Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আইফা-র ডায়েরি

ট্যাম্পা বে থেকে লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়।ডাউনটাউন ট্যাম্পা বে-র হিলটন হোটেলে তখন রাত একটা। কাতারে কাতারে এনআরআই বাইরে ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দীপিকা, বিপাশা, হৃত্বিককে দেখার জন্য। অন্য দিকে দুপুরবেলা আমেরিকার পুলিশ অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন হোটেলের লবিতে মাধুরী দীক্ষিতের অটোগ্রাফ নিতে।

মাধুরী দীক্ষিত

মাধুরী দীক্ষিত

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ডাউনটাউন ট্যাম্পা বে-র হিলটন হোটেলে তখন রাত একটা। কাতারে কাতারে এনআরআই বাইরে ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দীপিকা, বিপাশা, হৃত্বিককে দেখার জন্য। অন্য দিকে দুপুরবেলা আমেরিকার পুলিশ অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন হোটেলের লবিতে মাধুরী দীক্ষিতের অটোগ্রাফ নিতে। আবার অ্যাওয়ার্ড শো-তে জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে ‘স্যাটার্ডে নাইট ফিভার’য়ের সেই বিখ্যাত ডান্স স্টেপ করলেন হৃত্বিক রোশন। আর কী কী হল মার্কিন মুলুকে? পড়তে থাকুন আইফা-র ডায়েরি।

সবুজ চেক লুঙ্গি পরে কেভিন স্পেসি

তখন শো শুরু হয়ে গিয়েছে প্রায় তিন ঘণ্টা হল। হঠাত্‌ আইফা-র দুই সঞ্চালক শাহিদ কপূর আর ফারহান আখতার ব্যাকস্টেজে গিয়ে চারটে লুঙ্গি তুলে নিলেন। একেবারে ট্রেডমার্ক সবুজ লুঙ্গি। “দাঁড়ান, একটা মজা করি,” বলেন ফারহান। তার পর যা হল তা বোধহয় বলিউডের পক্ষেই সম্ভব।

কেভিন স্পেসি ও শাহিদ কপূর

স্টেজে তখন দীপিকা পাড়ুকোনকে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন দু’বারের অস্কার বিজয়ী কেভিন স্পেসি। হঠাত্‌ কেভিনকে লুঙ্গি পরিয়ে দিলেন শাহিদ কপূর। দীপিকা-ফারহানও ততক্ষণে লুঙ্গি পরে নিয়েছেন। তার পর শুরু হল হলিউডের বলিউডিকরণ। ‘লুঙ্গি ডান্স’য়ের সঙ্গে নাচছেন কেভিন স্পেসি। অ্যাওয়ার্ড শো-তে বসে তখন হেসেই চলেছেন শাবানা থেকে প্রসুন যোশী। “‘ইয়ে সির্ফ হম ইন্ডিয়ান কর সকতে,” পাশে বসা বোমান ইরানিকে বলেন প্রসূন।

সবচেয়ে বড় স্টার ‘ফ্লাইং শিখ’

অ্যাওয়ার্ড শোতে সবচেয়ে রমরমা ছিল ‘ভাগ মিলখা ভাগ’য়ের। ফারহান পেলেন বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ড। সেরা পরিচালক রাকেশ মেহরা। আরও নানা পুরস্কার নিয়ে গেল ছবিটা। কিন্তু ট্যাম্পাতে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি হাততালি কুড়োলেন মিলখা সিংহ।

হোটেলের লবিতে রণবীর সিংহ বা হৃতিকের থেকেও বেশি অটোগ্রাফ দিতে হল তাঁকেই। শো চলাকালীন যত বার তাঁকে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হল, তত বার স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেলেন। দেখলাম তাঁর চোখে জল। “এত সম্মান আমি পেলাম এখানে। এটা সত্যি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। একটা সময়ে জীবনে এত কষ্ট পেয়েছি। আজ ওয়াহি গুরু সব ফিরিয়ে দিয়েছে,” হোটেলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন রোম অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান পাওয়া মিলখা সিংহ।

মিলখা সিংহ

মেয়ের সঙ্গে এখানে শপিং করলেন তিনি। পুরো আইফা অনুষ্ঠানটা বসে দেখলেনও না। কিন্তু সুনীল গাওস্কর যাঁকে ‘ইন্ডিয়াজ গ্রেটেস্ট স্পোর্টিং লেজেন্ড’ বলেছেন সেই প্রকাশ পাড়ুকোনকে এই আইফাতে জনপ্রিয়তার নিরিখে অন্তত হারিয়ে দিয়েছেন মিলখা সিংহ।

তবে প্রকাশের আর দোষ কী? মেয়ের নাম যদি হয় দীপিকা পাড়ুকোন, তা হলে বিখ্যাত বাবার বোধহয় এই অবস্থাই হয়।

রেমন্ড জেমস স্টেডিয়ামে ‘মোহিনী মোহন’

এ দিকে দশ বছর পর আমেরিকাতে পারফর্ম করলেন হৃতিক রোশন। ‘সেনোরিটা’ থেকে ‘এক পল কা জিনা’ কিছু বাদ দিলেন না হৃতিক। কিন্তু তাঁকে যেন অনায়াসে হারিয়ে দিলেন একজন। মাধুরী দীক্ষিত। আইফার শো-তে প্রথম বার ২৮ হাজার দর্শকে ভর্তি রেমন্ড জেমস স্টেডিয়াম প্রায় একসঙ্গে বলে উঠল ‘মোহিনী মোহিনী’। তার পর মাধুরীর নাচ।

শুধু স্টেজে নাচলে বোধহয় এই পাগলামি হত না তাঁকে নিয়ে। স্টেজে ওঠার আগে যে দর্শকদের সঙ্গে নাচতে শুরু করলেন মিসেস নেনে! ততক্ষণে এনআরআই পুরুষ থেকে নারী সবাই মাধুরীর বিখ্যাত সেই ঠুমকায় পাগল। মাধুরীও প্রায় দশ মিনিট নাচলেন তাঁদের সঙ্গে। ‘ধক ধক’ থেকে ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’ কিছুই বাদ দিলেন না তিনি। যেতে যেতে বলেও গেলেন কেন ফ্লোরিডা তাঁর সেকেন্ড হোম। “বিয়ের পরে সবাই জানে আমি দশ বছর ডেনভারে কাটিয়েছি। কিন্তু অনেকেই জানে না, প্রথম দু’বছর আমি ছিলাম ফ্লোরিডাতে। ওখানেই প্রথম আমি নিজের সংসার করেছি। তাই ফ্লোরিডা আমার কাছে স্পেশাল। ফ্লোরিডা ইজ মাই সেকেন্ড হোম,” হাজার ওয়াটের হাসি হেসে বলেন মাধুরী। ও হ্যাঁ, একটা জিনিস লিখতে ভুলে গিয়েছি। মাধুরীর নাচ শুরু হওয়ার ঠিক কিছুক্ষণ আগে বনি কপূরের হাত ধরে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম শ্রীদেবীকে। হয়তো ব্যাপারটাই কাকতালীয়। হয়তো ঠান্ডায় অতক্ষণ বসে থাকতে চাইছিলেন না তিনি। কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল। কিছু লড়াই, কিছু কম্পিটিশন কি কোনও দিনই যাওয়ার নয়!

দ্যাট গার্ল ইন রামলীলা

সে দিন হিলটন হোটেলের প্রতি সিঁড়িতে আমেরিকান পুলিশ। এতটাই কড়া নিরাপত্তা যে হোটেলের রিসেপশনে রীতেশ দেশমুখ, সৌরভ শুক্লকেও নিজের ঘরের সোয়াইপ কার্ড দেখানোর পরেই ঢুকতে দিল পুলিশ। কিন্তু কেন হঠাত্‌ এত সিকিওরিটি? কারণ একটাই। সে দিন জন ট্রাভোল্টার প্রেস কনফারেন্স যে! কাঁটায় কাঁটায় সকাল এগারোটায় বলরুমে পৌঁছলেন ট্রাভোল্টা। শুরু হল প্রেস কনফারেন্স। প্রথম প্রশ্ন করা হল তিনি কি কোনও হিন্দি ছবি করবেন? একগাল হেসে ট্রাভোল্টা বললেন, তিনি শেখর কপূরের ‘পানি’ ছবিটি সাইন করেছেন। পরের প্রশ্ন, বলিউডের কোন হিরোইনকে তাঁর সব চেয়ে ভাল লাগে?

ভ্রু-টা উঁচু করে ‘গ্রিজ’-এর অভিনেতা বলেন, “দ্যাট গার্ল ইন দ্য ফিল্ম ‘রামলীলা’, দীপিকা...ইয়েস আই লাইক হার।”

দীপিকা পাড়ুকোন

উত্তর শুনে হাততালিতে ফেটে পড়ল বলরুম...

প্রথম রো-তে বসে আনন্দplus-এর এই প্রতিনিধি প্রশ্ন করলেন, তাঁর কোন ছবিটি বলিউড রিমেক করলে তিনি খুশি হবেন? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন ট্রাভোল্টা, “কেন! ‘স্যাটার্ডে নাইট ফিভার’। আমিই বোধহয় প্রথম স্টার, যিনি বলিউডের মতো সং অ্যান্ড ডান্স-এর ছবি করেছিলাম হলিউডে। তাই ‘স্যাটার্ডে নাইট ফিভার’য়ে বলিউড ছবির সব এলিমেন্ট রয়েছে। সেটা রিমেক করলেই সব চেয়ে খুশি হব।” আর দু’চারটে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেই উঠে পড়লেন জন। প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত সব সাংবাদিক নমস্কার করলেন তাঁকে। হলিউডের সুপারস্টারও ‘টেক কেয়ার ইউ অল, নমস্তে, সি ইউ ইন ইন্ডিয়া’ বলে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। জানিয়ে রাখা ভাল, জন ট্রাভোল্টার ঘোর কাটাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছিল ভারতীয় মিডিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE