যাভ সিন হার ভেরি ক্লিয়ারলি অ্যান্ড ইউ আর নট রাইটিং।”

এই প্রথম বিদ্যুৎ-ঝলকের মতো উপলব্ধিটা মাথায় এল। আরে আলোআঁধারিতে বুঝতেই পারিনি। এ তো মুম্বইয়ের সেই দীর্ঘাঙ্গী নায়িকা যাঁকে আজ সিডনি মাঠে ধরার নানা চেষ্টাতেও ভারতীয় সাংবাদিককুল পায়নি। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎই তিনি পাপারাৎজি এড়িয়ে গা ঢাকা দেন।

থেমে থাকা মার্সেডিজ ততক্ষণে চলতে শুরু করেছে। ক্রিকেটারটি যে তিন সাংবাদিকের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন। কেউ কিছু লিখবে না। হোটেলের পিছনের গেট দিয়ে এ বার তাঁরা ঢুকে যাবেন।

পরে শুনেছিলাম নায়িকা গাড়ি থেকে বেরিয়ে মিডিয়া দেখে প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। সচিনের সাক্ষ্যদানের ব্যাপারটা তাঁরা জানতেন না। ভেবেছিলেন ওঁদের ধরার জন্যই ভোররাতেও মিডিয়া ওত পেতে আছে। পরে শুনলাম সেই বিখ্যাত নায়িকার শ্যুটিং তখন সিডনিতেই চলছিল। কিন্তু ফিল্ম ইউনিটের হোটেল ছেড়ে সিডনি টেস্ট চলাকালীন আগাগোড়াই তিনি ভারতীয় টিম হোটেলে ছিলেন। বলা নিষ্প্রয়োজন, একই ঘরে ছিলেন তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে!

২০০৮ জানুয়ারি। আর ঘটনা হিসেবে মোটেও নতুন দিশারি নয়। ভারতীয় ক্রিকেটারের ঘরে বান্ধবী ঐতিহাসিক ভাবে তার আগেও থেকেছে। শারজাতে আশির দশকের মাঝামাঝি রবি শাস্ত্রী আর অমৃতা সিংহ লিফ্ট থেকে বেরোচ্ছেন। মুখোমুখি পটৌডি-শর্মিলা। শাস্ত্রী আবার আলাপ করিয়ে দিলেন এই যে অমৃতা। বহু বছর বাদে যখন সইফ-অমৃতা বিয়ে হল, সেই আলাপ করানোটা মনের মধ্যে অদ্ভুত ফ্ল্যাশব্যাক করেছিল। শাস্ত্রী তখন ভারতের পিন আপ স্টার। আজকের বিরাট কোহলির মতোই আবেদন। প্রতিটি মেয়ে তাঁর ঘরে ফোন করছে। আর তাতে সুবিধে হচ্ছে না, কারণ সেটা ধরছেন অমৃতা।

ভিনু মাঁকড় একবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে ওখানকার এক পাক-নর্তকীর প্রেমে এমন মজেছিলেন যে তাঁকে নিয়ে বিভোর থাকতেন। সেই যুগেও হোটেলে নিয়ে আসতেন। তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভিনুকে থামানো যায়নি। ভারতীয় বোর্ডও ব্যাপারটা ইস্যু করেনি।

আজহারউদ্দিন যখন ভারত-অধিনায়ক এবং সঙ্গীতা বিজলানির সঙ্গে বিয়ে হয়নি, বারেবারেই এই প্রসঙ্গ উঠত। সঙ্গীতাকে একাধিক বার ভারতীয় টিম হোটেলে ঢুকতে এবং বেরোতে দেখা যেত। ইডেনে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের দু’দিন আগে প্রচণ্ড রেগে প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছিলেন কোচ অজিত ওয়াড়েকর। কারণ? আজহার প্র্যাকটিস ছেড়ে দমদম এয়ারপোর্ট চলে গিয়েছিলেন সঙ্গীতাকে আনতে। তাঁর মনে হয়েছিল, সঙ্গীতা একা ঢুকলে এমন নিরাপত্তারক্ষী অধ্যুষিত টিম হোটেলে ঢুকতে পারবেন না। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর ওয়াড়েকর প্রচণ্ড হতাশ হয়ে তাঁর অধিনায়কের জীবনে আবির্ভূত মহিলা সম্পর্কে যা বলেছিলেন, বাংলা সাহিত্যে তার সমতুল্য ‘বিষবৃক্ষ’-র কুন্দনন্দিনী।

কিন্তু ঘরে টানা থাকছে, না বেরিয়ে যাচ্ছে এ সব নিয়ে গোয়েন্দাগিরি ওয়াড়েকর বা তাঁর বোর্ড কেউই করেনি। মৃদু ফিসফাস হয়েছে। মিডিয়া জেনেছে। কিন্তু তখন ব্রেকিং নিউজ ছিল না। নেট ছিল না। আগ বাড়িয়ে ক্রিকেটারের ঘরে উঁকিঝুঁকি দিতে কেউ যায়নি। বিতর্ক একমাত্র হয়েছে যখন টিম খারাপ খেলেছে। জিতলে বান্ধবীদের থাকা না-থাকা নিয়ে কেউ আলোড়িত হয়নি।

আন্তর্জাতিক স্পোর্টসে স্ত্রী বা বান্ধবীদের ঘরে থাকা নিয়ে কোনও সর্বসম্মত নীতি নেই। কিন্তু এই হাইপ্রোফাইল শ্রেণিভুক্তদের ইংরিজিতে একটা নামকরণও হয়ে গিয়েছে যা বহুগ্রাহ্য।

‘ওয়্যাগ’ পুরো ফর্ম: ওয়াইভস্ অ্যান্ড গার্লফ্রেন্ডস।

ব্রাজিল বিশ্বকাপের সময়ও বৌ-বান্ধবীদের ঘরে রাখা উচিত কি না এ নিয়ে এক এক দেশ এক এক রকম ফতোয়া জারি করেছে। ব্রাজিল ঘরে রাখতে দেয়নি। কিন্তু ম্যাচের ফাঁকে স্কোলারি প্লেয়ারদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন একসঙ্গে মিলিত হতে।

ক্রীড়া-মনোবিদরা কেউ কেউ বলেছেন ফুটবল বা শ্যুটিংয়ের মতো খেলায় যেখানে একটা নির্দিষ্ট বিন্দুর ওপর মনোসংযোগ খুব জরুরি এবং গোটা শরীরের বলশালী মুভমেন্ট না হলেও চলবে, সেখানে যৌনমিলন টিম ম্যানেজমেন্ট স্বাগত জানাতেই পারে। একাধিক তারকা ব্যাটসম্যান বলেছেন আগের রাত্তিরের সহবাস তাঁদের টেনশন কমিয়ে মনোসংযোগ বাড়াতে পর্যাপ্ত সাহায্য করেছে।

অমৃতা সিংহ এবং সঙ্গীতা বিজলানি

তা হলে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ফুটবল কোচেরা ফাইনালের আগে স্ত্রীকে বাধ্যতামূলক বাড়ি পাঠিয়ে দিতে এত চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন কেন? চিমা ওকেরিকে একবার শিলিগুড়িতে ফাইনালের আগে ড্রেসিং রুম থেকে পাকড়াও করে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলার বিখ্যাত এক অভিনেত্রী। পরবর্তী কালে যিনি রাজনীতিতে অবতীর্ণ। পিকে তা নিয়ে এমন চিলচিৎকার জুড়েছিলেন যে কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর থেকেও বোধ হয় শোনা গিয়েছিল।

পরে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, ক্রিকেটারদের জন্য খেলার আগে সেক্স ঠিক আছে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যান বা শ্যুটারদের। কিন্তু ফুটবলে দাপট দেখাতে যে অ্যাডাক্টর মাসলের টপ কন্ডিশনে থাকা খুব জরুরি, সেটা সেক্সের সময় রগড়ানিতে ব্যবহারেই সাময়িক কমজোরি হয়ে যেতে পারে। তার প্রভাব পরের দিনের ম্যাচে পড়তে বাধ্য।

একই সঙ্গে পিকে মেনে নেন, ঘরে থাকতে না-দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল এমন নয়। “তখন বাইরে থেকে আমদানি হওয়া শুরু হয়। আর এই যে আমার প্লেয়ার ঘরে বসে ভাবতে থাকে ওই আসছে, ওই আসছে এটাও তো মনোসংযোগ চলে যাওয়া আর শরীরের ক্ষতি। প্রতিটি ফোনেই সে ভাবছে এই বোধহয় রিসেপশনে চলে এসেছে। লন্ড্রির ছেলে বেল বাজালেও সে ধড়ফড় করে খুলছে এই এল বুঝি। এতে অনেক হরমোনাল এনার্জি অপচয় হয়।”

অতীতের আন্তর্জাতিক টিমগুলোয় যেমন এর-ওর ঘরে মজলিশ বসত। কেউ সেই আড্ডায় নিয়মিত অনুপস্থিত থাকলে বলা হত ‘দ্যাখ তো ঘরে কাকে নিয়ে আছে।’ সেই চল এখন অনেক কম। মোবাইল, কম্পিউটার, প্লে-স্টেশন এই সব যেমন সামাজিক জীবনের চালচিত্র আমূল বদলে দিচ্ছে। পাশাপাশি বসা দুই যাত্রী যেমন আজকের দিনে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি পৌঁছনোর মধ্যেও আলাপ না করে কাটিয়ে দিতে পারেন। এই সমাজেও তাই। ওই সব ধ্যানধারণাই ভেঙে গিয়েছে যে টিম-প্লেয়ার মানে মাঠের বাইরেও তাকে সারাক্ষণ সবার সঙ্গে মিশতে হয়। সকালের ট্রেনিং থেকে শুরু করে সন্ধেবেলা কুল-ডাউন, জিমে যাওয়া এমনিতেই এতটা সময় ক্রিকেটারকে ঘরের বাইরে কাটাতে হয় যে তার পর তার বাইরে আসতে ভাল না-ও লাগতে পারে।

অনুষ্কার ঘরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় প্রশাসনিক ম্যানেজার সুনীল দেব। তিনি কি এত বছর ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থেকে এমন ঘটনা প্রথম দেখলেন? সুনীলের নিজের ব্যক্তিগত নৈতিকতার রেকর্ড কী বলে, সেই প্রসঙ্গ মুলতুবি থাক। তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল এই সারসত্যটা উপলব্ধি করা যে এ ব্যাপারে বাঁধাধরা আইন সম্ভবই না। পরিস্থিতি এবং টিমের অবস্থা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সামগ্রিক ভাবে উদারপন্থী হওয়াই ভাল কারণ এখন টপ স্পোর্টসম্যান মাত্রেই পেশাদার। উইম্বলডন ফাইনালের আগের রাতে বান্ধবীকে পাশের ঘরে রাখব কি না এই সিদ্ধান্ত যদি রাফায়েল নাদাল একক ভাবে নিতে পারেন, তা হলে বিরাট কোহলিরও সেটা নেওয়ার অধিকার আছে। পেশাদার প্লেয়ার নিজের ভাল সবচেয়ে টনটনে বোঝে। সে জানে নিজের ভাল না বুঝলে টিম থেকে বাদ হয়ে যেতে হবে এবং তখন এই ফাইভ স্টারের বিছানাই সে দেখবে না। এই অনুষ্কাই তো নিউজিল্যান্ড সফরেও ভারতীয় টিমের হোটেলে ছিলেন। কেউ প্রশ্ন তোলেনি কারণ সেখানে বিরাটের ব্যাটে প্রচুর রান ছিল। ফর্ম হারালেই যত দোষ ঘরে থাকা বান্ধবীর!

ভারতীয় বোর্ডে কেউ কেউ বলেছেন আপত্তি কী? ওরা তো কিছু দিন বাদে বিয়েই করে ফেলবে। মানে ক্যাজুয়াল বান্ধবীতে আপত্তি। স্ত্রী হলে সমস্যা নেই। নিজের কভারেজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি স্ত্রী-রা সন্তানসহ আবির্ভূত হলে কোনও কোনও সময় বান্ধবীদের তুলনায় জ্বালার পরিমাণ প্রভূত বেড়ে গিয়েছে।

পাকিস্তান সফরে যাওয়া এক ভারত অধিনায়ক যেমন কয়েক মাসের শিশুপুত্রসমেত স্ত্রী এসে যাওয়ার পর খেলার বাইরে ক্বচিৎ টিমের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। সাধারণত এত কমবয়েসি সন্তানকে আয়া-সমেত আনা হয়। এই ক্রিকেটার বলেছিলেন, “না আমাদের যেমন আয়া ছাড়াই মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় করা হয়েছে, আমার ছেলেকেও তাই করব।” সেটা বাড়িতে করা এক রকম। পাকিস্তানের মতো কঠিন সফরের মধ্যে সেটা করতে গেলে তার ঝকমারি আর এক রকম। খেলার আগুপিছু বেচারি ক্যাপ্টেনকে তাই টিম দেখতেই পেত না। আর বাচ্চা রাত্তিরে অনবরত কাঁদে বলে তাঁকে শুতে হত নীচে মাটিতে বিছানা করে।

এই বিতর্ক তাই ঐতিহাসিক ভাবে ছিল। হয়তো আরও ক’বছর থাকবে সর্বসম্মত সমাধানে পৌঁছবার আগে।

লেখাটা সিডনির যে রাত্তির থেকে শুরু হয়েছিল, সেটা দিয়েই শেষ করা যাক। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানটি কে? বলা যাবে না প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অভিনেত্রীটি কে?

হুমম... দূর থেকে যেন প্রকাশ পাড়ুকোনের সঙ্গে তাঁর চেহারার মিল পেয়েছিলাম।

বদ্যি বলেন...

মেডিক্যাল সায়েন্সে কোনও সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। যে যেভাবে তার ব্যাখ্যা করে। আমার নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশন খুব সহজ। বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটা ব্যাপার। যা দাবি করে অখণ্ড মনোসংযোগ। আর তুঙ্গ শারীরিক সক্ষমতা। ম্যাচের আগের রাত্তিরে সহবাসে শুধু মনোসংযোগই ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। শরীরও বিগড়ে যেতে পারে। যৌন মিলনে অ্যাড্রিনালিন বার হয় প্রভুত পরিমানে। পালস রেট বেড়ে যায়। হার্ট রেট বেড়ে যায়। স্ট্রেসও কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে। আমার মতে অ্যাড্রিনালিনের কোটাটা পুরো ভর্তি করেই ম্যাচে নামা উচিত। বিশ্বমানের হিংস্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এত কঠিন পরীক্ষা যে তার আগে ফালতু ব্যাটারি খরচ করার মানেই হয় না। ক্রিকেট-ফুটবল সবরকম আউটডোর স্পোর্টসেই তাই আমার মতে ম্যাচের আগের রাতের যৌন সংসর্গ এড়িয়ে চলা উচিত।
ডা. সুব্রত মৈত্র

এই ব্যাপারটা একেবারেই মানসিক। অনেকে খেলার দু’দিন আগে থেকেই ম্যাচের প্রতি এতটা মনোনিবেশ করে যে শুধু সহবাস কেন, সব কিছু থেকেই দূরে রাখে নিজেদের। আবার অনেকে এমন আছে যারা খেলার আগের দিনও বেশি রাত পর্যন্ত স্ত্রী বা বান্ধবীর সঙ্গ উপভোগ করে। এতে তারা মনে করে যে চাপমুক্ত হওয়া যাবে। একটি নামী ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কর্তা হিসেবে যুক্ত থাকার সুবাদে জানি, অনেক সময়ই কোচেরা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অনেক সিনিয়র ফুটবলারকে তাদের বান্ধবী বা স্ত্রীর সঙ্গ উপভোগ করার জন্য ছেড়ে দেন। যাতে পরের দিন ওরা চাপ মুক্ত হয়ে নামতে পারে। শারীরিক ভাবে ম্যাচের আগের দিন সহবাস করলে কোনও ক্ষতি হয় না যদি সে এর পর অন্তত সাত আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে ঝরঝরে হওয়ার জন্য ঘুমটা খুব প্রয়োজন।
ডা. শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE