E-Paper

জ়ুবিনকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, দাবি সহশিল্পীর

শেখরের লিখিত বয়ান অনুযায়ী, তিনি ও সিদ্ধার্থ সিঙ্গাপুরের হোটেলে একই রুমে ছিলেন। সিদ্ধার্থের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। তিনি সমুদ্রে ইয়টের চালকের কাছ থেকে জোর করে একবার ইয়টের নিয়ন্ত্রণও ছিনিয়ে নেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২১
জ়ুবিন গার্গ।

জ়ুবিন গার্গ। —ফাইল চিত্র।

জ়ুবিন গর্গকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। চক্রান্তে জড়িত ছিলেন জ়ুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও সিঙ্গাপুরে উত্তরপূর্ব উৎসবের উদ্যোক্তা শ্যামকানু মহন্ত। ইচ্ছে করেই বিদেশে ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া জবানবন্দিতে এমনই দাবি করলেন জ়ুবিন গর্গের সঙ্গী বাদ্যযন্ত্রী শেখরজ্যোতি গোস্বামী। শেখর ও জ়ুবিনের সহ-শিল্পী অমৃতপ্রভা মহন্তকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল। আগেই গ্রেফতার হয়েছেন সিদ্ধার্থ ও শ্যামকানু। তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, খুন, অবহেলার ফলে মৃত্যু ঘটানো,হত্যার চক্রান্তে শামিল থাকার বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। জ়়ুবিনের মৃত্যুর সময় শ্যামকানু অবশ্য ইয়টে ছিলেন না।

শেখরের লিখিত বয়ান অনুযায়ী, তিনি ও সিদ্ধার্থ সিঙ্গাপুরের হোটেলে একই রুমে ছিলেন। সিদ্ধার্থের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। তিনি সমুদ্রে ইয়টের চালকের কাছ থেকে জোর করে একবার ইয়টের নিয়ন্ত্রণও ছিনিয়ে নেন। ইয়ট পার্টিতে সিঙ্গাপুর অসম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তন্ময় ফুকনকে সিদ্ধার্থ বলেন, জ়ুবিনকে পানীয় তিনি নিজে হাতে বানিয়ে দেবেন।জ়ুবিনের মৃত্যুর সময়কার বিবরণে শেখর লেখেন, জ়ুবিন শ্বাস নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ডুবে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ চেঁচিয়ে সবাইকে বলছিলেন, “যেতে দাও, যেতে দাও।” শেখরের দাবি, জ়ুবিন একজন দক্ষ সাঁতারু। তিনি এমনিই ডুবে মরতে পারেন না। সিদ্ধার্থ ও শ্যামকানু মিলে জ়ুবিনকে বিষপ্রয়োগ করেন। ঘটনার পরে সিদ্ধার্থ বাকিদের সতর্ক করেন, যাতে ইয়টের ভিডিও কাউকে না পাঠানো হয়। যখন জ়ুবিনের মুখ ও নাক দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল, সিদ্ধার্থ সেটিকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলে উড়িয়ে দেন এবং অন্যদেরও আশ্বস্ত করেন, চিন্তার কিছু নেই। শেখরের মতে, সময়মতো চিকিৎসার বদলে, সিদ্ধার্থ জ়ুবিনের অকালমৃত্যু ত্বরান্বিত করেন।

ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে আজ। এর নেতৃত্বে রয়েছেনগৌহাটি হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়া।

শনিবার সিটের সদস্য মরমি দাস জ়ুবিনের বাড়ি গিয়ে স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গর্গ ও বোন পামি বরঠাকুরের ভাষ্য নথিবদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে গুয়াহাটিতে করা জ়ুবিনের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গরিমার হাতে তুলে দেন। গরিমা বলেন, “তদন্তের মধ্যে এমন সংবেদনশীল বিষয় প্রকাশ্যে এলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিয়েছি। তাআদালত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে থাকুক।” তিনি শেখরের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, “শেখর যদি জানতেন জ়ুবিনকে মারার চেষ্টা হচ্ছে, তাঁকে বিষ দেওয়া হচ্ছে, তা হলে নিজে চুপ করে ছিলেন কেন?”

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, “ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন কী না, তা জুবিনের স্ত্রীর সিদ্ধান্ত। তবে, জ়ুবিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে ফেসবুকে যা বলেছি তা সত্য। সময়মতো সব তথ্য অসমবাসী জানতে পারবেন।”

মুখ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযান সংক্রান্ত রাজনীতিকেও মিলিয়ে দিয়ে বলেন, সরকার যাঁদের উচ্ছেদ করেছে, তারা প্রতিশোধ নিতে জ়ুবিনের মৃত্যুর ঘটনাকে হাতিয়ার করে সরকার বিরোধিতা চালাচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে উচ্ছেদ থামানো যাবে না।”

এই মন্তব্যের সমালোচনা করে অসম জাতীয় পরিষদের সম্পাদক চিত্তরঞ্জন বসুমতারি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিতে শুরু করেছেন। উচ্ছেদ অভিযান ও জ়ুবিনের হত্যার ঘটনাকে এক করে ফেলা হচ্ছে। জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করছেন। তিনি ভোটের সঙ্গেও সরাসরি জ়ুবিনের মৃত্যুর ঘটনাকে জড়িয়েছেন। যা নিন্দনীয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Zubeen Garg Singapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy